পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৬০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৫৮২

গেছে। এই সম্মেলনে জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী অংশ গ্রহণ করায় আমরা সৌভাগ্য বলেই মনে করি; কারণ, খাদ্য ব্যবস্থায় তাঁর বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে আপনারা সবিশেষ ওয়াকেবহাল আছেন। তীব্র খাদ্য সমস্যার সন্তোষজনক সমাধানকল্পে খাদ্য সরবরাহ বৃদ্ধি এবং খাদ্য ব্যবস্থা আয়ত্তে আনার জন্য যে কয়েকটি ব্যবস্থা অবনম্বন করেছি, তা এই:—

 ১. ইতিপূর্বে যে ১ কোটি ১০ লাখ মণ খাদ্য-শস্য আমদানীর আদেশ দেয়া হয়েছে, তা ছাড়াও প্রেসিডেণ্টের মহানুভবতায় আরো ২৭ লাখ মন চাউল আমদানীর আদেশ দেওয়া হয়েছে।

 ২. পূর্ব পাকিস্তানের বন্দরগুলো ও রেল প্রান্তে যাতে খাদ্য বোঝাই জাহাজগুলো তাড়াতাড়ি পৌঁছতে পারে, তার জন্যে নতুন উপায় উদ্ভাবনকল্পে ব্যবস্থা অবলম্বন করা হচ্ছে। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে এ বছর অক্টোবর মাস শেষ হওয়ার পূর্বেই ১ কোটি ৩৭ লাখ মণ চাউল আমদানী করতেই হবে।

 ৩. আগামী ১৪ই সেপ্টেম্বর জেলা ম্যাজিষ্ট্যাট ও জেলার কণ্ট্রোলারদের এক সম্মেলন বসছে। এ সম্মেলনে খাদ্যবস্থা পর্যালোচনা করে তাদের স্বস্ব এলাকার প্রয়োজন নির্ণয় করা হবে। এতে করে খাদ্যশস্যের দ্রুত বিলি ব্যবস্থায় সামঞ্জস্য সৃষ্টি করা যাবে। এসব অফিসারদের বলা হয়েছে যেন তাঁরা তাঁদের মজুদ শস্যের পরিমাণ সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে কি পরিমাণ খাদ্যের প্রয়োজন এবং গ্রামাঞ্চলে কিভাবে খাদ্য-শস্য তাড়াতাড়ি বিলি করা যায় তার প্রস্তাবসহ ঢাকায় আসেন।

 ৪. আমরা সিদ্ধান্ত করেছি যে, খাদ্য সমস্যার সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার জন্যে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটদের পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হবে। তাঁদের কাজ অধিকতর সহজ ও কার্যকরী করার উদ্দেশ্যে এই সব অফিসারদের ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হবে, যাতে করে ঢাকার সদর দফতরের সঙ্গে পত্রালাপে বৃথা সময় নষ্ট না করে তারা সরাসরি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবলম্বন করতে পারেন। খাদ্য সংক্রান্ত অপরাধে বিশেষ করে মওজুদকারী, চোরাচালানকারী, কালোবাজারী এবং মুনাফাখোরদের কঠোর শাস্তি বিধানের জন্য জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটদের অধিকতর ক্ষমতা দেওয়া হবে।

 ৫. এখনও ফুড কমিটি গঠিত হয়ে না থাকলে উহাদের আশু গঠনের আদেশ দেওয়া হবে। যেসব ফুড কমিটি ইতিমধ্যেই গঠন করা হয়েছে, অধিকতর শক্তিশালী করার জন্য সুেগলোকে পুনর্গঠন করা হবে।

 ৬. যেখানে লঙ্গরখানার প্রয়োজন হবে, সেখানে লঙ্গরখানী খোলার ব্যবস্থা হচ্ছে।

 দীর্ঘ বা স্বল্পমেয়াদী এর যে-কোন নীতিরই সাফল্য নির্ভর করে কর্মচারীদের দক্ষতা, কার্যক্ষমতা এবং উদ্ভাবনী শক্তির উপর। এজন্য আমরা শাসন ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করে সর্বপ্রকার দুর্নীতিমুক্ত করতে চাই। স্থায়ী কর্মচারীদের সততা এবং সাধুতা ফিরিয়ে আনতেই হবে। অসং এবং অকর্মণ্য কর্মচারীদের আমরা সরিয়ে দিতে চাই। সং কর্মক্ষম এবং মনোযোগী কর্মচারীদের জন্য অমনোযোগী এবং বেয়াড়া কর্মচারীদের জায়গা ছেড়ে দিতেই হবে। কর্মচারীরা হয় কাজ করবেন, না হয় কাজ ছেড়ে চলে যাবেন; কালগুণে জনসাধারণের অর্থ অপচয় করা চলবে না। আমাদের কর্মসূচী এবং পরিকল্পনা কার্যকরী করতে সরকারী কর্মচারীরা আমাদের পূর্ণ সহযোগিতা ও সমর্থন পাবেন।

 আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যা কিছু আমরা করব, জনসাধারণের সেবাই হবে তার ভিত্তি, রাজনৈতিক সুবিধাবাদের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক থাকবে না। দৈনন্দিন শাসনকার্যে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করব না। সাধু এবং দক্ষ কর্মচারীদের মনোবল রাখতে ও অটুট রাখতে ও যথাসম্ভব তাদের পুরস্কৃত করতে এবং অসাধু ও