পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৬৮৩

 পূর্বাহ্নে জনাব আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, জনাব...হোসেন ও আলী আহমদ পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনটি মুলতবী প্রস্তাব উস্থাপনের চেষ্টা করেন কিন্তু পরিষদ উহার অনুমতি দেন নাই।

 আগামী সোমবার বেলা ৩-৩০ মিঃ পর্যন্ত পরিষদের অধিবেশন মুলতবী আছে।

 প্রস্তাব পাশ করিয়া জনাব নুরুল আমীন বলেন যে, বৃহস্পতিবার সরকার যে ব্যবস্থা অবলম্বন করেন, তাহা রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কিত দাবীর বিরোধী বলিয়া মনে করায় নানারূপ ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি হইয়াছে।

 তিনি বলেন যে, সেরূপ বিরোধিতা করার ইচ্ছা সরকারের নাই। শহরে ১৪৪ ধারা জারীর কারণ ব্যাখ্যা করিয়া তিনি বলেনঃ সরকার জানিতে পারিয়াছে যে, কোনও কোনও লোক শহরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে অচল করিয়া ফেলিতে চায়। তিনি বলেন যে, পূর্ববর্তী অন্যান্য সময়ে ছাত্ররা যখন মিছিল বাহির করে সরকার তখন উহাতে হস্তক্ষেপ করেন নাই। তিনি বলেন যে, উদ্দেশ্য যতই মহৎ এবং বাঞ্চনীয় হউক না কেন, যাহাতে শান্তি ও শৃঙ্খলা ভংগ না হয় তৎপ্রতি সরকারকে দৃষ্টি রাখিতে হইবে।

 স্বাস্থ্য সচিব জনাব হাবিবুল্লাবাহার এবং জনাব সরফউদ্দিন আহমদ জনাব নুরুল আমীনের বিষেশ প্রস্তাবটি সমর্থন করেন। জনাব আহমদ বলেন যে, প্রস্তাবটি পাশ হইলে বিক্ষোভ প্রশমিত হইবে বলিয়া তিনি আশা করেন।

 মিঃ মনোরঞ্জন ধর তাঁহার সংশোধনীতে বলেন যে, গণপরিষদের পূর্ব পাকিস্তানী সদস্যগণকে সমস্যাটি সম্পর্কে চাপ দেওয়ার নির্দেশ দিতে হইবে। জনাব শামসুদ্দীন আহমদের সংশোধনীতে বলা হয় যে, গণপরিষদ সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করিলে পূর্ব পাকিস্তানী সদস্যগণকে পদত্যাগ করিতে বলিতে হইবে।

 মিসেস আনোয়ারা খাতুনও একটি সংশোধনী পেশ করেন। তাঁহার সংশোধনীতে বলা হয় যে গণপরিষদকে ইহার পরবর্তী অধিবেশনেই সুপারিশ গ্রহণ করিতে বলিতে হইবে।...

 মিঃ ধরের সংশোধনী সমর্থন করিয়া বিরোধীদলের নেতা মিঃ বসন্তকুমার দাস বলেন যে, ভাষা আন্দোলনকে দমন করিবার জন্যই ১৪৪ ধারা জারী করা হইয়াছে।

পরিষদ হইতে আজাদ সম্পাদকের পদত্যাগ

 “আজাদ” পত্রিকার সম্পাদক জনাব আবুল কালাম শামসুদ্দিন অদ্য পূর্ব-পাক পরিষদের সদস্যপদে এস্তেফা দিয়াছেন।

 গভর্ণর ও পরিষদের স্পীকারের নিকট প্রেরিত এক আবেদনে তিনি বলিয়াছেনঃ বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবী করায় ছাত্রদের উপর পুলিশ যে বর্বরতার পরিচয় দিয়াছে তাহার প্রতিবাদে আমি পরিষদে আমরা সদস্যপদ হইতে পদত্যাগ করিতেছি। যে নুরুল আমীন সরকারের আমিও একজন সমর্থক-এ ব্যাপারে তাহাদের ভূমিকা এতদর লজ্জাজনক যে, ক্ষমতায় অধিষ্টিত এই দলের সহিত সংযুক্ত থাকিবে এবং পরিষদের সদস্য হিসাবে বহাল থাকিতে আমি লজ্জাবোধ করিতেছি।

বার এসোসিয়েশনের সভায় নিন্দা

 গতকল্য (শুক্রবার) ঢাকা বার লাইব্রেরী হলে জনাব আবদুল লতিফ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ঢাকা বার এসোসিয়েশনের সদস্যদের সভায় নিমেণাক্ত প্রস্তাবগুলি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

 (ক) গত ২১শে ফেব্রুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ প্রাঙ্গণে পুলিশের অমানুষিক ও বর্বরোচিত গুলীবর্ষণ দ্বারা শত শত নিরস্ত্র ও নিপরাধ ছাত্রকে হত্যা ও আহত করার তীব্র নিন্দা এই সভা করিতেছে।