পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/২৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খন্ড
২৬০
শিরোনাম সূত্র তারিখ
সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ সম্মেলনে আতাউর রহমান খানের ভাষণ সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ ২৭শে এপ্রিল, ১৯৫২

সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা

কর্মপরিষদ-সম্মেলন

বার এসোসিয়েসন হল, ঢাকা

২৭শে এপ্রিল, ১৯৫২

সভাপতি জনাব আতাউর রহমান খানের ভাষণ

বন্ধুগণ,

 বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা দাবী করার অপরাধে পূর্ব পাকিস্তানে যে বিপর্যয় ও বিভীষিকার ঝড় বয়ে গেল তার একটা মোটামোটি ইতিহাস আপনাদের সামনে পেশ করতে চাই।

 ঊনিশ শ’ আটচল্লিশ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে প্রথম উৎপত্তি, ছাত্রসমাজের উপর মুসলিম লীগ সরকারের নির্যাতন ও আন্দোলনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপন এবং শেষ পর্যন্ত তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, খাজা নাজিমউদ্দীনের চুক্তিপত্র স্বাক্ষর- সবই আপনারা জানেন। আপনারা এও জানেন যে, উক্ত চুক্তির শর্ত কখনও কার্যকরী করার চেষ্টা হয়নি, পক্ষান্তরে আরবী হরফে বাংলা ভাষা প্রচলনের এক উদ্ভট পরিকল্পনা কার্যকরী করার জন্য সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে ফেলেছেন।

 তারপর চার বছর কেটে গেলো। রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে সবাই একরকম চুপচাপ। ঠিক এমনি সময় একদা জানুয়ারী শেষ ভাগে খাজা নাজিমউদ্দীন সাহেব, ঢাকার জনসভায় উর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে বলে ঘোষণা করে বসলেন। বারুদে আগুন লাগলো। সাড়ে চার কোটি মানুষের দাবীকে উড়িয়ে দিয়ে, নিজের প্রতিশ্রুতি ও চুক্তি ভঙ্গ করে ‘নাজিমউদ্দীন সাহেব যখন এই ঘোষণা করলেন, তখন সারা পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ বিস্ময়ে স্তম্ভিত ও হতবাক হয়ে পড়লো। চারদিক থেকে তীব্র প্রতিবাদের রোল পাকিস্তানের আকাশেবাতাসে ধ্বনিত হলো।

 তারপর তিরিশে জানুয়ারী তারিখে ছাত্র ও জনসাধারণের বিরাট মিছিল, জনসভা, একত্রিশ তারিখে মৌলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে সবর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ গঠন এবং চৌঠা ফেব্রুয়ারী তারিখে শহরে হরতাল পালন ও স্কুল-কলেজ বন্ধ, এসব পর পর হয়ে গেলো। কর্মপরিষদের এক সভাতে একুশে ফেব্রুয়ারী তারিখে দেশব্যাপী হরতাল, শোভাযাত্রা সভাসমিতি করার প্রস্তাব ঘোষণা করা হলো। এগারো, বারো ও তেরো তারিখে পতাকা দিবস পালন করা হলো। চৌদ্দই তারিখে কর্মপরিষদের তরফ থেকে নুরুল আমিন সাহেবকে কর্মপরিষদের সদস্যদের সাথে আলোচনা করার জন্যে দিন, তারিখ ও স্থান ধার্য করার অনুরোধ জানিয়ে এক চিঠি দেওয়া হয়। সে চিঠির জবাব অবশ্য কোনদিনই পাওয়া যায়নি।

 হঠাৎ বিশে ফেব্রুয়ারী অপরাহ্নে ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একশ’ চুয়াল্লিশ ধারা ঘোষণা করে শোভাযাত্রা ও সভাসমিতি বন্ধ করার আদেশ দেন। বিনা মেঘে বজ্রপাত। এর আগে আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে ছাত্র ও জনসাধারণ সৃশুঙ্খল ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে সভা, হরতাল ও মিছিল চালিয়ে গেছে- নিষেধাজ্ঞা জারী করার কোন