পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

68 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড উদ্যোগী হয়েছে। বাংলাদেশে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতনের প্রশ্নটি জাতিসংঘে উত্থাপনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। বাংলাদেশে পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরতা ও গণহত্যার অপরাধ সম্পর্কে পাকিস্তানের কোন বক্তব্য যে থাকতে পারে না তা ধরে নেয়া হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিক, সমাজসেবী, কূটনীতিক, পর্যটক ও বিশ্বসংস্থাসমূহের যেসব প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে গেছেন তাদের রিপোর্ট ও প্রামাণ্য তথ্যাদি থেকে এটা আজ অত্যন্ত সুস্পষ্ট যে, পাক বাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যা ও বর্বরতার অপরাধে অপরাধী। জাতিসংঘে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উঠলে পাকিস্তান বাংলাদেশে গণহত্যার অপরাধে অপরাধী হানাদার বলে চিহ্নিত হবে এবং সেই সঙ্গে বাংলাদেশও বিশ্ব সংস্থার সমর্থন এবং স্বীকৃতি লাভ করবে। সোভিয়েট ইউনিয়ন ও ফ্রান্স এ কথা দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছে যে, সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য দিয়ে কোন অবস্থাতেই তারা পাকিস্তানের সামরিক সরকারকে সহযোগিতা করবে না। অর্থাৎ, ফ্রান্স ও ব্যাঙ্কের যে প্রতিনিধিদলটি গত ৩রা জুন থেকে ২১ শে জুন পর্যন্ত উনিশ দিন ধরে বাংলাদেশ সফর করে গেছেন তারা বাংলাদেশের প্রকৃত ঘটনাবলী ফাঁস করে দিয়েছেন। তারা বলেছেন পরিস্থিতি আদৌ স্বাভাবিক নয়। সেখানে সর্বত্রই ধ্বংসের চিহ্ন ছড়িয়ে আছে, পাক হানাদার সৈন্যরা এখনও বাংলাদেশের ওপর হত্যা, ধ্বংস ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার ছাড়া এইড কনসর্টিয়ামভুক্ত সব দেশই পাকিস্তানকে সাহায্য বন্ধের পক্ষে মত প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ সফর করে গিয়ে বিশ্বব্যাঙ্ক প্রতনিধিদলের নেতা তাঁর দলের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে একমত হয়ে একথা তো স্পষ্টই ঘোষণা করেছেন যে, পাকিস্তানকে সাহায্য দেয়া অর্থহীন হবে এবং পাকিস্তানকে এখন যে কোন সাহায্যই দেয়া হোক, ইয়াহিয়ার জঙ্গী সরকার তা সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহার করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিশ্বজনমত উপেক্ষা করে, ইয়াহিয়ার জল্লাদ বাহিনীকে সমর সম্ভার ও অর্থ সাহায্য দিয়ে বাংলাদেশে গণহত্যার প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করলেও আমেরিকান জনগণ, সংবাদপত্র, বেতার-টেলিভিশ ও বহু জননায়ক বাংলাদেশের প্রকৃত ঘটনাবলী প্রকাশ করে বাংলার জনগণের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। মার্কিন সংবাদপত্রসমূহ খোলাখুলিভাবেই বাংলাদেশ প্রশ্নে মার্কিন সরকারী নীতির কঠোর সমালোচনা করেছে। নিউইয়র্ক টাইমস’, ‘ওয়াশিংটন পোষ্ট’, ‘ইভিনিং ষ্টার প্রভৃতি প্রভাবশালী দৈনিক পত্রিকাগুলিতে মার্কিন সরকারী নীতির কঠোর সমালোচনা করে বলা হয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য ঋণদানকারী রাষ্ট্রগুলির উচিত পাকিস্তানকে সর্বপ্রকার সাহায্য বন্ধ করে দেয়া। ভারতে নিযুক্ত প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত Mr. Chester Bowles পাকিস্তানে মার্কিন সাহায্য প্রেরণের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, মার্কিন সরকারের এ ভুলের কোন তুলনা হয় না। মার্কিন সরকারের এটা শুধু ভুল নয়, এটা একটি ক্ষমাহীন অপরাধ- ইতিহাস এ অপরাধ কোন দিনই ক্ষমা করবে না। ২০ জুলাই, ১৯৭১ ... ডাবলিন থেকে প্রকাশিত “আইরিশ টাইমস’ পত্রিকার এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়ঃ ইয়াহিয়া তার বেতার ভাষণে যে রাজনৈতিক পরিবর্তনের বা যে রাজনৈতিক রদবদলের প্রস্তাব করেছে তা জঘন্য। ইয়াহিয়া তার বেয়োনেট-উদ্যত সেনাবাহিনী দিয়ে আটক দেশবাসীর উদ্দেশে যে বক্তৃতা করেছে তাতে তার দেশ গোল্লায় যাবে। বাংলাদেশ থেকে যে সকল নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধ সেনাবাহিনীর অত্যাচারে দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে তারা কেউই এ প্রস্তাবে দেশে ফিরে আসতে পারে না। ক্ষমতা হস্তান্তরের যে পদ্ধতির কথা ইয়াহিয়া ঘোষণা করেছে তা দুরভিসন্ধিমূলক। দশ লক্ষ বাঙালীকে নির্বিচারে হত্যা করে গোটা বাংলাদেশটাকে জুলিয়ে-পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিয়ে ইয়াহিয়া বাংলাদেশের কিছু অংশের ওপর তথাকথিত দখল রেখেছে সত্যি, কিন্তু এই দখল