পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
১০২

রচিত সমাজব্যবস্থা ধ্বংস করিয়া আমাদের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে বিপ্লবী পরিবর্তন আনিতে পারিবে? একথা আজ লজ্জার সাথে স্বীকার করিতেই হইবে যে বর্তমান গণপরিষদ পাকিস্তানবাসীকে সকল দিক হইতেই নিরাশ করিয়াছে।

আমাদের ভবিষ্যৎ

 গত এক বছরের অভিজ্ঞতা আগামীকালের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মোটেই আশান্বিত করিয়া তুলিতেছে না। বরং এই আশংকাই আমাদের মধ্যে প্রবল যে, বর্তমান অবস্থার গতিরোধ করিতে না পারিলে আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে এক ঘোরতর বিপর্যয় দেখা দিবে। মাত্র কয়েকজন লোকের স্বার্থে পাকিস্তানের কোটি কোটি জনসাধারণের সকল অধিকার হরণ করিয়া একটিমাত্র গোষ্ঠীর একনায়কত্ব জাঁকিয়া বসিবে। ইহাদেরই স্বার্থে এবং খেয়াল চরিতার্থ করিবার জন্য আমাদের সকলের স্বার্থ ত্যাগ করিতে হইবে। ইহাদেরই সুখ বৃদ্ধির জন্য আমাদের সকলের সুখ বিসর্জন দিতে হইবে। ইহাদের অধিকার কায়েম রাখিতে আমাদের সকলের অধিকার হরণ করা হইবে। পাকিস্তানের যুবসমাজ শাসকমণ্ডলীর এই গণবিরোধী নীতি, গণতন্ত্রের প্রতি উপেক্ষা ও শোষকমূলক ব্যবস্থা কখানো মুখ বুজিয়া মানিয়া লইতে পারে না। সরকার যদি মনে করিয়া থাকে একমাত্র দমন নীতির সাহায্যে ত্রাসের সঞ্চার করিয়া সমস্ত গণতান্ত্রিক আন্দোলন স্তব্ধ করিয়া দিব, কৃষক, মজুর, ছাত্র ও যুব সংগঠন ধ্বংস করিয়া দিব, তাহা হইলে তাহারা চরম ভুল করিয়াছে; ইতিহাস হইতে কোন শিক্ষাই গ্রহণ করে নাই। লাঠি ও জেলখানার সাহায্যে কখনও গণআন্দোলন ধ্বংস করা যায় নাই। হিটলার-মুসোলিনী হইতে শুরু করিয়া পৃথিবীর কোন দেশের শাসক শ্রেণীই যে কাজে কৃতকার্য হইতে পারে নাই পাকিস্তান সরকারের সেই চেষ্টা করা বৃথা। পাকিস্তান সরকার যেন এ কথা না ভুলে যে, আজ যাহারা গণআন্দোলন গড়িয়া তুলিতেছে তাহাদেরই এক বিরাট অংশ বর্ত্তমান পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য দায়ী। শুধুমাত্র ‘পঞ্চম বাহিনী’, ‘রাষ্ট্রের শত্রু' প্রভৃতি আখ্যা দিয়া লোক চক্ষে তাহাদের হেয় করিবার চেষ্টা বৃথা। যে প্রেরণা লইয়া আমরা একদিন পাকিস্তান হাসেল করার আন্দোলনে ঝাপাইয়া পড়িয়াছিলাম যদি প্রয়োজন হয় তাহার জন্য দ্বিগুণ উৎসাহ লইয়াই বর্তমান শাসকশ্রেণীর বিরুদ্ধে আন্দোলনে পাকিস্তানের যুবশক্তি ঝাঁপাইয়া পড়িবে। সরকারের কোন হুমকি তাহাকে সফলচ্যুত করিতে পারিবে না।

যুবসমাজের প্রতি

 বর্তমান সরকারের সাম্রাজ্যবাদ ঘেঁষা নীতি, ব্যক্তি-স্বাধীনতা হরণ, কৃষক-মজুর আন্দোলন ও তাহাদের সংগঠন ধ্বংস করা ও জমিদার, মিল মালিক তোষণ, ছাঁটাই ও বেতন বৃদ্ধি না করা প্রভৃতি কার্যের বিরুদ্ধে তুমুল আন্দোলন করিবার জন্য আমরা পাকিস্তানের যুব সমাজের কাছে উদাত্ত আহবান জানাইতেছি, এমন আন্দোলন সৃষ্টি করিতে হইবে যাহার ফলে সরকার তাহার গণবিরোধী নীতি পরিবর্তন করিতে বাধ্য হইবে। না হয় মজুর, কৃষক, গরীব, মধ্যবিত্তের প্রতিনিধিত্বমূলক নূতন সরকার বর্তমান সরকারের স্থান গ্রহণ করিবে। যে সরকার গণবিরোধী কার্য্যের দ্বারা আস্থা হারাইয়া ফেলে যে সরকার দেশের লোকের ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা না করিয়া শুধু লাঠি ও জেলখানার সাহায্যে দেশ শাসন করে গণতান্ত্রিক নীতি অনুযায়ী তাহার একদিনও টিকিয়া থাকিবার অধিকার নাই।

 যুবসমাজই জাতির মেরুদণ্ড। সেইজন্য তাহাদের কাছে আমাদের আহবান আপনারাই আগাইয়া আসিয়া আন্দোলনে নেতৃত্ব দিন। কৃষক, মজুর, ছাত্র, কর্মচারী প্রভৃতির যে সকল নিজস্ব শ্রেণী, প্রতিষ্ঠান তাহার সাথে যুবলীগের কোন বিরোধিতা নাই বরং তাহাদের সহযোগিতাতেই একমাত্র প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়িয়া উঠিতে পারে। যুবলীগের মধ্যে থাকিয়াও যেন কৃষক সমিতি ও মজুর ইউনিয়নের সভ্যভূক্ত হন এবং কৃষক সমিতি ও মজুর ইউনিয়নের সংগে সহযোগিতা করেন। তাহাদের দাবী-দাওয়া লড়াই করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কৃষকমজুরের আন্দোলনকে বাদ দিয়া কোন সত্যিকারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনই গড়িয়া উঠিতে পারে না। কোন