পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/১৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
১১৭
শিরোনাম সূত্র তারিখ
শামসুল হক কর্তৃক আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম প্রস্তাবিত ম্যানিফেষ্টো পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি: বদরুদ্দীন উমর, পৃষ্ঠা-২৪১ ২৪শে জুন, ১৯৪৯

শামসুল হকের প্রস্তাব ও আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম ম্যানিফেষ্টো[১]

 পুর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ কর্মী সম্মেলনে বিবেচনার জন্যে শামসুল হক ‘মূলদাবী' নামে একটি ছাপা পুস্তিকাতে লিপিবদ্ধ তাঁর বক্তব্য পাঠ করেন। পুস্তিকাটির মুখবন্ধের প্রারম্ভে তিনি বলেনঃ

 ইং ১৯৮৯ সনের ২৩শে ও ২৪শে জুন তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত “পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ কর্মী সম্মেলন” মনে করে যে, সর্বকালের সর্বযুগের সর্বদেশের যুগ প্রবর্তক ঘটনাবলীর ন্যায় লাহোর প্রস্তাবও একটি নূতন ইতিহাসের সৃষ্টি করিয়াছে। বিরুদ্ধ পরিবেশে মানবের দেহ, মন ও মস্তিস্কের উন্নতি ও পূর্ণ বিকাশ সম্ভব নয়। মানুষ পরিবেশের দাস এ কথা আধুনিক বৈজ্ঞানিকগণও স্বীকার করেন। বিরুদ্ধ পরিবেশে পূর্ণ ইসলামিক মনোভাব এবং সমাজ বিধান গড়িয়া তোলা সম্ভব নয়। ভারতের মুসলমানগণ বহু শতাব্দীর সঞ্চিত অভিজ্ঞতা হইতে এই মহা সত্য উপলব্ধি করিয়াই বিরুদ্ধ পরিবেশে বা দারুল হরবের পরিবর্তে ইসলামিক পরিবেশ বা দারুল ইসলাম কায়েম করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইয়াছিল। কিন্তু পাকিস্তান ইসলামিক রাষ্ট্র হইলেও শুধু মুসলমানের রাষ্ট্র বা শুধু মুসলমানের জন্য প্রতিষ্ঠিত করিবার এবং পাশ্চাত্য সভ্যতা ও শিক্ষা প্রভাবান্বিত ইসলামবিরোধী সাম্রাজ্যবাদী, ধনতান্ত্রিক ও আত্মকেন্দ্রিক পরিবেশ গড়িয়া তুলিবার ইচ্ছা তাহাদের ছিল না।

 রব বা স্রষ্টা হিসেবেই সৃষ্টির বিশেষ করিয়া সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের সাথে আল্লাহ সবচাইতে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। বস্তুতঃ রব বা স্রষ্টা, পালন বা পোষণকর্তা হিসাবে, বিশ্ব ও সৃষ্টিকে ধাপের পর ধাপ, স্তরের পর স্তর, পরিবর্তনের পর পরিবর্তনের ভিতর দিয়া কতকগুলি স্থায়ী ও সাধারণ ক্রমবিকাশ ক্রমোন্নতির নিয়মানুসারে এক অবস্থা হইতে অপর অবস্থার ভিতর দিয়া ধীরে ধীরে কিন্তু সুনিশ্চিতরূপে চরম সুখ, শান্তি ও পূর্ণতা প্রাপ্তির দিকে আগাইয়া নিবেন। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিতে আল্লাহ শুধু মুসলমানের নয়- জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র মানবের। রবই আল্লাহ সত্যিকার পরিচয়। রব হিসাবে রবুবিয়াৎ বা বিশ্ব-পালনই তাঁর প্রথম ও প্রধান কাজ। সুতরাং দুনিয়ার উপর আল্লাহর খলিফা বা প্রতিভূ হিসাবে মানব এবং খেলাফৎ হিসাবে রাষ্ট্রের প্রথম এবং প্রধান কাজ ও কর্তব্য হইল আল্লাহর উপায় ও পদ্ধতি অনুসারে বিশ্বের পালন করা এবং জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের সামগ্রিক সুখ, শান্তি, উন্নতি, কল্যাণ ও পূর্ণ বিকাশের জন্য চেষ্টা, সাধনা ও সংগ্রাম করা।

মুসলিম লীগ সম্পর্কে শামসুল হক পুস্তিকাটিতে বলেনঃ

 নিখিল ভারত মুসলিম লীগ কখনও দল বিশেষের প্রতিষ্ঠান ছিল না; ইহা ছিল ভারত উপমহাদেশের মুসলিম জনগণের জাতীয় প্ল্যাটফর্ম বা মঞ্চ। ইহার উদ্দেশ্য পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর, পাকিস্তানের মূল নীতিগুলিকে কার্যকরী করিয়া তুলিতে হইলে প্রয়োজন নতুন চিন্তাধারা, নতুন নেতৃত্ব এবং নতুন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নীতি ও কর্মসূচী এবং মুসলিম লীগকে মুসলিম জনগণের সত্যিকার জাতীয় প্ল্যাটফর্ম বা মঞ্চ হিসাবে গড়িয়া তোলার।...


  1. ১৯৪৮ সালের ২৩শে জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংগঠনের প্রথম সভাপতি মওলানা ভাসানী, সম্পাদক শামসুল হক এবং মুখ্য সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান ও খোন্দকার মোশতাক আহমেদ।