পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
১০৫
৭। কৃষকের ক্রয় শক্তি বৃদ্ধির জন্য অর্থকারী ফসল যেমন পাট ইত্যাদির মূল্য বৃদ্ধি করিয়া সর্বনিম্ন দর বাঁধিয়া দিতে হইবে। পাটের সর্বনিম্ন দর মণ প্রতি ৪০ টাকা বাঁধিয়া দিতে হইবে।
৮। মজুর ও মধ্যবিত্ত কর্মচারীদের মাহিনা বৃদ্ধি করিতে হইবে।
৯। জিন্নাহ তহবিল হইতে দুই-তৃতীয়াংশ অর্থ পূর্ব্ব পাকিস্তানের দুর্ভিক্ষ ও বন্যাপীড়িতদের সাহায্যের জন্য বরাদ্দ করিতে হইবে।

 উপরোক্ত পদ্ধতি যাহাতে অবিলম্বে কার্য্যকরী করা হয় তজ্জন্য আন্দোলন গড়িয়া তুলিবার জন্য পূর্ব্ব পাকিস্তানের যুব সমাজ ও জনসাধারণের নিকট এই সম্মেলন আহবান জানাইতেছে।

২। জমিদারী উচ্ছেদের ভাঁওতা দিয়া কৃষক উচ্ছেদ চলিবে না। বিনা খেসাতে জমিদারী উচ্ছেদ ও কৃষককে জমির মালিক করিতে হইবে।

 বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী নিজের শাসন ও শোষণ কায়েম করিবার জন্য জমিদারী প্রথার সৃষ্টি করিয়া আমাদের দেশের জনসাধারণের অর্থননিতক জীবন পঙ্গু করিয়া দিয়াছে। দেশে চিরস্থায়ী খাদ্যসমস্যার সৃষ্টি করিয়াছে। সাম্রাজ্যবাদ সৃষ্ট এই ঘৃণ্য প্রথার বিরুদ্ধে কৃষকের আন্দোলন বহুদিনের আন্দোলন। আজাদী পাইলে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ করিয়া কৃষককে জমির মালিক করা হইবে ইহাই ছিল নেতাদের ওয়াদা। আজাদ পূর্ব্ব পাকিস্তান সরকার জমিদারী উচ্ছেদের এক বিলও উত্থাপন করিয়াছে। কিন্তু এই বিলে যে সমস্ত ধারা রহিয়াছে তাহা সমস্তই কৃষক স্বার্থের বিরোধী। এই বিলের মূলধারাগুলি হইতেছেঃ

(১) জমিদারদের জন্য ৪০ কোটি টাকারও অধিক ক্ষতিপূরণ।
(২) জোতদারদের জন্য জমি।
(৩) জমিদারদের ঋণ মকুব।
(৪) ওয়াকফ ও দেবোত্তর সম্পত্তির সুবিধা ইত্যাদি।

 এই সম্মেলনের মতে উপরোক্ত সমস্ত ধারাগুলি কৃষক স্বার্থবিরোধী এবং বিনা খেসারতে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ করিয়া কৃষককে জমির মালিক করিবার মূল দাবী গৃহীত হয় নাই। এই বিল পাশ হইলে জমিদারী উচ্ছেদের পরিবর্তে কৃষক উচ্ছেদেরই ব্যবস্থা হইবে। জমিদারী উচ্ছেদের নামে এইরূপ কৃষক বিরোধী বিল উত্থাপন করিয়া সরকার পূর্ব্ব পাকিস্তানের জনমতের সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছে। এই সম্মেলনে প্রস্তাবিত বিলের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করিতেছে এবং অবিলম্বে এই বিল প্রত্যাহার করিয়া বিনা ক্ষতিপূরণে ও “কৃষকই জমির মালিক” এই নীতির ভিত্তিতে জমিদারী উচ্ছেদের দাবী জানাইতেছে।

 এই সম্মেলন মনে করে যে তুমুল আন্দোল ব্যতীত সরকার কৃষকের দাবী অনুযায়ী জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ করিবে না। কৃষকের শ্রেণী সংগঠনকে জোরদার করিয়াই এই অন্দোলন সফল হইতে পারে। এই সম্মেলন পূর্ব্ব পাকিস্তানের যুব সমাজকে কৃষকের শ্রেণী সংগঠনকে সর্ব্বতোভাবে সাহায্য করিয়া জমিদারী উচ্ছেদকে সফল করিবার জন্য আহবান জানাইতেছে।

৩। রেল শ্রমিকের বাঁচিবার লড়াইয়ে সাহায্য করিব। আসন্ন রেল ধর্মঘটকে কামিয়াব করেত সর্বপ্রকার সহযোগিতা দিব।

 পাকিস্তান সরকারের শ্রমনীতি পাকিস্তানের রেল মজুরদের ধ্বংসের মুখে ঠেলিয়া দিতেছে। পাকিস্তান রেলওয়েতে প্রায় ১৬,০০০ হাজার শ্রমিক ছাঁটাইয়ের মুখে। পে কমিশনের রায় চালু, গ্রেনশপের পাকা ব্যবস্থা,