পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

75 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম ংবাপত্র তারিখ সম্পাদকীয় জয় বাংলা ১৫ অক্টোবর, ১৯৭১ (0) যুদ্ধক্ষেত্রেই সমাধান নিহিত ১ম বর্ষ, ২৩শ সংখ্যা (0) জঙ্গীশাহীর সামরিক পাঁয়তারা সম্পাদকীয় যুদ্ধক্ষেত্রেই সমাধান নিহিত বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের কথা বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়কদের মুখে প্রায়ই শোনা যায়। মুক্তি সংগ্রামের আশু লক্ষ্যও হচ্ছে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব অর্থাৎ জনগণের জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু সেই রাজনৈকি সমাধানের লক্ষ্যে পৌছানো যাবে কোন পথে? সশস্ত্র সংগ্রামের দ্বারা চূড়ান্ত বিজয়ের পথে, না আলাপ আলোচনার পথে? স্বাভাবতই যাঁরা রাজনৈতিক সমাধানের কথা বলেন, তাঁরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে অর্থাৎ আলাপ আলোচনার পথে সমাধানের কথাই বোঝাতে চান। কিন্তু বাং র মানুষ ও বাংলাদেশের জাতীয় নেতৃবৃন্দ ১৯৬৯ সালের গোল টেবিল বৈঠক থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পর্যন্ত এই শান্তিপূর্ণ উপায়ও আলাপ আলোচনার পথই অনুসরণ করেছিলেন। পাকিস্তানী জঙ্গশাহীই পথ বন্ধ করে বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। ফলে অস্ত্রের ভাষায় জবাব দেয়া ছাড়া বাংলাদেশের জনগণ ও নির্বাচিত জাতীয় নেতৃত্বের কাছে আর কোন বিকল্প পথ খোলা থাকেনি। এরই ফলে জন্ম নিয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী। সামরিক জান্তা একটা ভাষাই বোঝে। সে ভাষা অস্ত্রের ভাষা। তাই সেই ভাষাতেই তাদের জবাব দেয়া হচ্ছে। সামরিক জান্তা তখনই রাজনৈতিক সমাধানের জন্যে পথে আসতে বাধ্য হবে, যখন তাদের অস্ত্রের ভাষা ফুরিয়ে যাবে। যদি রাজনৈতিক ও সামরিক উদ্যোগ তাদের আয়ত্তে থাকে তাহলে কেন তারা নিজেদের বাড়া ভাতে ছাই দেবে? শক্তের ভক্ত নরমের যম বলে এদেশে যে প্রবাদটি চালু আছে, অনেকের বেলায় যদি নাও খাটে, সামরিক জান্তার বেলায় তা অবশ্যই খাটে। কাজেই সামরিক জান্তাকে রাজনৈতিক সমাধানের পথে আসতে বাধ্য করার জন্যেও আমাদেরকে পাক হানাদার বাহিনীর ওপর আঘাতের পর আঘাত হানতেই হবে। এটা আমরা ভাল করেই বুঝি। তাই রাজনৈতিক সমাধানের শিখভী দাড় করিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষকে নিবৃত্ত বা বিভ্রান্ত করা যাবে না। আমাদের নিজস্ব প্রতিনিধির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদও তাই মন্তব্য করেছেন, “যুদ্ধক্ষেত্রেই বাংলাদেশ প্রশ্নের সমাধান নিহিত।” বিশ্বের প্রতিটি গণতন্ত্রকামী ও মানবতাবাদী শক্তি এবং রাজনৈতিক সমাধানে বিশ্বাসী নেতৃবৃন্দ এই সত্যটি যত শীঘ্ৰ উপলব্দি করেন, সমস্যার সমাধানও তত তুরান্বিত হবে।