পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/১২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
১০৪

যুবসম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবাবলী

১। খাদ্য সংকটের বিরুদ্ধে রুখিয়া দাঁড়াও
আমলাতান্ত্রিক গাফিলতির মুখোশ খুলিয়া দাও
জনগণের প্রতিরোধ গড়িয়া তোল

 পূর্বপাকিস্তানে খাদ্যসমস্যা প্রকট হইয়া উঠিয়া যশোহর জেলায় ৪০ টাকা, খুলনায় ৩৮ টাকা, পাবনা নদীয়ায় ৩৫ টাকার উপরে চাউলের দর চলিতেছে। ২২/২৪ টাকার নীচে কোন জেলাতেই চাউল পাওয়া সম্ভব নয়। এক কথায় বলিতে গেলে পূর্ব্ব পাকিস্তানে খাদ্যের মূল্য জনসাধারণের নাগালে বাহিরে চলিয়া গিয়াছে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ইহা দ্বিতীয় খাদ্য সংকট।

 এই সংকট সমাধানে সরকারের তরফ হইতে এক বিবৃতি দেওয়া ছাড়া অন্য কোনই চেষ্টা হইতেছে না। খাদ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ সম্পর্কে সরকারী নীতি খাদ্য সংকটকে আরও প্রকট করিয়া তুলিতেছে। এখন পর্যন্ত খাদ্য সংগ্রহের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা হয় নাই। বড় জোতদার ও মজুতদারদের স্পর্শ না করিয়া সাধারণ কৃষকের নিকট হইতে ধান চাউল সংগ্রহ করাই সরকারের নীতি হইয়া দাঁড়াইয়াছে। মজুতদার ও জোতদারকে তোষণ করিয়া কৃষকের ধান সীজ করিবার নীতিতে খাদ্য সংগ্রহ হইতে পারে না। দ্বিতীয়তঃ বিদেশ হইতে খাদ্য আমদানীরও কোন ব্যবস্থা হইতেছে না। যে খাদ্য বর্ত্তমানে সরকার সংগ্রহ করিয়াছেন তাহাও সঠিকভাবে সরবরাহ হইতেছে না।

 খাদ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ এইরূপ চলিতে থাকায় ৪ কোটি ৪০ লক্ষ লোকের পূর্ব পাকিস্তান আজ এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সামনে উপস্থিত হইয়াছে।

 রাজশাহী বিভাগীয় যুব সম্মেলন ভয়াবহ উদ্বেগের সঙ্গে এই পরিস্থিতি লক্ষ করিতেছে। খাদ্য সমস্যার আশু সমাধানের জন্য অবিলম্বে নিলিখিত কর্ম্মপদ্ধতি গ্রহণ করিবার জন্য এই সম্মেলন সরকারের নিকট দাবী করিতেছেঃ

১। কৃষকদের নিকট হইতে জবরদস্তিমূলকভাবে ধান কাড়িয়া লওয়া চলিবে না। অবিলম্বে সমস্ত জোতদার ও মজুতদারদের বাড়তি খাদ্য বাজেয়াপ্ত করিয়া লইতে হইবে।
২। ভারত ও পাকিস্তানের বাহিরে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সমঝোতা করিয়া খাদ্য আমদানীর ব্যবস্থা করিতে হইবে।
৩। সরকার কর্তৃক সংগৃহীত খাদ্য কালবিলম্ব না করিয়া ঘাটতি এলাকায় সস্তা দরে সরবরাহ করিতে হইবে।
৪। প্রত্যেক শহরে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করিতে হইবে এবং রেশনিং এলাকায় নিয়মিতভাবে সস্তা দরে খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করিতে হইবে।
৫। যে সমস্ত লোক দুস্থ হইয়া পড়িয়াছে এবং খাদ্যক্রয়ে অক্ষম তাহদের জন্য বিনামূল্যে খাদ্য বিলির ব্যবস্থা করিতে হইবে। বন্যাপীড়িত অঞ্চলে দ্রুত সরবরাহ পাঠাইতে হইবে।
৬। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষের মূল্য কমাইইতে হইবে।