পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

197 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম ংবাপত্র তারিখ বাংলাদেশ সরকার ও তার ংলার মুখ ২৬ নভেম্বর, ১৯৭১ ব্যাপক সাফল্য ১ম বর্ষঃ ১০ম সংখ্যা বাংলাদেশ সরকার ও তার ব্যাপক সাফল্য আমাদের স্বাধীন সরকার গঠন করার পর মাত্র কয়েকটি মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। দেশের মাটি থেকে একটি বিদেশী শোষকগোষ্ঠীর পোষা পেশাদারী সৈন্যদের নিশ্চিহ্ন করার কর্তব্যই আমাদের প্রাথমিক এবং মৌলিক কর্তব্য। এই কর্তব্য সম্পাদনের প্রাথমিক পর্বে আমাদের শক্তি ছিল সীমিত এবং শত্রপক্ষের তুলনার একেবারে নগণ্য। বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্য, ইষ্ট পাকিস্তান রাইফেলসসহ পুলিশ এবং আনসারের সামান্য শক্তিই ছিল আমাদের মূলধন। এই সামান্য শক্তি নিয়ে যে যুদ্ধের সূচনা হয়েছিলো তাকে আজকের বিশ্লেষনে এক অভাবনীয় সাফল্যের সূচনার দ্বারপ্রান্তে পৌছছে বলে বলতে হয়। কারণ আমাদের সমস্যা ছিলো অস্ত্রের এবং অস্ত্র বিদ্যায় পারদর্শী সুসংহত বাহিনীর বাহিনী বলতে যে তাৎপর্যময় একটি সামরিক শক্তিকে বোঝায় তা যেমনি ছিলো না, তেমনি ছিলো না প্রয়োজনীয় অস্ত্র ছাড়াও সামরিক যানবাহন এবং সামরিক প্রয়োজনে যোগাযোগের ব্যবস্থা। অপরপক্ষে শক্রসেনাদের ছিল আধুনিক যুদ্ধোপযোগী সবকিছুই এবং কয়েকটি রাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহ ও তাদের নিশ্চিত রেখেছে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে। মুক্তিকামী মানুষের নৈতিকসহ সার্বিক সমর্থন। এই কয়েকটি মাসের ব্যবধানে বহুমূখী সমস্যার মধ্য দিয়ে এগুতে হয়েছে বাংলাদেশ সরকার তথা বাংলাদেশের জনগণকে একদিকে যেমন সক্ষম যুবকদের এক বিরাট অংশকে যুদ্ধ বিদ্যায় ট্রেনিং দিতে প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্র সমস্যার সমাধানও করতে হয়েছে। সর্বোপরি বিপর্যস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যেও সাড়ে সাত কোটি মানুষের মনে জেগে ওঠা স্বাধীনতার দুর্বার বাসনাকে রক্ষা করতে হয়েছে অতি সন্তৰ্পণে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা দেখা দিয়েছিলো আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে আমাদের সংগ্রামের সত্যিকার রূপ তুলে ধরা এবং সমর্থন লাভ। এই সমস্ত বহুমুখী সমস্যা সত্ত্বেও আমাদের যুদ্ধ সাফল্য আজ বিশ্বের কাছে এক দৃষ্টান্ত হয়ে দাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্ব আমাদের সংগ্রামের সত্যিকার রূপটি যেমন চিনতে পেরেছে তেমনি সর্বক্ষেত্রে নৈতিক সমর্থন লাভ করতে শুরু করেছি আমরা, অন্যদিকে ইয়াহিয়া সামরিক চক্রের সমর্থনকারী দেশগুলো আমাদের বক্তব্যের মৌলিকতু অনুধাবনের সঙ্গে ইয়াহিয়া সামরিক চক্রের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে আমাদের স্বার্থের অনুকূলে মনোভাবও প্রকাশ করেছে। আমাদের সংগ্রামের এই দিকটিতে বিশেষ সাফল্য ইয়াহিয়া চক্রকে এক বিপর্যস্ত অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। প্রশাসন ব্যবস্থায় প্রচলনের সঙ্গে সঙ্গে বহু দেশই আমাদের দূতাবাসের কার্যোপযোগী অফিসগুলো স্থাপিত হয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে দেশের আভ্যন্তরীণ অবস্থার সাথে বিশ্বকে পরিচিত করে তোলা সহজ হয়েছে। সামরিক ক্ষেত্রে আমাদের দ্রুত সাফল্যের তথ্য এবং ইয়াহিয়ার বর্বরোচিত অত্যাচারের রূপটি বিশ্বের জনগণের কাছে তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে এক কথায় আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে সর্বতোভাবেই আমাদেরই সাফল্য লাভ সম্ভব হয়েছে।