পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

124 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম ংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয়ঃ বাংলাদেশ ২২ নভেম্বর, ১৯৭১ শান্তি কমিটি? ১ম বর্যঃ ২২শ সংখ্যা সম্পাদকীয় শান্তি কমিটি? বঙ্গবন্ধু প্রায়ই বলতেন বাংলার সজীব মাটিতে সোনার যেমন ফসল ফলে, তেমনি উর্বরতার সুযোগে আগাছাও গজিয়ে উঠে। বাংলার মাটি সিরাজ, মোহন লালকে জন্ম দিয়েছে, আবার মীরজাফর, উর্মিচাদ জগৎশেঠকেও জন্ম দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর এ কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্য। শান্তি কমিটি নামে বাংলার বুকে যা গড়ে উঠেছে তা কি মীরজাফর আর উর্মিচাদের প্রেতাত্মার বৃথা আস্ফালন নয়? বাঙালী হয়ে বাঙালীর ক্ষতি, পাক হানাদার দুস্যদের তাবেদারী করে স্বদেশদ্রোহিতার নজীরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আমাদের শান্তি কমিটির (?) বন্ধুরা। ২৫শে মার্চের হেলিখেলায় গ্রামবাংলা এমনিতেই মৃত্যুর হিমশীতলতায় ঢলে পড়েছিল। সামরিক চক্রের নিধনযজ্ঞের পর আবার নতুন করে অশান্তির আগুন জ্বালায় এই শান্তি কমিটির অশান্তি ওয়ালারা। এদের আচরনে ও কার্যকলাপে লক্ষ লক্ষ বাঙালী দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। বহু পরিবারকে এরা সর্বহারা করে ছেড়েছে, হানাদার দসু্যদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে, মা বোনদের সতীত্ব নষ্ট করার সুযোগ করে দিয়েছে আর নিজেরা সুযোগ সুবিধামত দলবলসহ বাড়ী বাড়ী হান দিয়ে সর্বস্ব লুট করে নিয়েছে। এরাই করেছে। সেদিনের ছবি আমাদের মন থেকে এখনও মুছে যায়নি। আমরা দেখেছি কত অগনিত পরিবার একান্ত নিরুপায় হয়ে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। আমরা আরও দেখেছি পাক দস্যদের সাথে সহযোগিতা করে এর কত শত ব্যাক্তিকে নিজেদের পারিবারিক বা আর্থিক কলহের শিকারে পরিনত করে ছেড়েছে। লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মানুষ পুত্র, কন্যা, মা, বাপ, ভাই বোনকে ফেলে রেখে প্রাণের ভয়ে রিক্তহস্তে ভারতের মাটির দিকে ছুটে চলে গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রমাগত সাফল্যে হাওয়া বিপরীত বইতে শুরু করেছে; এদের কার্যকলাপও স্তিমিত হয়ে আসছে। সুর অনেকের পাল্টাতে শুরু করছে। এখন অনেকেই ভবিষ্যৎ চিন্তা করে হানাদার কবলিত দেশে এবং মুক্তাঞ্চলে নিজ নিজ পথে প্রাণ বাচানোর তাগিদে দুত পাঠিয়ে যোগাযোগ করবার চেষ্টায় আছেন। আবার অনেকে নাকি এখন মুক্তিবাহিনীর সহযোগীতায় এগিয়ে আসতে অসম্ভব আগ্রহের ভাবও দেখাচ্ছেন। ইতিহাস বলে, যুগে যুগে সুবিধাবাদীরা এবং দেশদ্রোহী লম্পটেরা এমনি করেই তাদের অস্তিত্বকে বজায় রাখতেসচেষ্ট হয়। তাই এবার আমরা জাতির অতি ঘৃনিত এই শত্রদের দিকে সজাগ ও তীক্ষ দৃষ্টি রাখার জন্য আমাদের একান্ত প্রিয়, সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ, বাঙালী জাতীয়তাবোধে অনুপ্রাণিত বাংলার ঐতিহ্যবাহি, ত্যাগ