পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৬২১

পাঠাতে বলি। কেননা, এই কমিটির অভিযান পরিচালনা বোর্ডটি প্রত্যেক দিনই বৈঠকে মিলিত হয়ে প্রদেশের মহামারীজনিত সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করায় তাঁর দলের সদস্যগণও দৈনন্দিন অবস্থা সম্যক উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে। আমি তাঁকে তাঁর দলের স্বেচ্ছাসেবকদের একটা তালিকা পাঠানের জন্যও অনুরোধ করি এবং বলি যে, এসব স্বেচ্ছাসেবককে মহামারী নিয়ন্ত্রণ কমিটির পরিচালনাধীনে উপদ্রুত এলাকায় পাঠানো যাবে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে, জনাব ইউসুফ আলী চৌধুরী মহামারী নিয়ন্ত্রণ কমিটিতে তাঁর দলের কোন সদস্যের নাম তো দাখিল করেনইনি-এমনকি, স্বেচ্ছাসেবকদের কোন তালিকাও পাঠাননি। এতে করে আমি পরিস্কারভাবে বুঝতে পারি যে, প্রদেশের মহামারী পরিস্থিতিকে তিনি রাজনৈতিক মূলধনই করতে চেয়েছিলেন- সত্যিকার জনসেবার কোন উদ্দেশ্যই তাঁকে তখন প্রেরণা যোগায়নি। সমাজ সেবার ব্যাপারে তাঁর আন্তরিকতা সম্পর্কে আমার সন্দেহ করবার কিছু না থাকলেও আমার মতে, এ ধরনের কোন কাজে আত্মনিয়োগের মত কোন ব্যবস্থা বা প্রতিষ্ঠান তাঁর নেই।

 প্রদেশের সাম্প্রতিক মহামারীজনিত পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে এ মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে একটি রিপোর্ট পেশের জন্য আমি ইতিমধ্যেই একজন বিভাগীয় কমিশনারকে নিয়োগ করেছি। তাঁর কাছ থেকে এই রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা স্থির করব এ সম্পর্কে আরও ব্যাপকভাবে তদন্তের জন্য একটি পূর্ণ কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়ত আছে কিনা। এ প্রসঙ্গে আমি বিগত কয়েক বছরের সংখ্যাতত্ত্ব পেশ করতে চাই। কলেরা ও বসন্তে পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৫৩ সালে মৃতের সংখ্যা ছিল ২৭,৯২০ ১৯৫৪ সালে ১০,৯১২, ১৯৫৫ সালে ১৫,০৭৫, ১৯৫৬ সালে ২০,৭৯৯, ১৯৫৭ সালে ১৬,২৫০ ও ১৯৫৮ সালে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ১৯,০০৬। বিভিন্ন সময়ে প্রদেশে কি পরিমাণ টিকা বীজ বিতরণ করা হয়েছে তারও একটি তুলনামুলক হিসাব দেয়া যেতে পারে। ১৯৫৪-৫৫ সালে যে টিকাবীজ সরবরাহ করা হয় তার পরিমাণ ছিল ১৪,১১৯,৩০০ মাত্র, ১৯৫৫-৫৬ সালে ১৫,৯৪৪,৪৩০ মাত্রা ১৯৫৬-৫৭ সালে ১৮,৪৮৯,৯১০ মাত্র, ১৯৫৭ সালে ২৭,৮১৯,৯৭০ ও এ বছর ২৪ মে পর্যন্ত ২৬,০৫৭,৬২০ মাত্র। এস হিসাব থেকে প্রদেশের মহামারী ব্যাপকতা ও তা নিরসনের জন্য অতীত ও বর্তমান সরকার কতদূর কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তার পরিচয় পাওয়া যাবে। টিকাবীজ বিতরণের সংখ্যাতত্ত্ব থেকেই প্রতীয়মান হয় যে, মহামারী পরিস্থিতির মোকাবেলার জন্য বর্তমান সরকার যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তা পূর্ববর্তী যে কোন সরকারের ব্যবস্থাকে ছাড়িয়ে গেছে। তা ছাড়া বিদেশ থেকে প্রাপ্ত টিকাবীজ ও দেশের অভ্যন্তরে টিকাবীজ উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়ে প্রদেশের অন্যূন ৪ কোটি লোকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি। মহকুমা সদর দফতরগুলিতে টিকাবীজ সংরক্ষণের ব্যবস্থাও আমরা করেছি। ঢাকা থেকে বিশেষ বাহকের মারফত এ সকল কেন্দ্রে টিকাবীজ পৌঁছে দেয়া হবে।

 ভবিষ্যতে মহামারীর আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সরকার নিম্নোক্ত ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করেছেনঃ সরকার জেলা বোর্ডের পরিচালনায় প্রতি দুইটি ইউনিয়নের জন্য একজন করে হেলথ এ্যাসিষ্ট্যাণ্ট, প্রতি থানার জন্য একজন স্যানিটারী ইনসপেক্টর ও ৩ জন হেলথ এ্যাসিষ্টেণ্ট নিয়োগ করেছেন। জেলা বোর্ডের কর্মচারী ও ভ্রাম্যমাণ ইউনিটগুলিকে সাহায্যের জন্য ৪৭৮ জন গভর্ণমেণ্ট হেলথ এ্যাসিষ্ট্যাণ্ট নিয়োগ করা হয়েছে। ১৯৫৭ সালের মে মাস থেকে অতিরিক্ত ২০০ হেলথ এ্যাসিষ্ট্যাণ্ড এবং ১৯৫৮ সালের এপ্রিল মাস থেকে আরও ৩০০ হেলথ এ্যাসিষ্ট্যাণ্ট কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া ৫০ জন সাব-ডিভিশনাল হেলফ অফিসার ও ১০টি ভ্রাম্যমাণ ইউনিটও নিয়োগ করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলা, মহকুমা, থানা ও ইউনিয়নেও মহামারী প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে তাদের পরিচালনাধীন শত শত স্বেচ্ছাসেবক উপদ্রুত এলাকায় গিয়ে দুর্গত মানবতার সেবায় ঝাপিয়ে পড়েছেন।

 অতীব পরিতাপের বিষয়, জনস্বাস্থ্য বিভাগীয় কর্মচারীগণ যখন গ্রামে গ্রামে গিয়ে টিকাদান অভিযান পরিচালনা করেন তখন গ্রামবাসীদের অনেকেই টিকা নিতে অসম্মত হন। আমরা রিপোর্ট পেয়েছি যে যারাই টিকা নিয়েছেন, তাঁরা হয় এই রোগে আদৌ আক্রান্ত হয়নি, অথবা আক্রান্ত হলেও তাদের মৃত্যু ঘটেনি। কিন্তু যাঁরা টিকা নেননি তাঁদের প্রায়ই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ও শেষ পর্যন্ত অনেকে মারা গিয়াছেন। আগেই বলেছি, পূর্ববর্তী বছরগুলির তুলনায় গত ও বর্তমান বছরে অনেক বেশী পরিমাণ টিকাবীজ সরবরাহ করা হয়েছে। ১৯৫১ সালে,