পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খন্ড
৭২১

 ১৯৫৫-৫৬ সালের শেষ হিসাবে পূর্ব পাকিস্তানের একাউণ্টেণ্ট জেনারেলের নিকট হইতে এখনও পাওয়া যায় নাই। ঐ বৎসরের প্রাথমিক হিসাবে দেখা যাযে, ১৯৫৫-৫৬ সালের রাজস্ব খাতে আদায় হয় মোট ২১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। এই সকল সংখ্যার পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা আছে; কারণ দেখা যায় প্রারম্ভিক হিসাবে কোন কোন কেন্দ্রীয় ট্যাক্সর প্রাদেশিক সরকারের হিস্যা ও কেন্দ্রীয় সরকারের কতিপয় মঞ্জুরীকৃত সাহায্যে সম্পূর্ণভাবে ধরা হয় নাই। গত বৎসরের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ২৫ কোটি টাকার উপরে দাঁড়াইবে বলিয়া মনে হয়। ১৯৫৫-৫৬ সালে পূর্ব সালের তুলনায় এই বৎসরে আয় বৃদ্ধির প্রধান কারণ ভূমি রাজস্ব। উল্লেখযোগ্য যে, ১৯৫০-৫১ সালে পূর্ব পাকিস্তান জমিদারী দখল ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হয় এবং ইহাতে প্রদেশের সমস্ত খাজনা আদায়কারী স্বত্ব দখলের বিধান করা হয়। গত ছয় বৎসরে এই আইন পুরোপুরিভাবে কার্যকরী করা হয় নাই। বর্তমান আর্থিক সারের সমস্ত খাজনা আদায়কারী স্বত্ব দখলের কর্মসূচী সম্পূর্ণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হইয়াছে। এই কার্যসূচিতে দখলকৃত জমিদারী হইতে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাইবে বলিয়া আশা করা যায়। পাট রফতানী শুল্কের হিস্যা বাবদ ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা বৃদ্ধির আশা করা যাইতে পারে এবং বিক্রয় করের হিস্যা বাবদ আরও ৩৫ লক্ষ টাকা বৃদ্ধি পাইবে বলিয়া ধরা যাইতে পারে। জমিদারী দখল করার দরুন “ষ্ট্যাম্প” খাতে ৪০ লক্ষ টাকা এবং কৃষি “আয়-কর” বাবদ ৫০ লক্ষ টাকা ঘাটতি হইবে।

 ব্যায়ের খাতে যদিও আইন পরিষদকে ১৯৫৬ সালের ১লা অক্টোবর হইতে ১৯৫৭ সালের ৩১ শে মার্চ পর্যন্ত ৬ মাসের হিসাব বিবেচনা করিতে হইবে, তথাপি তুলনা করিয়া দেখার সুবিধার্থে গোটা বৎসরের হিসাবই আলোচনা করা হইতেছে। মার্চের প্রাথমিক হিসাবে ১৯৫৫-৫৬ সালের রাজস্ব ব্যয় ২৬ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, তদস্থলে ১৯৫৬-৫৭ সালের বাজেট বাবাদ ৩২ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। বিভিন্ন খাতে প্রধান প্রধান বিষয়ে হিসাবের বিসত্ত্বত বিবরণ পরে দেওয়া হইবে। যে সকল উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য রাজস্ব খাত হইতে ব্যয় করা হয়। উহাদের জন্য ২ কোটি টাকা বেশী বরাদ্দ করা হইয়াছে। সিভিল ওয়ার্কসে ৯৭ লক্ষ টাকা বাড়িয়াছে। বস্তুতঃ প্রায় সমস্ত জাতীয় উন্নয়নমূলক কাজেই বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হইয়াছে। রাজস্ব খাতে মোট ২৫ লক্ষ টাকা ঘাটতি দাঁড়াইবে। জনকল্যাণমূলক কার্যের চাহিদা মিটাইতে আরও অধিক অর্থের প্রয়োজন। কিভাবে রাজস্ব খাতে আয় বৃদ্ধি করা যায়, মন্ত্রীসভা সেই বিষয়ে বিবেচনা করিতেছেন। আবশ্যক হইলে নতুন করা ধার্য করিয়া জাতীয় গঠনমূলক কার্যের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হইবে। এই সম্বন্ধে প্রয়োজনীয় বিল পরিষদের আগামী অধিবেশনে পেশ করা হইবে।

 গত বৎসরের মূলধন খাতে খরচ হইয়াছিল ২ কোটি ৭ লক্ষ টাকা, অথচ এই বৎসর আমরা ঐ খাতে বরাদ্দ কারিয়াছি ২১ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা। গঙ্গা-কপোতাক্ষ পরিকল্পনা, কর্ণফুলী পরিকল্পনা, বৈদ্যুতিক পরিকল্পনা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা ইত্যাদি দেশের ভবিষ্যত উন্নয়নমূলক পরিকল্পনাগুলি বাবদ ব্যয় মূলধন খাত হইতে বরাদ্দ করা হইয়া থাকে। এখানে উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, গত কয়েক বৎসরের মূলধন খাতে গড়পড়তা ব্যয় ছিল বার্ষিক ৫ কোটি টাকার মত। ১৯৫৬-৫৭ সারের বাজেটে ২১ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হইয়াছে। বিশেষ বিশেষ উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা কাজ ত্বরান্বিত করিয়া সাধারণ লোকের জীবনযাত্রার মান দ্রুত উন্নয়ন করাই সরকারের লক্ষ্য এবং এই উদ্দেশ্যেই বেশীর ভাগ ব্যয় বরাদ্দ করা হইয়াছে।

 সরকারের গৃহীত ঋণ রাষ্ট্রীয় প্রভিডেণ্ট ফাণ্ড, বিভিন্ন প্রকারের ডিপোজিট ও এ্যাডভান্স, যথা-সিভিল, রেভিনিউ এবং ক্রিমিনাল কোর্ট ডিপোজিট, ডিপোজিট অব লোকাল বডিজ ইত্যাদি ঋণ খাতে হিসাব দেখানো হয়।

 চলতি বৎসরের বাজেটের কতিপয় গুরুত্বপুর্ণ বিষয় নিমেণ বর্ণনা করা হইতেছেঃ

ভূমি রাজস্ব

 ভূমি রাজস্ব খাতে ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা ব্যয় বরাদ্দ করা হইয়াছে। বাজেটের বৈশিষ্ট্য এই যে, প্রদেশের সমস্ত খাজনা আদাযকারী স্বত্ব দখলের ব্যবস্থা করা হইয়াছে। ১৯৫০ সালের পূর্ব পাকিস্তান জমিদারী দখল ও