পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৬১৯

৬১৯ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড হিসেবে কমপক্ষে ১৫ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করা দরকার। নানা দুর্বিপাকে উত্তরবঙ্গের ছাত্র সমাজ খুবই অসুবিধায় পড়েছে। স্কুল-কলেজের বেতন পরিশোধের সামার্থ্য তাদের নেই। এদের সাহায্য দেওয়া জন্য কমপক্ষে ৫ লক্ষ টাকার মত প্রয়োজন।

 এসব মিলিয়ে বর্তমানে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য মোট সাড়ে ১৩ কোটি টাকারও অধিক প্রয়োজন। তন্মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ২ কোটি ১০ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছেন। কিঞ্চিদধিক সাড়ে ১১ কোটি টাকার এখনও বিশেষ প্রয়োজন। অবিলম্বে এ টাকা যদি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে পাওয়া না যায়, তা হলে জনসাধারণের দুর্গতির সীমা থাকবে না। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, গত জানুয়ারী মাস থেকে এ ক'মাসে পূর্ব পাকিস্তান সরকার তাদের নিজ তহবিল থেকে বিভিন্নমুখী সাহায্য ব্যবস্থা বাবদ ৬০ লক্ষ টাকার মত ব্যয় করেছেন।

খাদ্য আমদানী-

 ১৯৫৬-৫৭ ও ১৯৫৭-৫৮ সালে বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানীর মোট ব্যয়ের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকার বহন করে এসেছেন, কিন্তু বর্তমানে তাঁরা এ ধরনের আর কোন সাহায্য না দেওয়ার সিদ্ধান্ত করায় প্রদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। আলোচ্য দু'বছরে এ বাবদ কেন্দ্রীয় সরকার যথাক্রমে ২ কোটি ২৯ লক্ষ ও ৯ কোটি ৪১ টাকা মঞ্জুর করেছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের এ সাহায্য সত্ত্বেও প্রাদেশিক সরকারকে ১৯৫৬৫৭ সলে ১ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা এবং ১৯৫৭-৫৮ সালে ২ কোটি ২ লক্ষ টাকা লোকসান দিতে হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ধান-চাল সংগ্রহের ব্যাপারেও কতিপয় অনাবশ্যক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যবাসায়গণ লারকান, দাদু, জ্যাকোবাদ ও শুককুরের স্থানীয় মোকামে মাল ডেলিভারী দিয়েই খালাস পাচ্ছে। সেখান থেকে সেই মাল আবার স্বতন্ত্র ব্যবস্থাধীনে করাচীতে চালান দিতে হচ্ছে।

 এভাবে একই মাল দুবার উঠানো-নামানো প্রয়োজন হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারকে এজন্য একটি স্বতন্ত্র বিভাগই রাখতে হচ্ছে। এর জন্য আনুষঙ্গিক যে ব্যয় হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত তা গিয়ে প্রাদেশিক সরকারেরই উপর চাপছে। সাবেক সিন্ধু সরকারের আমলে এবং যখন পূর্ব পাকিস্তান সরকার ধান-চাল সংগ্রহ করতেন তখন ঐসব এলাকায় ধান-চাল সরাসরি করাচী বন্দরেই ডেলিভারী দেয়া হতো এবং সেখানে জাহাজে বোঝাই করা হতো। সে সময় মণপ্রতি আট আনার বেশী অতিরিক্ত ব্যয় পড়ত না। কিন্তু বর্তমান পশ্চিম পাকিস্তান সরকার আমাদের কাছ থেকে এ বাবদ মণপ্রতি ১ টাকা আদায় করছেন। এর ফলে, পশ্চিম পাকিস্তানী চাল কিনতে গিয়ে আমাদের বর্মার চাল অপেক্ষা মণপ্রতি ৩ টাকা বেশী দাম দিতে হচ্ছে। মণপ্রতি এই ১ টাকা বাড়তি খরচ আদায় করে প্রকৃত ১ প্রস্তাবে পূর্ব পাকিস্তানের গরীব ক্রেতাদের স্বার্থের বিনিময়ে পশ্চিম পাকিস্তান সরকারকেই প্রকারান্তরে সাহায্য করা হচ্ছে।

ত্রুটিপূর্ণ নীতি-

 কেন্দ্রীয় সরকারের অনুসৃত এই ত্রুটিপূর্ণ সংগ্রহ নীতির দরুন তাদের অনাবশ্যক কতকগুলো খরচের ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। আর সেই অস্বাভাবিক রকমের বাড়তি খরচের চাপ গিয়ে পড়ছে পূর্ব পাকিস্তানেরই দরিদ্র ক্রেতাদের উপর। এর আগে সিন্ধু সরকারের সংগৃহীত চালের স্টক পূর্ব পাকিস্তানকে যে চাল সরবরাহ করা হত। তার বাবদ তাঁরা টনপ্রতি মাত্র ১ টাকা ২ আনা হবে তদারকী ফিস আদায় করতেন। এতে করে মণপ্রতি বাড়তি খরচ পড়তো তিন পয়সাও কম।

 এদিকে, আমদানীকৃত ও সংগৃহীত চালের আনুষঙ্গিক খরচসহ মণপ্রতি গড়ে মূল্য দাঁড়ায় ২৩ টাকা ১৫ আনা ৭ পাই। বিক্রয় করা হয় মণপ্রতি ২১ টাকা ৫ আনা মূল্য। ফলে, মণপ্রতি সরকারের লোকসান হয় ২ টাকা ১০ আনা ৭ পাই। এই হিসেবে বার্ষিক অনুমান ১,০৮,৮৮,৮০৯ মণ চাল ক্রয়-বিক্রয় বাবদ সরকারকে মোট লোকসান দিতে হয় ২,৮৯,৮০,৩২৪ টাকা।