পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৬৭৮

 বেলা দুইটার দিকে একটি বিরাট শোভাযাত্রা লালবাগের দিক হইতে ‘আজাদ’ অফিসের সম্মুখ দিয়া মুসলিম হলের দিকে যাইবার সময় শোভাযাত্রাটির কিছু সংখ্যক লোক আজাদ’ অফিসের কর্মচারীদের উপর প্রস্তর নিক্ষেপ করিয়া শাসাইতে। আজাদ’ কর্তৃপক্ষ ও কচারীগন কর্তৃক ছাত্রদের দাবী সম্পর্কে যাসার্ধ চেষ্টা করা কতিপয় ছাত্রকর্মীর হস্তক্ষেপের ফলে ও তাহাদের পরামর্শে বিক্ষোভকারীগণ ক্ষান্ত হইয়া সম্মুখে অগ্রসর হয়। পলাশী লেবেল ক্রসিং-এর নিকট পৌছিলে পুলিশ হাতাদের উপর লাঠিচার্জ করে।

মেডিক্যাল কলেজ

 গতকল্য (শুক্রবার) সকাল অনুমান দশ ঘটিকার সময় মেডিক্যাল কলেজ প্রাঙ্গণে গত পরশুর নিহত ছাত্রদের গায়েবানা জানাজা সমাপন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে জনাব এ, কে, ফজলুল হক উপস্থিত ছিলেন। অতঃপর সেখান হইতে প্রায় পাঁচ হাজার ছাত্র ও স্থানীয় জনসাধারণের একটি মিছিল শোভাযাত্রা বাহির করা হয়। শাভাযাত্রাটি শান্তিপূর্ণভাবে মেডিক্যাল কলেজের সম্মুখবস্থা রাস্তা দিয়া অগ্রসর হইতে থাকে। পুলিশ প্রথম দিকে উক্ত শোভাযাত্রাকে কোনরূপ বাধা প্রদান করে নাই। ছাত্র ও নাগরিকদের এই শোভাযাত্রীদের মধ্যে কোনরূপ উদ্ধৃংখলতা দেখা যায় নাই। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবীতে এবং পুলিশের গুলীবর্ষণের বিরুদ্ধে নানারূপ ধ্বনি করিতে করিতে শোভাযাত্রাকারীগণ হাইকোর্টের সম্মুখে উপস্থিত হইরে সেখানকার প্রহরারত সৈন্যবাহিনী তাহাদিগকে বাধা প্রদান করে।

 এই শোভাযাত্রার সহিত বহু সরকারী কর্মচারীকেও অংশ গ্রহন করিতে দেখা যায়। হাইকোর্টের নিকট পুলিশ ও সামরিক বাহিনী শোভাযাত্রার পর লাঠি ও গুলী চালায় এবং তাড়া করিয়া হাইকোর্টের ভিতর লইয়া যায়। এখানে কয়েকজন গুরুতররূপে আঘাত পান। ইহা সত্ত্বেও শোভাযাত্রাটি শান্তিপূর্ণভাবে নওয়াবপুরের দিকে যাইবার চেষ্টা করে এবং শোভাযাত্রাটি সম্মুখভাগ ফজলুল হক হলের পাশ্ববর্তী রাস্তা ধরিয়া বেশ কিছুটা অগ্রসর হয় এই সময় পুলিশ বাহিনী তাহাদিগকে দৃঢ়তার সহিত বাধা প্রদান করে।

 শোভাযাত্রাটির সম্মুখভাগে নিহত ও আহতদের রক্তমাখা জামা-কাপড় ইত্যাদি দেখান হইতেছিল। শোভাযাত্রাটি প্রতিকারের দাবীসূচক ধ্বনি করিতে করিতে নওয়াবপুর রোড় দরিয়া সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ছাত্রগণ কর্তৃক আহত গায়েবানা জানাজায় যোগদানের জন্য অগ্রসর হইতে থাকে। পথে রায়সাহেব বাজারের নিকটস্থ মসজিদে বহুসংখ্যক নাগরিককে শহীদদের গায়েবানা জানাজা সমাপনের জন্য জমায়েত হইতে দেখা যায়।

 গতকল্যকার ঘটনার বিশেষত্ব হইল এই যে, সৈন্যগণকে অনেকক্ষেত্রে সঙ্গীনের খোঁচার বিক্ষোভকারীগনকে যালে করিতেও দেখা যায়। রাস্তার মোড়ে দলে দলে সৈন্য ও পুলিশ মোতায়েন থাকিতে দেখা যায়। পরিষদ ভবনের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে সৈন্যগণকে দুইটি মেশিনগান পাতিয়া বসিয়া থাকিতে এব অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র লইয়া ঘোরাফেরা করিতে দেখা যায়। একদল সৈন্যকে একটি মেশিনগান, কতকগুলি করিয়া টমিগান, ব্রেনগান ও বেয়নেটসহ রাইফেল লইয়া মেডিক্যার কলেজ হাসপাতালের সম্মুখে টহল দিতে দেখা যায়।

 শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের নিদর্শন স্বরূপ শহরের প্রতিটি ছাত্রাবাসে, এমনকি কোন কোন গৃহেও পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং শহরবাসী কালোব্যাজ পরিধান করেন।

নওয়াবপুর রোডের ঘটনা

 গতকল্য সকার হইতেই শহরের প্রদান রাস্তা নওয়াবপুরের উপর লোকের ভীড় জমিতে থাকে। মোড়ে মোড়ে জনসমাগম হয় নওয়াবপুর রোডে যান চলাচলে বাধা দেওয়া হয়।