পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খন্ড
৭৬২

গরিগণিত হইবে এবং কূটনৈতিক মিশনের ডিরেক্টরের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকিবেন। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের নির্দেশে পাকিস্তান সরকার উচ্চপদস্থ মার্কিনী, বিমান ও স্থল বাহিনীর অফিসারদিগকে কূটনৈতিক মর্যাদা দান করিবেন।”

 এই শর্ত অনুযায়ী পাকিস্তানে আগত আমেরিকার অফিসারগণ আমেরিকা হইতে প্রাপ্ত দ্রব্যাদির ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করায় যে “কর্তৃত্ব ও সবাধ সুযোগ” লাভ করিলেন, উহার ফলে স্বাভাবতই আমাদের সেনাবাহিনীর উপর তাহাদের প্রভাব বিস্তার হইতেছে। আমাদের দেশে ঐ বিদেশী অফিসাররা হইলেন, ‘স্বাধীন’! কারণ তাহারা আমাদের দেশে থাকিয়া “যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দায়িত্ব পালন করিবেন”; “কূটনৈতিক মর্যাদা” ভোগ করিবেন এবং তাহাদের উপর আমাদের দেশের সরকারের কোন এক্তিয়ার থাকিবে না। এমনকি তাহারা সাধারণ অপরাধ করিলেও আমাদের কোর্ট তাহাদের বিচার করিতে পারিবে না। জনাব শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও কেন্দ্রীয় সরকারকে আমি জিজ্ঞাসা করিতে যে পাক- মার্কিন সামরিক সাহায্য চুক্তির ঐ শর্তের ফলে যে প্রভাব বিস্তার হইতেছে তাহাতে কি আমাদের সেনাবাহিনীর স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হইতেছে না? ইহাই কি আমাদের দেশরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার নমুনা? আর আমাদের সেনাবাহিনীর সার্বভৌমত্বই যদি ক্ষুণ্ণ হয়; তাহা হইলে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব থাকিবে কি?

 কিছুদিন পূর্বে কেন্দ্রীয় সরকার আমেরিকার ডলার সাহায্য ও অন্যান্য বৈদেশিক আর্থিক সাহায্য সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করিয়াছেন, তাহাতে দেখা যায় যে, আমেরিকার সহিত আর্থিক সাহায্যের যতগুলি চুক্তি আমাদের সরকার অনুষ্ঠান করিয়াছেন তাহারা প্রত্যেকটিতেই শর্ত আছে যে, ঐ ডলার সাহায্যের ব্যবহার তদারক প্রভৃতির জন্য আমেরিকার যেসব অফিসার আমাদের দেশে আসিবেন তাহারা সবাই “যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কর্মচারী” বলিয়া গণ হইবেন এবং কূটনৈতিক মর্যাদা ও সুবিধা ভোগ করিবেন তাহাদের উপর আমাদের সরকারের এক্তিয়ার খাটিবে না।

 অর্থাৎ আমেরিকার ডলার সাহায্যের সাথে সাথে আমাদের দেশে যে শত শত আমেরিকান অফিসার আসিতেছেন, তাহাদের সমবায়ে প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশে একটি ‘স্বাধীন’ সংগঠন গড়িয়া উঠিতেছে, যে সংগঠন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিকট দায়ী। ইহার দ্বারা আমাদের রাষ্ট্রের মধ্যে অন্য একটি রাষ্ট্রের কি সৃষ্টি হইতেছে না? ইহার পরিণাম দেশবাসীই বিচার করবেন।

 পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তির আরও একটি শর্তে পঞ্চম পরিচ্ছেদের ২(ক) অনুচ্ছেদে বলা হইয়াছে;

 “পারস্পরিক সাহায্যের নীতি অনুসারে পাকিস্তান সরকার যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজনে এমন সব কাঁচা মাল বা আংশিকভাবে নির্মিত দ্রব্যাদির উৎপাদন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি বা যুক্তরাষ্ট্রের নিকট হস্তান্তর করিবেন যাহা পাকিস্তানে প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন করা সম্ভব।”

 জনাব শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট আমি আবার জিজ্ঞাসা করিতেছি যে, চুক্তির ঐ শর্ত দ্বারা কি আমাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বিনষ্ট হইতেছে না এবং আমাদের অর্থনীতির উপর আমেরিকার আধিপত্য বিস্তার হইতেছে না? কেন্দ্রীয় সরকারের সম্মুখে আমি কেন্দ্রীয় অর্থ সচিব জনাব আমজাদ আলীকে সাক্ষ্য হিসেবেও উপস্থিত করিতেছি। কিছুদিন পূর্বে (গত মে মাসের শেষ ভাগে) পেশোয়ারে ও করাচীতে দুইটি বক্তৃতায় জনাব আজমাদ আলী বলিয়াছেন যে, আমাদের অর্থনীতি দ্রুত আমেরিকার উপর নির্ভরশীল হইয়া পড়িতেছে এবং তজ্জন্য ভাংগিয়া পড়িতেছে। অর্থ সচিবের এই মন্তব্য সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য কি?

 ১৯৫৪ সনের প্রথমভাগে পাক-মার্কিন সামরিক সাহায্যচুক্তি অনুষ্ঠানের সময়ে পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের নব নির্বাচিত ১৬৭ জন সদস্য এক প্রকাশ্য বিবৃতিতে ঐ চুক্তি সম্পর্কে বলিয়াছিলেন,