পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/২৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
২১১

সেই দোহাই এর স্বরূপ আজ জনসাধারণের কাছে উদঘাটিত হইয়াছে। তাই আজ “শিশু রাষ্ট্রের” কথা আমরা শুনিতে পাই না। আজ আবার নূতন ধরনের বুলি তাহারা আওড়াইতেছেন। আমরা দেশের কোন সমস্যার কথাতুলিতে গেলেই আমাদিগকে আখ্যা দেওয়া হয়- “রাষ্ট্রের শক্রবা রাষ্ট্রদ্রোহী”। কোন প্রকার সমস্যার সমাধান হইতে বিলম্ব ঘটিতেছে কেন, এইরূপ প্রশ্ন করিলেই তর জওয়াব স্বরূপ সরকার হইতে বলা হয় “ইসলামী শরিয়তের বিধান মতে ইহা করিতে হইবে সে কারণে দেরী হইতেছে”। (এইখানে একটি প্রশ্ন করিতে ইচ্ছো করিঃ ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী এই কি রাষ্ট্রনায়কের কর্তব্য যে ভুখা কর্ম্মচারী তাহদের ক্ষুধার কথা জানাইলে তিনি তাহাদের ক্ষুধা কমাইবার চেষ্টা না করিয়া ক্ষুধা বাড়াইবার চেষ্টা করিবেন?) পাকিস্তানের গঠনতন্ত্রের ব্যাপারে একাধিক সরকারী মুখপাত্র হইতে আমরা অনুরূপ জওয়াবই পাইয়াছি। তদুপরি রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে বিশ্বাসঘাতক নাজিমুদ্দিন কায়েদে আজমের দোহাই দিয়া আত্নরক্ষার চেষ্টা করিতে ছাড়েন নাই।

 ইসলামের নামে আজ আট বৎসর যাবৎ আমাদের নেতারা জনসাধারণকে, অনেক ভাওতা দিয়া চলিয়াছেন। যোগাযোগ কতটুকু তাহা দিন দিনই আমাদের দেশবাসীর নিকট পরিষ্কার হইয়া পড়িতেছে। ইসলামের প্রতি জনসাধারণের যে ভালবাসা আছে তাহা আমাদের নেতারা জানেন, তাই তাহারা ব্যক্তিগত ও দলগত স্বার্থসিদ্ধির জন্যই বারংবার ইসলামের বুলি আওড়াইতেছেন, অর্থাৎ “ইসলাম”, “রাষ্ট্রদ্রোহী”, “রাষ্ট্রের শক্র” প্রভৃতি বুলি সরকার যে কোন আন্দোলনের মুখে আত্মরক্ষার বর্মরূপে এবং গণদাবীকে চাপা দেওয়ার যন্ত্ররূপে ব্যবহার করিয়া থাকেন। আমরা পাকিস্তানের যুবসমাজ স্পষ্ট ভাষায় গোষণা করিতে চাই যে আমাদের রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তান অর্জিত হইয়াছে, আত্মসর্বস্ব নেতাদের বাগাড়ম্বর দ্বারা নয়। পাকিস্তানের যে রঙ্গিন স্বপ্ন আমরা দেখিয়াছিলাম নেতাদের কার্যকলাপ তাহাকে ধূলিসাৎ করিয়া দিয়াছে। সে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়িত করিবার দায়িত্ব আমাদের যুবসমাজকেই লইতে হইবে।

 আমরা ইতিহাসের ধারা হইতে ইহাও লক্ষ্য করিয়াছি যে দেশের যুবসমাজ তথা দেশের জনসাধারণ কোন দিন দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় নাই। বরং মুষ্টিমের প্রতিক্রিয়াশীর সুবিধাবাদী নেতাদের এক অংশ বহিঃশত্রদের হাতে দেশকে তুলিয়া দিয়াছিল। বিগত মহাযুদ্ধে আমরা দেখিয়াছি ঐ সমুদয় লোকই দেশের স্বাধীনতাকে ফ্যাসিবাদের হাতে তুলিয়া দিয়াছে। অপরদিকে দেশের যুবসমাজ তথা দেশের জনসাধারণ দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সংগ্রাম করিয়া আজাদী প্রতিষ্ঠা করিয়াছে। মিশর, পারস্য, তিউনিসিয়ার সংগ্রামী যুবসমাজ এই কথারই প্রমাণ দিবে।

আমাদের ঘোষণা ও দাবী

আমরা তাই ঘোষণা করিতেছি যে

 ১। আমরা যুদ্ধ চাই না। দুনিয়ার যুবসমাজ আজ যুদ্ধের বিরুদ্ধে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ঘোষণা করিতেছে। তাহদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলাইয়া আমরা ঘোষণা করিতেছি যে, আমরা সাম্রাজ্যবাদীদের যুদ্ধ-প্রচেষ্টা ব্যর্থ করিব। সাম্রাজ্যবাদীদের যুদ্ধের কামানের খোরাক হইব না। আমরা দাবী করিতেছি যে আমাদের সরকার যুদ্ধবাদীদের বিরুদ্ধে দাঁড়াক।

 এ কথাও আমরা ঘোষণা করিতে চাই- এটম অস্ত্র হইতেছে আক্রমণের অস্ত্র, মানুষকে ব্যাপকভাবে নিশ্চিহ্ন করার অস্ত্র। তাই আমরা দাবী করিতেছি এটম অস্ত্রকে বিনাশর্তে অবৈধ ঘোষণা করা হউক এবং এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকরী করার জন্য তারপর কঠোর আন্তর্জতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হোক।

 যে সরকার প্রথম কোন দেশের বিরুদ্ধে এটম অস্ত্র ব্যবহার করিবে, সেই সরকার মানবজাতির শক্রতা করিবে, আমরা তাহাকে যুদ্ধ অপরাধে অপরাধী মনে করিব।