পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

191 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাপত্র তারিখ সম্পাদকীয় বাংলার মুখ ১ অক্টোবর, ১৯৭১ স্বাধীন বাংলাদেশ বাস্তব সত্য ১ম বর্ষঃ ৭ম ও৮ম সংখ্যা সম্পাদকীয় স্বাধীন বাংলাদেশ বাস্তব সত্য বিশ্বের বুকে আজ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ বাস্তব সত্য। বাংলাদেশের যুদ্ধরত সিংহশাবকরা একথা চরমভাবে প্রমাণিত করেছেন। বাংলার সশস্ত্র মুক্তিবাহিনী বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদ গোষ্ঠীকে হাড়ে হাড়ে উপলব্দি করাতে পেরেছেন যে, বাংলার বুকে তাদের পাঁয়তারার দিন শেষ হয়ে গেছে। বর্বর পশু সেনাবাহিনীর নেতা জেনারেল ইয়াহিয়াও বুঝতে পেরেছে তার ঘৃণ্য মানসিকতাও বিধ্বস্ত। মানবীয় ও সচেতন বিশ্ব তার সমালোচনায় মুখর। বিশ্ব-ব্রিগেড গড়ে তোলার প্রস্তাব নেয়া হয়েছে দিল্লীতে বিশ্ব-সম্মেলনে। বাংলাদেশ সম্পর্কে অন্ধকারে রাখা পশ্চিম পাকিস্তানও আর অন্ধকারে নয়। বিশ্ব সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ২৫টি রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দের পশ্চিম পাকিস্তান প্রতিবাদ পরিক্রম তাদের নতুন চোখ খুলে দেবে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সেক্রেটারী উ থান্টের মুখ খুলেছে। অবশ্য তার মুখ সাম্রাজ্যবাদ গোষ্ঠীরই মুখ একথা স্পষ্ট। চীনেরও মনোভাবের পরিবর্তন(?) ঘটেছে। এসবের সাথে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বের রাজনৈতিক চিন্তাধারাও পরিবর্তন হচ্ছে অভূতপূর্বভাবে। এই পরিস্থিতির মধ্যে বসেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশন। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে সেখানে যোগদান করছেন স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিনিধি দল। উদ্দেশ্য বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানবাত্মার আত্মবিশ্বাস, দৃঢ়তা ও সঙ্কল্পকে জানিয়ে দেয়া। বিশ্ব বিবেককে বুঝানো বাংলাদেশ কি চায়, সেখানে কি ঘটেছে। কি ঘটবে। বাংলাদেশের স্বাধীন সার্বভৌম সরকারের স্বীকৃতি বিনাশর্তে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি, পশু পাক-সৈন্যদের বাংলার মাটি থেকে সরিয়ে নেয়ার দাবী জানাবেন তারা। পাকিস্তানের বর্বর আক্রমণের বিরুদ্ধে যুগোশ্লাভিয়া, চেকোশ্নভাকিয়া, ইরাক, রাশিয়া ও আরো ক’টি দেশ দিক্কার জানাবেন। বাংলাদেশকে রাষ্ট্রপুঞ্জে গ্রহণের দাবীও তোলা হবে। প্রতিনিধিদল বিশ্বের কটি দেশও ঘুরে আসবেন। স্বীকৃতি সাপেক্ষে অস্ত্রের কথাও তুলবেন তারা। বাংলাদেশ সম্পর্কে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত যে মানবীয় দায়িত্বের তাগিদে কাজ করেছেন একথা স্পষ্ট। প্রতিনিধিদল একথাও বুঝবেন। ভারত শরণার্থীদের জন্যে যা করেছেন তা মানবীয়, রাজনৈতিক নয়। এ ব্যাপারে জঙ্গী পশু পাক সরকার যা বলেছেন যা করেছেন তা ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সঙ্কীর্ণ মানসিকতা সম্পন্ন বই আর কিছু নয়। একথা বিবেকবান বিশ্ব আজ ভালো করেই জানেন। একদিকে এই হলো আন্তর্জাতিক বিশ্ব। পক্ষান্তরে বাংলার সিংহশাবকরা অবিরাম সংগ্রাম করে চলেছেন। মুক্ত করছেন মাতৃভূমিকে পাক হানাদারদের কাছ থেকে। দিন দিন তাদের হামলা দুর্বার হচ্ছে। আজ সংগ্রামী বাংলার যে কণ্ঠস্বর তা হচ্ছে পূর্ণ স্বাধীনতা রাজনৈতিক সমাধান নয়। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য, বিশ্বের বুকে সাম্রাজ্যবাদ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দুর্বার গণ-রাষ্টীয় প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্যে চাই অস্ত্র। এ হলো তাদের প্রথম ও সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দাবী। সাম্রাজবাদ গোষ্ঠী ইয়াহিয়াকে নিয়ে বাংলাদেশের উপর যেভাবে দাবা খেলতে বসেছেন তা নিপাত করতে অস্ত্রের প্রয়োজন। অস্ত্র ব্যতীত তাদের মরণ কামড়কে