পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
১৪৫
শিরোনাম সূত্র তারিখ
পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের রাজনৈতিক বক্তব্য সম্বলিত লিফলেট পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ জুন, ১৯৪৯

অতি বামপন্থী বিভেদকারীদের সম্পর্কে হুঁশিয়ারী

 ঢাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ জন ছাত্র-ছাত্রীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অবলম্বনের প্রতিবাদে ঢাকা- তথা পূর্ব্ব-পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ ১৭ই এপ্রিল থেকে যে আন্দোলন শুরু করেছেন, বর্তমানে তা এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ পর্য্যায়ে উপনীত হয়েছে। সংগ্রাম পরিষদ বরাবরই এই সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান চেয়েছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষের ভ্রান্তনীতি ও অপরিণামদর্শী পদক্ষেপের জন্যে সমাধানের দুয়ার বারবার রুদ্ধ হয়েছে। কর্তৃপক্ষের রাইফেলের গুলিতে আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন; তারা ভেবেছিলেন যে ছাত্র নেতাদের কারাপ্রাচীরের অন্তরালে আবদ্ধ করে রাখলেই সংগ্রাম থেকে যাবে। কিন্তু সংগ্রামী ছাত্রসমাজ কোন জুলুমের মোকাবেলায়ই স্তব্ধ হয়ে যায়নি। বরঞ্চ নাগরিকদের স্বতঃস্ফুর্ত সমর্থন ও সহযোগিতায় তাদের আন্দোলন শতগুণ শক্তিশালী হয়েছে। চরম প্রতিকূল পরিবেমের মধ্যেও ছাত্রসমাজ মাথা উচু করে রেখেছে- তারা কোনক্রমেই আত্মসমর্পণ করেনি। সংগ্রাম পরিষদে লক্ষ্য ছিল- সমস্ত ছাত্রসমাজকে সমবেত করে শৃঙ্খলার সঙ্গে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। এ ব্যাপারে সংগ্রাম পরিষদ সফল হয়েছে। কর্তৃপক্ষের দালালরা ছাত্র সংহতির মধ্যে ভাঙ্গন ধরাতে বহু চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা ছাত্রসমাজের ঐক্য এতটুকু ক্ষুন্ন করতে পারেনি। বরং জনগণের সম্মুখে ঐ দালালদের স্বরূপ সুস্পষ্টভাবেই উদঘাটিত হয়েছে।

 কিন্তু আজ এক নতুন আপদ এসে জুটেছে। এটা হচ্ছে কমুনিষ্ট অধ্যুষিত ছাত্র ফেডারেশন। আলস সংগ্রামের সময় গা ঢাকা দেওয়া এবং সুযোগ বুঝে মাটির তলা থেকে গলাটা বের করে দু'টারটি “অতিবিপ্লবী” বুলি কপচানই যাদের পেশা। “অতিবিপ্লব” যে “প্রতিবিপ্লব”-এরই সামিল তা অবশ্য এরা নিজেরাও জানেন। এই অদলীয় ফেডারেশন নেতারা প্রতিটি বলিষ্ঠ ছাত্র আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করতে চেষ্টা করেন এবং ঘোড়ার আগে গাড়ীজুড়ে বরাবরই আন্দোলনকে সাবোটাশ করেন। বলিষ্ঠ আন্দোলনের চেয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিই যাদের কাম্য, তারাই সাবোটাশ নীতি গ্রহণ করেন।

 গতবার রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনেও এই “অতিবিপ্লবী” অদলীয় নেতারা উড়ে এসে জুড়ে বসে আন্দোলনটিকে ধ্বংস করতে চেষ্টা করেছিলেন; কিন্তু ছাত্রসমাজের দৃঢ়তা ও সতর্কতায় তাদের অপচেষ্টা সফল হয়নি। এবারকার আন্দোলনেও এরা অনুপ্রবেশ করতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সংগ্রাম পরিষদের সতর্কতায় এর সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। তাই এই অর্বাচীন বামপন্থীরা এবার কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ এবং পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযান শুরু করেছেন। সম্প্রতি এক ইশতাহারে এরা বলেছেন“পূর্ব্ব-পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীপ বারে বারে ছাত্রসমাজের সংগ্রামী জোয়ারে রাশ টেনেছে, নিখিল পূর্ব্বপাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগের সঙ্গে এক সারিতে এসে দাঁড়িয়েছে এবং বস্তুতঃপক্ষে পূর্ব্ব-পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান খোলাখুলিভাবে নিখিল পূর্ব-পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের সঙ্গে হাত মিলাতে চান” ইত্যাদি।

 যে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের উদ্যোগে এবং নেতৃত্বে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রিকুইজিশন বিরোধী আন্দোলন, হোষ্টেল-কমনরুম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, দমননীতি ক্লিরোধী আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং সাম্প্রতিক সাধারণ ধর্মঘট পরিচালিত হয়েছে, দমননীতির চক্রতলে নিষ্পেষিত প্রায় জনমতকে যারা পূর্ব পাকিস্তানে এখনও জিয়ায়ে রেখেছ, প্রতিটি সংগ্রামের পুরোভাগে থেকে যারা পুলিশের লাঠি, গুলি এবং কাঁদুনে গ্যাসের মোকাবেলা করেছে, যারা দলে দলে