পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খন্ড
৭৫৭

 আমাদের পশ্চিম পাকিস্তানের কৃষক ভাইদের অবস্থা পূর্ব পাকিস্তানের কৃষকদের চাইতে উন্নত তো নয়ই, বরঞ্চ বহু ক্ষেত্রে তাহাদের দুরবস্থা আরো বেশী। সেখানে মুসলিম লীগ ও রিপাবলিকান সরকার কৃষকদের প্রতি চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছে। তাই প্রাক্তন সিন্ধুর বিশ লক্ষ হারী (ভূমিহীন কৃষক) আজও জায়গীরদার জমিদারদের অধীনে গোলামের জীবন যাপন করিতেছে। এবং প্রাক্তন পাঞ্জাবের লাখ লাখ মজলুম কৃষক বর্বর বাটাই ও বেগারী প্রথার চাপে নিষ্পেষিত হইতেছে। পক্ষান্তরে মুষ্টিমেয় তিওয়ানা, মালিক, খিজির, মিয়া, নুন প্রভৃতি জমিদার জায়গীরদার পরিবার পশ্চিম পাকিস্তানের অধিকাংশ জমি দখল করিয়া ভোগবিলাস করিতেছে।

 মোট কথা, ইহা অবিসম্বাদিত সত্য যে আজ হইতে দশ বৎসর পূর্বে স্বাধীন পাকিস্তান কায়েম হইলেও, পাকিস্তানের জনসাধারণের যারা শতকরা ৮৫ জন সেই কৃষক সমাজ স্বাধীনতার কোন আস্বাদন পায় নাই। তাহারা আজও ভূখা। অনাহারে কৃষকদের পেট আর পিঠ আজ এক হইয়া গিয়াছে।

বন্ধুগণ!

 পাকিস্তান মধ্যবিত্তের অবস্থা কৃষকের চেয়ে বেশী ভাল নয়। খাদ্য মূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি অগ্নিমূল্য এবং দেশের এক অনিশ্চিত পরিস্থিতি আজ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জীবন দুর্বিষহ করিয়া তুলিয়াচে। সরকারই এরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করিয়াছে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর হইতে তাহারা এমন একটি অর্থনীতি অনুসরণ করিলেন যার ফলে দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা সৃষ্টি না হইয়া এক অস্বাভাবিক অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিল। অবস্থা আজ আয়ত্তের বাহিরে বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। ফলে দেশের প্রতিটি মানুষের সঙ্গে সঙ্গে মধ্যবিত্ত সমাজের আর্থিক মেরুদণ্ডও ভাঙ্গিয়া পড়িতেছে। এরূপ পরিস্থিতি ঠেকাইবার কোন পরিকল্পনা বর্তমান সরকারের নেই। ফলে দেশের মধ্যবিত্ত সমাজের জীবনে আজ বিরাটকায় প্রশ্নবোধক চিহ্ন দেখা দিয়াছে।

শিক্ষা সংকটঃ

 পাকিস্তানের বিশেষ করিয়া পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষা জীবনে মুসলিম লীগ সরকার এক ধ্বংসাত্মক নীতি অনুসরণ করিয়া চলেন। তাদের শাসনকালে সাত বছরে পূর্ব পাকিস্তানের বিদ্যায়তনগুলি হ্রাস পাইয়া অর্ধেক দাঁড়ায়। প্রাইমারী ও মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে মুসলিম লীগ সরকারের শিক্ষা-নীতি আতঙ্কের সৃষ্টি করে। ফলে অনেক শিক্ষক শিক্ষকতা পরিত্যাগ করিয়া অন্য পেশা গ্রহণে বাধ্য হইয়াছেন। গ্রামে বহু স্কুল পাঠশালা গরুর খোঁয়াড় ও ঘোড়ার আস্তাবলে পরিণত হয়। মাসের পর মাস শিক্ষকদের বেতন বকেয়ার খাতায় পড়িয়া থাকে। এইরূপ কয়েক হাজার শিক্ষকের প্রায় এগারো মাসের বেতন বকেয়া রাখিয়া তদানীন্তন অর্থ সচিব জনাব গোলাম মোহাম্মদ দেশবাসীর সামনে পেশ করেন এক তথাকথিত উদ্বৃত্ত বাজেট। আশ্চর্যের বিষয়, দেশবাসী আন্দোলন এবং প্রতিবাদ সত্ত্বেও মুসলিম লীগ সরকার শিক্ষা জীবনে তাদের ধ্বংসাত্মক নীতি চালাইয়া গেলেন।

 লীগ-যুক্তফ্রণ্ট সরকার সে নীতির কোন পরিবর্তন করেন নাই এবং বর্তমান আওয়ামী কোয়ালিশন সরকারও সেই নীতিই অনুসরণ করিতেছেন। সোহরাওয়ার্দী সরকার পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষয়িষ্ণু শিক্ষা ব্যবস্থা উপর চরম আঘাত হানিলেন ৭৭৭১টি প্রাইমারী স্কুল বন্ধ করিবার পরিকল্পনা করিয়া। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী জনাব আতাউর রহমান খান ও শেখ মুজিবুর রহমান প্ল্যানিং কমিশনের সভ্য হিসাবে তাহাতে সম্মতি দিয়াছেন। স্বাধীনতা লাভের পরও দেশবাসীকে শিক্ষার আলোক হইতে বঞ্চিত করিয়া রাখিবার পরিকল্পনাকে ধ্বংসাত্মক কার্য্য ছাড়া আর কি বলা যায়?

শিল্পোন্নয়ন:
বন্ধুগণ!

 সদ্য আজাদীপ্রাপ্ত একটি দেশের বিশেষ করিয়া পাকিস্তানের মত একটি অনুন্নত দেশে অর্থনীতর উন্নয়ন নির্ভর করে শিল্প প্রতিষ্ঠায়। খোদাতায়ালা আমাদিগকে প্রচুর সম্পদ দিয়াছেন। কাজেই সরকার পক্ষের যদি