পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

92 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরনাম সংবাপত্র তারিখ আমাদের প্রধান সেনাপতিঃ জেনারেল স্বদেশ ১ জুলাই, ১৯৭১ ওসমানী ১ম বর্ষ, ২য় সংখ্যা আমাদের প্রধান সেনাপতিঃ জেনারেল ওসমানী বাংলাদেশ বাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল মুহম্মদ আতাউল গণী ওসমানীর নাম আজ বাংলার ঘরে ঘরে গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে। আত্মত্যাগ ও নিষ্ঠা এবং সর্বোপরি দৃপ্ত ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের জন্য বাংলার এই চিরকুমার প্রধান সেনাপতি সকলের কাছে সুপরিচিত। আজ তিনি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরোভাগে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর সবল নেতৃত্বে হাজার হাজার বাঙালী এগিয়ে চলেছে জয়যাত্রার পথে, নব জনগণবাংলার নতুন উষার পথে। জাতিগত অধিকার এবং গণস্বাৰ্থ আদায়ের জন্য যে সজাগ দৃষ্টি এবং সংগ্রামী মানসিকতার প্রয়োজন, বাঙ্গালীদের মধ্যে সেই উপলব্ধিকে জোরদার করার জন্য জেনারেল ওসমানী অক্লান্ত পরিশ্রম করে যান তাঁর কর্মজীবনের প্রথম থেকেই। ১৯৫১ সালের শেষের দিকে জেনারেল ওসমানী কর্তৃক ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়কত্ব গ্রহণ করার পর থেকে রেজিমেন্টের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা হয়। বাঙালীদের সামরিক বাহিনীতে না নেয়ার জন্য বাঙালীবিদ্বেষ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মহল ‘বাঙালীরা সামরিক জাতি নয় এই মর্মে যে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিল সেটাকে প্রতিরোধ করার জন্য তিনি প্রাণপন ঢেলে দেন ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সর্বাত্মক উন্নতি সাধন ও মান উন্নয়নের জন্য। কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সকল রকমের বিঘ্ন সৃষ্টি করা সত্ত্বেও তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই রেজিমেন্টকে একটি সংগ্রামী যোদ্ধাদল হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন যার ফলে যুদ্ধকৌশল এবং বীরত্বের দিক থেকে ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট পাকিস্তানের বেলুচ এবং পাঞ্জাব ইত্যাদি সকল দলের মধ্যে নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ প্রতীয়মান করে। এই ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এক রকম বলতে গেলে, জেনারেল ওসমানীর নিজের হাতে গড়া। তারই প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ বেঙ্গল রেজিমেন্ট পাকিস্তানে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে। তারই প্রতিফল আমরা দেখি ১৯৬৫ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের লাহোর রণাঙ্গনে। সেই যুদ্ধে বীর বিক্রমে লড়াই করে লাহোরকে রক্ষা করে এই বাঙালীরাই। বাঙালীদের সম্পর্কে পাঞ্জাবী চক্রের মিথ্যা প্রচারণার অবসান ঘটানো এবং সেনাবাহিনীতে বাঙালীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জেনারেল ওসমানী থাকতেন সকলের পুরোভাগে। এই জন্য তিনি পাকিস্তান সামরিক চক্রের বিরাগভাজন হন। সামরিক শিক্ষা ও কর্মদক্ষতার দিক থেকে তাঁর সমকক্ষ সেনাপতি কেউ নেই, তবু তাঁর পদোন্নতি বন্ধ করে দেয়া হয়। এখানে উল্লেযোগ্য যে তদানীন্তন ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে জেনারেল ওসমানীই সর্বকনিষ্ট মেজর হিসাবে নিযুক্ত হন। বাঙালী অফিসারদের সবসময়ই পাকিস্তানে দাবিয়ে রাখা হয়। তিনি নিজের ভবিষ্যৎ এবং কর্তৃপক্ষ থেকে সম্ভাব্য সকল রকম বিপদ উপেক্ষা করে এইসব বাঙালীদের উন্নতির জন্য লড়াই করে গেছেন। আর বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষের প্রতি ভালবাসা এবং তাদের হয়ে সংগ্রাম করার কারণে তাঁকে সামরিক কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বিভিন্নভাবে পর্যুদস্ত হতে হয়। সাধারণ সৈনিকদের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম স্নেহ এবং বাংলার মানুষ তথা বাংলার ভাষার প্রতি তাঁর ভালবাসার প্রমাণ নিম্নোক্ত দুটি ঘটনা থেকেই মেলে। সামরিক বাহিনীতে উধ্বতন অফিসারদের কাছে সুবেদার মেজরদের