পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

107 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় স্বদেশ ২২ জুন, ১৯৭১ ১ম বর্যঃ ৫ম সংখ্যা সম্পাদকীয় বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে লিপ্ত জনগণ আজ পশ্চিমা বর্বর জঙ্গীশাহীর পশু-জনোচিত হামলার হাত থেকে স্বীয় মাতৃভূমির ও লাখো লাখো নর-নারীর মান-ইজ্জত রক্ষার জন্য মরণপণ করে রুখে দাড়িয়েছে। বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত পাক হানাদার বাহিনীকে নির্মুল করার জন্য চলছে খান ভেবেছিল মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ভেঙ্গে দিয়ে যাবে বাঙালীর প্রতিরোধ, তাদের আবদ্ধ করা যাবে চিরদিনের মত গোলামীর শৃঙ্খলে। কিন্তু তাদের সে দুরাশা সম্পূর্নরূপে নসাৎ করে দিয়ে বাংলার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে রেখে ঘোষণা ‘স্বাধীনতা’ গঠিত হল বাংলাদেশ সরকার। স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে লাখো লাখো মুক্তি সংগ্রামীরা নিচ্ছে হানাদার বাহিনীদেরও খতম করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি দিন দিন বাড়ছে মুক্তি বাহিনীর শক্তি। শত্রর কামান চিরতরে স্তব্দ না করা পর্যন্ত থামবে না এ যুদ্ধ। বিশ্বের ইতিহাসে যখনই কোন বিদেশী শক্তি অস্ত্রের জোরে পরের দেশ দখল করেছে তখনই তারা চেষ্টা করেছে সে দেশে শিখন্ডী সরকার খাড়া করার। ইয়াহিয়া-ভুট্রো-টিক্কা খানও সেই মহাজনী পন্থার আশ্রয় নিয়েছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে মধ্যে জনগণের মধ্যে বিবেধ সৃষ্টি করা, তাদের মনোবল নষ্ট করা, চূড়ান্ত বিজয় সম্পর্কে তাদের সফলতা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি ইয়াহিয়া ভুট্রো চক্রেরও হবে না , হতে পারে না। শোষক নিপীড়িত বর্বর এই পশ্চিম পাকিস্তানী চক্র হয়তো ভেবেছে যে, আওয়ামী লীগকে অবৈধ ঘোষণা করেও শিখন্ডীদের তারা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করাবে। তাই তারা আজ দলে ভিড়িয়ে নিয়েছে বাংলার কুলাঙ্গার বিশ্বাসঘাতক ক্ষমতালিন্দু মীরজাফরদেরকে। তাই আমরা, স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই যে সেনারা অধিনায়ক ইয়াহিয়া খানের ক্ষমতা হস্তান্তর বা পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র রচনার সাথে বাংলাদেশের মানুষের কোন সম্পর্ক নেই। বাঙালীরা যখনই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর্যায়ে উপনীত হয়েছে তখনই পেয়েছে বুলেট ও বেয়নেট, রক্তে রঞ্জিত হয়েছে বাংলার জনপদ। ১৯৫০সালে যে প্রবঞ্চনা পেয়েছিলাম তারই পুনরাবৃত্তি দেখতে পাই ১৯৭১ সালে। ব্যবধান মাত্র ১৬টি বৎসরেরঃ তারিমধ্যে বাঙালী জাতি আত্মত্যাগের মহিমায় মহান নেতার আদেশে একতাবদ্ধ। ধোকাবাজি আর প্রবঞ্চনা ধরা পড়েছে আমাদের চোখে। তাই আজ আমরা আমাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য অস্ত্র হাতে নিয়েছি সে প্রবঞ্চনা আর ধোকাবাজির চির অবসান ঘটাতে। ”কাল মৃত্যুঞ্জয়ী কাউকে কোনদিন ক্ষমা করে না, করতে পারে না।” -আমরাও ঠিক সে কালকে সামনে রেখে আমাদের রক্তের প্রতিশোধ রক্তের মাধ্যমেই নেব। স্বাধীনতা আমাদের অক্ষুন্ন থাকবেই। পৃথিবীর মানচিত্রে অন্যমত আদর্শ রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবেই। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ও আদর্শ বাঙালী জাতির জয় সুনিশ্চিত । ”জয় বাংলা’

  • বাংলাদেশঃ সাপ্তাহিক সংবাদপত্র। বাংলাদেশ সম্পাদনা পরিষদের পক্ষে আবুল হাসান চৌধুরী কতৃক সম্পাদিত এবং আব্দুল মমিন কর্তৃক বাংলাদেশ প্রেস, রমনা, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।