পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/২৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
২১৯
শিরোনাম সূত্র তারিখ
পূর্ব বাংলার লবণ সংকট দৈনিক আজাদ ও পূর্ব বাংলা ব্যবস্থাপক সভার কার্যবিবরণী অক্টোবর-নভেম্বর ১৯৫১

১৯৫১ সনের লবণ সঙ্কট সম্পর্কে ঢাকা বণিক সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন-এর বিবৃতিঃ

 পূর্ব পাকিস্তানের লবণের দুষ্প্রাপ্যতার জন্যে প্রদেশের সর্বত্র গভীর অসন্তোষের সৃষ্টি হইয়াছে। লবণের অভাবের কারণ সম্পর্কে বিভিন্ন মহল বিভিন্ন মত পোষণ করেন। কিন্তু সাধারণভাবে ইহার আসল কারণ কাহারও জানা নাই। তবে করাচী হইতে অপর্যাপ্ত সরবরাহই যে ইহার মূল কারণ তাহা নিঃসন্দেহে বলা চলে। সরকার নিযুক্ত লোভী আড়তদারদের অতিরিক্ত মুনাফা লোভই সম্ভবতঃ বর্তমান পরিস্থিতির কারণ। সরকারী হিসাব মতে পূর্ব পাকিস্তানে বার্ষিক ৭৫ লক্ষ মণ লবণের প্রয়োজন হয়। পশ্চিম পাকিস্তানের বাসিন্দাগণ সাধারণতঃ সামুদ্রিক লবণ ব্যবহার করে না। তথায় বৎসরে মাত্র ৬ লক্ষ মণ লবণ খরচ হয়। ইহাও সর্বজনবিদিত যে, সরকার দেশী শিল্পকে উৎসাহ দানের জন্যে বাহির হইতে লবণ আমদানী সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করিয়া দেওয়ার নীতি অবলম্বন করিয়াছেন। পশ্চিম পাকিস্তানের ৫টি লবণের কারখানা রহিয়াছে এবং তাহাতে বৎসরে ৫২ লক্ষ মণ লবণ উৎপন্ন হয়। পূর্ব পাকিস্তানের কোথাও সেরূপ নামকরা কারখানা নাই। সুতরাং দেশে যে লবণ উৎপন্ন হয় তাহাতে শেষ পর্যন্ত প্রয়োজন অপেক্ষা বৎসরে ৩৯ লক্ষ মণ লবণ ঘাটতি পড়ে। অর্থাৎ দেশের প্রয়োজনের তুলনায় পাকিস্তানে লবণ উৎপাদনের পরিমাণ খুবই কম। সুতরাং উপৎপাদন বৃদ্ধি বা বিদেশ হইতে লবণ আমদানী ব্যতিরেকে অন্য কোন উপায়ে দেশের প্রয়োজন মিটানো সম্ভবপর নয়।

 সরকার কর্তৃক লবণ আমদানী বন্ধ হওয়ার পর হইতেই আমি লবণের নিশ্চিত ঘাটতি অনুমান করিয়াছিলাম। আমি সরকারকে ভারত এবং অন্যান্য বিদেশী রাষ্ট্র হইতে লবণ আমদানীর অনুমতি দানের জন্য অনুরোধ করিয়াছিলাম। আমার প্রস্তাব অনুযায়ীই গত এপ্রিল মাসে বৈদেশিক বাণিজ্য উন্নয়ন পরিষদ বিদেশ হইতে লবণ আমদানীর অনুমতি দানের সোপারিশ জানাইয়াছিলেন। কিন্তু সরকার এ সম্পর্কে এখনও কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন নাই। ঢাকা বণিক সমিতি প্রায় একই সময় খাদ্য মন্ত্রীর নিকট অনুরূপ সোপারিশ জানাইয়াছিল। কিন্তু এ সম্পর্কেও এখন পর্যন্ত কিছু করা হয় নাই।

 উৎপাদনের স্বল্পতা ছাড়া প্রদেশে লবণের বিলি ব্যবস্থাও যথেষ্ট ভালই রহিয়াছে। চট্টগ্রাম বন্দরে লবণ খালাস ও তাহা হইতে অন্যত্র চালান দেওয়ার ভার একটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের একচেটিয়া।

 এ সম্পর্কে আমি আরও জানাইতে চাই যে, পশ্চিম পাকিস্তান চা ও পানের অভাব থাকায় তথাকার বাসিন্দাগণকে বিদেশ হইতে এই উভয়বিধ দ্রব্য আমদানীর অনুমতি দেওয়া হইয়াছে।

 স্বদেশী দ্রব্যের পৃষ্ঠপোষকতা করিতে যাইয়া পূর্ববঙ্গের অধিবাসীগণকে এক সের লবণের জন্য যখন ২.০০ টাকা হইতে ৩.০০ টাকা ব্যয় করিতে হইতেছে, তখন পশ্চিম পাকিস্তানের অদিবাসীগণ কোন যুক্তিতে বিদেশ হইতে পান ও চা আমদানী করিয়া নিজেদের ঘাটতি পূরণের অনুমতি পাইতেছে? একই পরিপস্থিতিতে পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য এইরূপ ভিন্ন ভিন্ন নীতি গৃহীত হইতে পারে কিরূপে? এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে, করাচীতে বর্তমানে মাত্র দুই আনা সের দরে লবণ বিক্রয় হইতেছে। দৈনিক আজাদ, ২২-১০-১৯৫১]

গদী ছাড়

এইবার লবণের দুর্ভিক্ষ চরম আকার ধারণ করিয়াছে। সারা পূর্ববঙ্গ জুড়িয়াই লবণের দুষ্প্রাপ্যতা হেতু চড়াদর ইতিহাস সৃষ্টি করিয়াছে। সের প্রতি দুই টাকা হইতে আরম্ভ করিয়া স্থানবিশেষে ষোল টাকায় পর্যন্ত লবণ