পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খন্ড
৭৬০
ব্যক্তি-স্বাধীনতা:

 মুসলিম লীগ সরকার, কৃষক-শ্রমিক পার্টি ও নেজামে ইসলাম আমাদের দেশের ব্যক্তি-স্বাধীনতাকে বিপর্যন্ত করিয়া গিয়াছিল। আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন সরকার প্রথম দিকে রাজবন্দীদের মুক্তি এবং নিরাপত্তা আইন বাতিল করিয়া দিয়া হৃত ব্যক্তিস্বাধীনতা পুনরূদ্ধার করিতে সচেষ্ট হন। তজ্জন্য দেশবাসী তাঁহাদিগকে অসংখ্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

 কিন্তু সোহরাওয়ার্দী সরকার অর্ডিন্যান্স দ্বারা কেন্দ্রীয় কালাকানুন পুনরায় প্রয়োগ করিয়াছেন। পাকিস্তানের নাগরিকদের পাসপোর্ট ইত্যাদি কাড়িয়া লইয়া এবং ব্যক্তিগত চিঠিপত্র আটক করিয়া মৌলিক নাগরিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করিতেছেন। এ কারণে গণতন্ত্রকামীদের দায়িত্ব শত গুণে বৃদ্ধি পাইয়াছে। ব্যক্তিস্বাধীনতা আজ তাঁদের কায়েম রাখিতেই হইবে। এজন্য যে কোন মূল্য দিতে হইলেও তাকে করিতে হইবে।

স্বায়ত্তশাসনঃ

 এবার আমি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নটি জনসাধারণের সামনে তুলিয়া ধরিতে চাই। পাকিস্তানের যে বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থানহেতু আমরা ২১-দফা কর্মসূচীতে এই প্রদেশের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দাবী করিয়াছিলাম এই দাবী পূর্ব পাকিস্তানের সমস্ত শ্রেণীর জনসাধারণের অকুণ্ঠ দাবী। আমাদের এই দাবী আজও পূরণ হয় নাই। আজও শিল্প, বাণিজ্য আবগারী প্রভৃতি বহুবিধ বিষয়ের পূর্ণ দায়িত্ব প্রদেশের নিকট দেওয়া হয় নাই। অথচ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেতা জনাব শহীদ সোহরাওয়ার্দী বলিতেছেন যে পূর্ব পাকিস্তানকে না-কি শতকরা ৯৮ ভোগ স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হইয়াছে। ১৯৫৫ সনে শাসনতান্ত্রিক কনভেনশন নিয়া দেশে বিতর্কের সময়ে জনাব শহীদ সোহরাওয়ার্দী নিজে হাতে লিখিয়া দিয়াছিলেন যে, মন্ত্রিত্বে থাকাকালে তিনি ২১-দফা মোতাবেক পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের জন্য প্রচেষ্টা করিবেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসিয়া শহীদ সাহেব কি তাঁহার নিজ হাতে লিখিত সেই দায়িত্বের কথা ভুলিয়া গিয়াছেন?

 এই প্রসঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলা প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ কাউন্সিলের ১৯৫৫ সনের অক্টোবর মাসের অধিবেশনে এক প্রস্তাবে পশ্চিম পাকিস্তানে জবরদস্তিমূলকভাবে এক ইউনিট গঠনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান হয় এবং ঘোষণা করা হয়।

 “যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যায় এবং যখনই যাইবে তখনই ইহা সমগ্র পশ্চিম পাকিস্তানের জনমত সংগ্রহ করিয়া এবং জনসাধারণে মতামতের পূর্ণ স্বীকৃতি দিয়া এক ইউনিট পুনর্বিচেনা করিবেন।” এই প্রস্তাব এখানো বলবৎ আছে এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসিয়াছে আজ দশ মাস। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানে জনমত সংগ্রহের কোন প্রচেষ্টা করা হয় নাই। হওয়ার কোন লক্ষণও নাই।

 আমাদের স্বায়ত্তশাসনের দাবীর প্রতি মুসলিম লীগ, কৃষক-শ্রমিক পার্টি ও নেজামে ইসলাম চূড়ান্ত উপেক্ষ প্রদর্শন করিয়াছে। সেজন্য দেশবাসী তাহাদিগকে ক্ষমা করে নাই। আমাদের সেই স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন সরকারও আজ উপেক্ষা প্রদর্শন করিতেছে। দেশবাসী উহা বরদাশত করবেন কি?

 প্রসঙ্গত উল্লেখ করিতে চাই যে, পূর্ব পাকিস্তানের জন্য স্বায়ত্তশাসন দাবীর অর্থ পশ্চিম পাকিস্তানের জন্যও স্বায়ত্তশাসন আমরা চাই পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের স্বেচ্ছাপ্রণোদিত মিলিত শক্তিতে কেন্দ্রীয় সরকার শক্তিশালী হউক।