পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/২৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
২০৭
শিরোনাম সূত্র তারিখ
পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের ঘোষণাপত্র পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ ১৭ই মার্চ, ১৯৫১


পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ

ঘোষণাপত্র

উদ্দেশ্য ও কার্যসূচি

[প্রচার দপ্তর কর্তৃক ৪৩/১ নম্বর যোগীনগর লেন, পোঃ ওয়ারী, ঢাকা হইকে প্রকাশিত।]

ভূমিকা

 দল-মত নির্বিশেষে পাকিস্তানের যুবশক্তি যাহাতে একটি সংগঠনে সমবেত হইয়া নিজেদের ও দেশের উন্নতির জন্য একটি প্রগতিশীল যুব আন্দোলন সৃষ্টি করিতে পারে তাহার জন্য আমরা ঢাকায় গত ২৭শে ও ২৮শে মার্চ, ১৯৫১তে পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ নামে এক যুবসংঘ গঠন করিয়াছি। আমাদের এই সংঘ দল, মত ও ধর্ম নিরপেক্ষ। যে কোন ধর্মের যুবক-যুবতী ইহাতে যোগদান করিতে পারেন। আমাদের এই সংঘের উদ্দেশ্য ও কার্যসূচি দেশের যুবসমাজের নিকট উপস্থিত করিতেছি।

 আমরা কি চাহিয়াছিলাম এবং কি পাইয়াছি?

 আমরা পাকিস্তানের যুব-সমাজ আজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিষম সংকটের সম্মুখীন হইয়াছি। প্রথম যেদিন পাকিস্তান কায়েম হয় সেদিন আমরা সমস্ত যুবক-যুবতী তরুণ-তরুণী আশা করিয়াছিলাম যে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের দুই শত বছরের লুণ্ঠন ও অত্যাচারে ধ্বংসপ্রাপ্ত আমাদের সোনার দেশ আবার শিল্পে, শিক্ষায়, ধনে, সম্পদে সমৃদ্ধ হইয়া উঠিবে। আমরা আশা করিয়াছিলাম যে আমাদের সমাজের অর্থনীতি বৃটিশ পুঁজির কলংকময় দাসত্ব হইতে মুক্ত হইবে। এবং বৃটিশ সৃষ্ট জমিদারী প্রথার অবসান হইবে, কৃষক জমি পাইবে, এবং আমাদের সমাজ জীবনে নূতন প্রাণের জোয়ার আসিবে।

 কিন্তু পাকিস্তান কায়েম হওয়ার প্রায় সুদীর্ঘ পাঁচ বছর পরেও আমরা গভীর লজ্জার সহিত লক্ষ্য করিতেছি যে, আমাদের দেশ এখনও বৃটিশ কমনওয়েলথ-এর শিকলে বাঁধা। এখনও পাকিস্তানের ধন-সম্পদ, যেমন- পাট, চা প্রভৃতি ব্যবসার উপর সেই বৃটিশ পুঁজির কর্তৃত্ব অব্যাহত। আজও মুষ্টিমেয় বিদেশী ও দেশী ধনিক আমাদের ধন-সম্পদ লুণ্ঠন করিয়া ভোগ-বিলাসে কাল কাটাইতেছেন।

 আমরা পাকিস্তানের যুবসমাজ গভীর উদ্বেগের সহিত লক্ষ্য করিতেছি যে আজও আমাদের শিল্পের বিন্দুমাত্র উন্নতি হয় নাই। আমাদের দেশের বাজার বিদেশী মালপত্রে ছাইয়া গিয়াছে; এবং মুষ্টিমের ধনিকের সহায়তায় বিদেশী বণিকগণই আমাদের দেশের বাজারের উপর কর্তৃত্ব এবং একাধিপত্য বিস্তার করিয়া রহিয়াছে।

কৃষক যুবক

 আমাদের দেশের অর্থনীতি এখনও রহিয়াছে সেই অনগ্রসর ঔপনিবেশিক অর্থনীতির পর্যায়ে। আমাদের দেশের যুবসমাজের শতকরা ৮০ ভাগ গ্রামের কৃষক। দেশের যুবশক্তির এই প্রধান অংশ আজও সামন্তবাদী জমিদারী প্রথার নিষ্পেষণে পিষ্ট। সরকার নামেমাত্র জমিদারী প্রথার উচ্ছেদ করিয়াছে। কার্যত জমিদারী হস্তান্তর হইয়াছে মাত্র; চাষী জমির স্বত্ব পায় নাই। দেশের প্রাণ এই যুবসমাজ আজও শিক্ষা হইতে বঞ্চিত, জমি হইতে