পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৬২০

সমাধানের উপায়-

 যে ব্যাপক ও মারাত্মক রকমের দুরবস্থা প্রদেশবাসীকে গ্রাস করেছে তাতে করে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত চালের বিক্রয় মূল্য কোন ক্রমেই বৃদ্ধি করা সম্ভব না হওয়ায় এবং জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য যেসব প্রস্তাব করা যেতে পারে সেগুলি হচ্ছেঃ

(১) প্রদেশের জন্য চাল সংগ্রহ বাবদ যে মোট ব্যয় হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে তদ্দরুন ২ কোটি টাকার মত সাহায্য করতে হবে। অবশ্য, লোকসানের পরিমাণ যদি প্রকৃতপক্ষে কম হয় তবে এই সাহায্যের পরিমাণ কিছুটা কমও করা যেতে পারে। অথবা, বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ১৯৫৭-৫৮ সালের ন্যায় যে কোন স্থানে সংগৃহীত হোক না কেন সে চাল চট্টগ্রামে মণপ্রতি ১৮ টাকা দরে ডেলিভারী দিতে হবে।

(২) পশ্চিম পাকিস্তান সরকার চালের উপর যে বাড়তি খরচ আদায় করেন, হয় তা প্রত্যাহার করতে হবে নতুবা সাবেক সিন্ধু সরকারের মত এই খরচ মণপ্রতি ৮ আনা ধার্য করতে হবে।

(৩) কেন্দ্রীয় সরকারের অনুসৃত ত্রুটিপূর্ণ সংগ্রহনীতির দরুন যে আনুষঙ্গিক ব্যয় প্রাদেশিক সরকারকে বহন করতে হয়, কেন্দ্রীয় সরকারকে তা প্রত্যাহার করতে হবে। অতীতে তদারকী ফিস হিসেবে টনপ্রতি ১ টাকা ২ আনা হারে যে খরচ আদায় হতো, বড়জোর কেন্দ্রীয় সরকার সেই হারেই আদায় করতে পারেন।

অসত্য প্রচারণা-

 এবার আমি পূর্ব পাকিস্তানের মহামারীজনিত পরিস্থিতি উপর কিছুটা আলোকপাত করতে চাই। পূর্ব পাকিস্তানের বসন্ত ও কলেরার প্রাদুর্ভাব বরাবরই ঘটে আসছে। ১৯৫১-৫২ সালে এই রোগে মৃত্যুর হার ছিল সবচেয়ে বেশী। কিন্তু এ বছর পূর্ব পাকিস্তানে মহামারী এমন ভয়াবহরূপ পরিগ্রহ করে যে, প্রাদেশিক সরকার সম্ভাব্য সকল চেষ্টা চালানো সত্ত্বেও বহু লোকের মৃত্যু ঘটে। গত বছরের শেষ দিকে বসন্ত দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাদেশিক সরকার উপদ্রুত এলাকার স্বাস্থ্য বিভাগীয় কর্মচারীদের সংখ্যাবৃদ্ধি ছাড়াও সবরকমের প্রতিষেধক ব্যবস্থা অবলম্বন করেন। কিন্তু, তা সত্ত্বেও এই রোগ মহামারী আকারে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকার জাতীয় জরুরী অবস্থার ভিত্তিতে তার মোকাবেলা করতে সর্ব-প্রযত্নে প্রয়াস পান। এ ব্যাপারে সহযোগিতার জন্য সকল রাজনৈতিক দল ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমন্ত্রণ জানান হয়। সরকারী কর্মচারী ও রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক, স্বাস্থ্য ও মেডিকেল প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রাদেশিক মহামারী প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে আমাকে বলতে হচ্ছে যে, মহামারী পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক মূলধন হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে জনাব ইউসুফ আলি চৌধুরী যে দলে আছেন, সেই দলসহ কতিপয় রাজনৈতিক দল এই কেন্দ্রীয় কমিটির বাইরে থাকেন। এখন দেখছি জনাব চৌধুরী এই পরিস্থিতির পুরা সুযোগই গ্রহণ করছেন। পূর্ব পাকিস্তানে মহামারীতে এক লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি যে হিসাব দিয়েছেন তা কেবল অতিরঞ্জিতই নয় আজগুবিও বটে। সরকারী সংখ্যাতত্ত্বের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর না করেও একথা সরাসরি বলা যায় যে, সংখ্যাতত্ত্ব সংগ্রহের মত কোন ব্যবস্থাই জনাব ইউসুফ আলি চৌধুরীর হাতে নেই। অবশ্য কল্পনার বশবর্তী হয়ে ইচ্ছামত তিনি যে কোন সংখ্যাই উল্লেখ করতে পারেন। গত দশ বছরে প্রদেশে বসন্ত ও কলেরায় কত লোকের মৃত্যু হয়েছে, তার হিসাব প্রাদেশিক সরকারের কাছে আছে এবং অতীতের যে ব্যবস্থাধীনে এই সংখ্যাতত্ত্ব সংগ্রহ করা হতো, আজও তাই চালু আছে। মজার বিষয় এই যে, কিছুদিন আগে জনাব ইউসুফ আলী চৌধুরী ও অপর দুজন কেএসপি নেতা প্রাদেশিক মহামারী নিয়ন্ত্রণ কমিটির কয়েকজন সদস্যের সামনে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে টিকা বীজ চান। আলাপ-আলোচনার পর আমি তাঁকে জানাই যে কমিটির কাছ থেকে কিছু টিকাবীজ আদায় করে বিক্ষিপ্তভাবে জনকয়েক স্বেচ্ছাসেবক কোথাও পাঠান আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। পাল্টা প্রস্তাব হিসেবে আমি তাঁর দলের কতিপয় সদস্যকে মহামারী নিয়ন্ত্রণ কমিটিতে