পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

163 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড সঙ্কট এবং পাক বাহিনী বা রাজাকারদের লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ প্রভৃতির আশঙ্কায় কৃষক ঘরে পাট মজুত রাখা নিরাপদ মনে করিতে পারে নাই। কৃষকের এই অসহায় অবস্থার সুযোগে ফড়িয়া ব্যাপারীরা গ্রাম হইতে পানির দরে পাট কিনিয়া নিয়াছে। পাটের দর সূতী মনপ্রতি ২০ হইতে ৩০ এবং বগী ৩৫ হইতে ৪০ টাকা। নিরপত্তার অভাব হেতু ব্যবসায়ীরা সরাসরি নারায়নগঞ্জে পাট চালান না দিয়া নরসিংদীতে বিক্রি করিয়া দেয়। লুটেরা রাজাকার বাহিনী পাটের নৌকা আটক করিয়া যথেষ্ট টাকা আদয় করিতেছে। পাক সৈন্যরা পাটের নৌকায় মুক্তিবাহিনী আছে সন্দেহ করিয়া হয়রানির একশেষ করে। ফলে নারায়নগঞ্জ বন্দরে পাটের দর ও গ্রামের বাজরে কৃষক যে দাম পায়, উহার মধ্যে বিস্তর ব্যবধান সৃষ্টি হইয়াছে। অন্যান্য অর্থকরী ফসল এই মওশুমে কলা, লিচু, মূলা, হলুদ, মরিচ, পেয়াজ, রসুন, আদা, তরিতরকারী প্রভৃতি বিক্রি করিয়া কৃষকের হাতে কিছু পয়সা আসিত। কিন্তু বাজারজাতকরণের অসুবিধা এবং ক্রয়ক্ষমতা লোপ পাওয়ার দরুন স্থানীয় চাহিদা হাসের ফলে এই সবের মূল্য শতকরা ৪০ হইতে ৫০ ভাগ কমিয়া গিয়াছে। খাদ্য-শস্য এই এলাকায় চাউলের দর বর্তমান মণপ্রতি ৪৫ টাকা হইতে ৫০ টাকা নিরাপত্তার অভাবে ধান চাউলের মজুত ব্যবসা নাই। পার্শ্ববর্তী ভাটি অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতার দরুন সেখানে ধান প্রতিমণ ৮ হইতে ১০ টাকা এবং চাউল ১৫ হইতে ২০ টাকা দরে বিক্রি হইতেছে। যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার অভাবে মাল চলাচল নাই। না। অবিশ্বাস্য হইলেও সত্যি যে, একদিকে ধান চাউলে নিম্ন মূল্য ও অন্যদিকে দূর্ভিক্ষের করাল ছায়া পাশাপশি বিরাজ করিতেছে। রুটি রোজগারের অভাবে গ্রামের গরীব মানুষ ক্ষেতমুজর ভূমিহীন প্রভৃতি উপবাসে দিন কাটাইতেছে। তাছাড়া আমন ফসলের ফলন বিক্রি ভাল হয় নাই। সার ও কীটনাশকের অভাবে অধিক উৎপাদনশীল ইরি ধরনের চাষ ক্ষতিগ্রস্থ হইয়াছে। যুদ্ধাবস্থার দরুন আউশ ধান সময় মত বোনা ও কাটা সম্ভব হয় নাই ফলে কৃষকের সামনে অন্ধকার ভবিষৎ তাঁত শিল্প কাপাসটিয়া পার্শ্ববর্তী ঢাকা জেলার নরসিংদী এলাকার তাত শিল্পও পাক বাহিনী ধ্বংস করিয়া দিয়াছে। বেকার সমস্যা এই অর্থনৈতিক অবস্থার পটভূমিতে গ্রামাঞ্চলে বেকার সমস্যার তীব্রতা ভয়াবহরুপে বৃদ্ধি পাইয়াছে। শিক্ষক সরকারী কর্মচারী বেসরকারী চাকুরিজীবি বেকার হইয়া গ্রামে আশ্রয় লইয়াছে। এবং ভরনপোষণের জন্য নিজেদের যৎসামন্য জমির উপর নির্ভর করিতেছে। অধিকাংশ কলকারখানা বন্ধ থাকায় শ্রমিকেরা দলে দলে গ্রামে আসিয়া ভিড় জমাইয়াছে। সরকারী ও বেসরকারী অফিসের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরাও বেকার ও মজুরী হ্রাস পাওয়ার কারন ঘটাইয়াছে।