পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

137 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম - ংবাদপত্র - তারিখ সম্পাদকীয় মুক্তিযুদ্ধ ১৮ জুলাই, ১৯৭১ ইয়াহিয়া চক্রের যড়যন্ত্র ব্যর্থ করুন ১ম বর্ষঃ ২য় সংখ্যা সম্পাদকীয় ইয়াহিয়া চক্রের যড়যন্ত্র ব্যর্থ করুন বাংলাদেশের জনগণ যখনই কোন অধিকারের জন্য সংগ্রাম করিয়াছেন, তখনই পাকিস্তানের গণ-দুশমন শাসকবৃন্দ জনগণের উপর তীব্র দমননীতির সঙ্গে সঙ্গে কতকগুলি সাম্প্রদায়িক জিগির তুলিয়া গণমনে নান বিভ্রান্তির সৃষ্টি করিতে চেষ্টা করিয়াছে। ১৯৫২ সনে মাতৃভাষার মর্যাদার জন্য গৌরবময় গণ সংগ্রামের সময়ে গণ-বিরোধী সরকার একদিকে যেমন ঢাকার রাজপথ বরকত সালাম প্রমুখ শহীদদের রক্তে রঞ্জিত করিয়াছিল তেমনি অন্য দিকে ঐ সংগ্রাম পাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য হিন্দুদের কারসাজি সীমানার অপর পার হতে উসকানির ফল প্রভৃতির জিগির তুলিয়া গণমনে নান প্রকার সংশয় ও সন্দেহ সষ্টি করিতেও প্রয়াস পাইয়াছিল। ১৯৫৪ সনে যখন বাংলাদেশের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের হাতে শাসক মুসলিম লীগের শোচনীয় পরাজয় ঘটিয়াছিল, ১৯৬২ সনে যখন ছাত্র সমাজের মৃত্যু- ভয়হীন সংগ্রামে স্বৈরাচারী আয়ুবশাহীর ভিত কাপিয়া উঠিয়াছিল, ১৯৬৬ সনে, যখন আওয়ামী লীগের ৬ দফার সংগ্রামে ঢাকা নারায়নগঞ্জের হাজার হাজার শ্রমিক ও শহরের গরীব বুক ফুলাইয়া সশস্ত্র পুলিশের বিরুদ্ধে রুখিয়া দাড়াইয়াছিল , ১৯৬৮-১৯৬৯ সনে , যখন বাংলাদেশ ও পশ্চিম পাকিস্তানে সম্মিলিত গণ-অভু্যত্থানের ফলে লৌহ মানব “আয়ুব খান ধরাশয়ী হইয়াছিল এবং শ্রমিক কৃষকদের অনেক সংগ্রামের সময়েও গণ-বিরোধী শাসকগোষ্ঠী জনগণের উপর বিভেদ সৃষ্টির জন্য শাসক গোষ্ঠী সময়ে সময়ে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাও বাধাইয়াছিল। বস্তুতঃ বাংলাদেশের জনগণকে পায়ের তলায় রাখার জন্য পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী গত ২৩ বৎসর ধরিয়াই জনগণের বিরুদ্ধে চণ্ড দমননীতি এবং ভারত-বিরোধী জিগির তথা সাম্প্রদায়িক বিভেদনীতি-এই দুইটি মোক্ষম অস্ত্র প্রয়োগ করিয়া আসিয়াছে। বস্তুতঃ বাংলাদেশের জনগণকে পায়ের তলায় রাখার জন্য পকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী গত ২৩ বৎসর ধরিয়াই জনগণের বিরুদ্ধে চণ্ড দমননীতি এবং ভারত-বিরোধী জিগির তথা সাম্প্রদায়িক বিভেদ নীতি-এই দুইটি মোক্ষম অস্ত্র প্রয়োগ করিয়া আসিয়াছে। মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য আমাদের বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ও শয়তানের দোসর ইয়াহিয়া-চক্র ঐ অস্ত্রগুলি প্রয়োগ করিতেছে। ২৫শে মার্চ মধ্যরাত্রি হইতে ঐ হিংস্র পশুর দল বাংলাদেশের নজিরবিহীন গণহত্যা, ব্যাপক নারী ধর্ষণ প্রভৃতি নারকীয় কাজকর্ম অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করিতে শুরু করিয়াছে যে, ভারত হইতে অনুপ্রবেশকারী দুস্কৃতকারীরাই নাকি বাংলাদেশের গোলমাল বাধাইয়াছে। বাংলাদেশের জনগণ প্রত্যক্ষভাবে দেখিতেছেন ও বুঝিতেছেন যে, বিদ্রোহী ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ই, পি,আর প্রভৃতির লোকজন এবং এই দেশের বহু তরুনদের নিয়াই গঠিত হইয়াছে আজিকার মুক্তিফৌজ। বাংলাদেশের মাটি হইতেই মুক্তিফৌজ জন্ম নিয়াছে। এই মুক্তিফৌজই আজ গণ সমর্থন নিয়া ইয়াহিয়া-চক্রের দসু্য বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশের স্বাধীনতার জন্য অসম সাহসিক সংগ্রাম চালাইতেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য এই সংগ্রাম হইল এই দেশের জনগণের সংগ্রাম।

  • মুক্তিযুদ্ধ : সাপ্তাহিক। পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশের) কমিউনিষ্ট পার্টির মুখপাত্র পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশের) কমিউনিষ্ট পার্টি কর্তৃক প্রকাশিত ද්‍රි মুক্তিযুদ্ধ প্রেস বাং হতে মুদ্রিত।