পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

95 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাপত্র তারিখ লণ্ডনের চিঠিঃ স্বদেশ ১ জুলাই, ১৯৭১ ১ম বর্ষঃ ২য় সংখ্যা লণ্ডনের চিঠি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিয়ে রাজনৈতিক সমাধান জলের উপর আলপনা কাটার নামান্তর (মাহমুদ হোসেন প্রদত্ত) পাকিস্তান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বিশিষ্ট ইংরেজী দৈনিক মর্নিং নিউজের করাচী সংস্কণের অন্যতম সহকারী সম্পাদক মিঃ এ্যান্টনী মাসকারেনহাস সম্প্রতি পাকিস্তান থেকে সপরিবারে এখানে চলে এসে সানডে টাইমস পত্রিকায় বাংলাদেশের হত্যাযষ্ণ সম্পর্কে যে বিস্তারিত বিবরণী দিয়েছেন তাতে থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়েছে। ত্যাগী পাকিস্তানী সাংবাদিক মিঃ মাসকারেনহাস- তোমাকে জানাই অভিনন্দন। কালজয়ী নির্ভীক সাংবাদিক বন্ধু মিঃ মাসকারেনহাস প্রদত্ত সানডে টাইমসের সেই ষ্টোরি পাকিস্তানী কাগজ ছাপবে না এ জানি। কিন্তু সকল দেশের স্বাধীন পত্র-পত্রিকা তা ছাপিয়েছে; ভারতীয় পত্র-পত্রিকাও তা ছাপাতে কুষ্ঠিত হয়নি। এখানে বন্ধু মিঃ মাসকারেনহাসের সাথে আমার আলাপ হয়েছেঃ তিনি তার দেশের (পাকিস্তান) অন্যান্য প্রত্যক্ষ করেছেন ধ্বংসলীলা। বিরাট জনপদগুলো দেখে কান্না পেয়েছে তাঁর। এই কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের যে সব জনপদ ছিল প্রাচুর্যে ভরা, হাসি গানে মুখরিত; সে সব জনপদে এখন কবরের নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। অধিকাংশ ঘরবাড়ীতে মানুষ নেই এমন কি নেই জানালা-দরজা। দোকানপাট খা খা করছে। সরকারী অফিসগুলো দরজা খোলা থাকলেও কোন কর্মচারী দেখেননি তিনি যে সব উর্দুভাষী মানুষ তাঁর চোখে পড়েছে তাদের দেহ অনশন ক্লিষ্ট বা রোগাজীর্ণ। আর দেখেছেন অগণিত মানুসের ফসিল। কলকারখানার চাকা বন্ধ, মাঠে মাঠে ফসল নেই, আছে ঘাস ও অন্যান্য তৃণের সমাহার। আর দেখেছেন জলে স্থলে অন্তরীক্ষে শুধু সেনাবাহিনীর অশুভ পদচারণা; যাদের চোখ বাজপাখীর মত সর্বত্র শিকার খুঁজছে। সে শিকারটি কি তা আর বলে দিতে হয় না। যদিও পাকিস্তানের সামরিক জান্তা সরকার সফরকারী সাংবাদিককে পশ্চিম পাকিস্তানের নাগরিক এবং বাংলাদেশে বসবাসকারী উর্দুভাষী বাসিন্দাদের দ্বারা সৃষ্ট কৃত্রিম স্বাভাবিক পরিবেশ দেখানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু তা দিয়ে বিভীষিকাকে ঢাকা যায়নি, যায় না। তবে মাসকারেনহাস আপ্রাণ প্রচেষ্টায় খুব গোপনে এবং সতর্কতার সাথে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সাক্ষাৎ লাভে সমর্থ হয়েছিলেন। তাদের সাথে আলাপ করে তিনি জানতে পেরেছেন কোন আপোষ নয়, বাংলাদেশেকে শত্রমুক্ত না করা পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে। মাসকারেনহাসের মন্তব্যঃ এই তো কথার মত কথা। ভেতো বলে অপবাদ থাকলেও বাঙালীরা সত্যিই বীরের জাত। অধিকার সচেতন বাঙালীরা নিজেদের মৌলিক দাবী প্রতিষ্ঠার প্রশ্নের এ ব্যাপারে কাউকে তোয়াক্কা রাখে না। মাসকারেনহাসের রিপোর্ট বিশ্বে যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, এই বিংশ শতাব্দীর সাংবাদিকতার ইতিহাসে এখানে তা অনুভব করা যায়। এখন আর কিছুই লুক্কায়িত নেই। বাংলাদেশের চলমান ঘটনাবলীর কাছে