পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খন্ড
৪১০
শিরোনাম সূত্র তারিখ
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবী দিবসে ফজলুল হকের ভাষণ যুক্তফ্রণ্ট ১০ই এপ্রিল, ১৯৫৫

১০ই এপ্রিল রবিবার

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে পল্টন ময়দানের জনসভায়

সভাপতি শেরে বাংলা জনাব এ, কে, ফজলুল হকের ভাষণ

আমার প্রিয় পাকিস্তানী ভাইগণ,

 আজ দেশ ও জাতির অতি সঙ্কটপূর্ণ মুহূর্ত্তে আমি আপনাদিগকে এই “গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা দিবস” প্রতিপালনে আহ্বান জানাইয়াছি। ইংরাজ শাসনের ১৮২০ সাল হইতে আরাম্ভ করিয়া ১৯৪৬ সাল পযর্ন্ত সোয়া শত বৎসর ধরিয়া পাক-ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সৈনিকগণ বিভিন্ন আন্দোলনের ভিতর দিয়া যে জীবনাহুতি প্রদান করিয়া আসিয়াছেন তাহারই ফলস্বরূপ ১৯৪৭ সালে আমরা আজাদ পাকিস্তান লাভ করিয়াছি। এই আজাদীর সংগ্রামে হাজার হাজার দেশপ্রেমিক জানমাল কোরবান করিয়া যে ইতিহাস সৃষ্টি করিয়াছেন তাহার স্মরণ করিলে উক্ত ত্যাগী বীরদের জন্য স্বতঃই মস্তক অবনত হইয়া আসে। শাহদত বরণ করিয়া, ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়া, কারাবরণ করিয়া এবং যাবতীয় বিষয়-সম্পত্তি বিসর্জন দিয়া আমার লক্ষ লক্ষ দেশবাসী যে আজাদী হাসিল করিয়াছে সেই আজাদীর ফল কি আমরা ভোগ করার সুযোগ পাইয়াছি? কিরূপ আজাদীর জন্য সংগ্রাম করিয়া ঐ সব মনীষীগণ নিজদিগকে কোরবানী কারিয়াছিলেন এবং সেই আজাদী কাহাকে বলে? যাহাতে প্রত্যেকটি মানুষ তাহার জন্মগত গণতান্ত্রিক অধিকার লাভ করিতে পারে এবং সেই অধিকারের বলে দেশবাসীর জন্য জনগণের প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসনাধিকার প্রাপ্ত হইতে পারে উহারই নাম প্রকৃত আজাদী। আপনারা সকলে সেই আজাদীর জন্যই সংগ্রাম করিয়াছেন, আমরাই সেই আজাদীই চাহিয়াছি। কিন্তু আফসোস আজ পর্য্যন্ত আমরা সেই আজাদীর স্বাদ গ্রহণ করতে সমর্থ হই নাই। আমাদের আজাদী প্রাপ্তির পর প্রায় ৮ বৎসর উত্তীর্ণ হইয়া চলিল-ইংরাজ জাতির সৃষ্ট ভারত শাসন আইন দ্বারাই আজও আমাদিগকে শাসন করা হইতেছে, আমাদের আজাদ পাকিস্তানের উপযোগী শাসনতন্ত্র আজও আমরা পাই নাই। বিগত ৭ বৎসরের শাসন পাকিস্তানকে প্রায় দেউলিয়া করিয়া ফেলিয়াছে।

 অতীতের কথা বেশী ঘাটিয়া লাভ নাই আমি বর্ত্তমান সম্পর্কে এখন আপনাদিগকে কিছু বলিতে চাই। গত বৎসর এই এপ্রিল মাসের ৩রা তারিখে আমাদের এই পূর্ব পাকিস্তানে যুক্তফ্রণ্ট মন্ত্রিসভা কায়েম হয় এবং উহার ৫৭ দিন পরই উক্ত মন্ত্রিসভা বাতিল করতঃ গভর্ণর পরিচালিত আমলাতান্ত্রিক শাসন চালু করা হয়। জনসংখ্যার শতকরা সাতানব্বই জনের ভোটে নির্ব্বাচিত আইন পরিষদের সভ্যগণকে সাসপেণ্ড করতঃ আইন সভাকে অকেজো করিয়া রাখা হয়। বহু যুক্তফ্রণ্ট এম,এল,এ-সহ শত শত কর্মীকে নিরাপত্তা আইন বলে গ্রেফতার করিয়া জেলে আটক রাখা হয়, আজও উহাদের অনেকে কারাগারে পচিতেছেন। আমরা জনসাধারণের ভোট লইয়া আসিয়াছি, মানুষ আমাদের দিকে তাকাইয়া রহিয়াছে, আশা করিয়া রহিয়াছেন আমাদের হাত দিয়া আল্লাহ তাহাদের দুঃখ মোচন করাইবেন। কিন্তু আমরা কোন কাজ করার সুযোগ ও সময়ই পাইলাম না। কাদিয়ানী বিরোধী আন্দোলনের ফলে পাঞ্জাবে হাজার হাজার লোক মারা যাওয়ার পর দওলতানা মন্ত্রিসভা ডিসমিস করা হইয়াছিল সত্য কিন্তু ৯২ (ক) ধারা জারী করিয়া আইন পরিষদকে অকেজো করিয়া রাখা হয় নাই। কিন্তু আমাদের এই পূর্ব বাংলার বেলায় ঐরূপ অভূতপূর্ব কার্য্য দ্বারা পাকিস্তানের অত্রাঞ্চলের জনগণের মনে ভীষন আঘাত করা হইয়াছে।