পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

201 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড জাগিয়ে তুলতে হবে। তাদের জানাতে হবে যে তারা শুধু স্বাধীন বাংলার আশা করবে তাই নয়, তারা সোনার বাংলা তৈরী করবে। বিগত ২৪ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করে তাদের বোঝাতে হবে কিভাবে পশ্চিম পাকিস্তানী প্রভুরা বাংলাদেশে একটানা অত্যাচার চালিয়েছে। এবং বিশ্বের অন্যান্য মুক্তিযুদ্ধের ফলে কিভাবে অত্যাচারী শাসকদের পতন হয়েছে তা জনসাধারণকে জানাতে হবে; বোঝাতে হবে যে বাংলাদেশে সেইভাবে অত্যাচারী শাসকের পতন ঘটতে চলেছে। এসব কাজ করার জন্য গ্রামে ও শহরে প্রস্তুতি বাহিনী তৈরী করা আবশ্যক। এ দায়িত্ব প্রতিটি বাঙালীর। আপনিও এগিয়ে আসুন। প্রথমে আপনার প্রতিবেশীকে মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ সম্বন্ধে বোঝান। পরে আস্তে আস্তে সাম্প্রতিক বর্বরতার কাহিনী এবং তার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের জয়যাত্ৰা-ইত্যাদি বলে জনগণের দেশপ্রেম জাগ্রত করুন, পাক জঙ্গীশাহীর উৎখাত আরও দ্রুততর করুন। আর লক্ষ্য রাখুন যে আপনার অঞ্চলের প্রতিটি লোক যেন মুক্তিযোদ্ধাদের যথাসাধ্য সাহায্য করে। প্রস্তুতি বাহিনীর দ্বিতীয় কাজ হলো মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করা। তার জন্য প্রস্তুতি বাহিনীকে জানতে হবে কোথায় মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়া যেতে পারে, রসদই বা কোথায় পাওয়া যাবে, এবং কোন পথে নিরাপদে চলাফেরা করা যায়, ইত্যাদি। এ প্রসঙ্গে অনিবাৰ্যভাবেই এসে পড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের তৃতীয় দায়িত্ব, অর্থাৎ সংযোগ ও সংবাদ সরবরাহের কথা। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং এর ওপরেই মুক্তিফৌজের জয় নির্ভর করবে। এই কাজটি হলো নানা জায়গায় যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা, শত্রসৈন্য সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের তা দেওয়া, এবং মুক্তিফৌজের গুরুত্বপূর্ণ বিজয় বার্তাগুলো জনগণের কাছে পৌছে দেওয়া। এসব ছাড়াও প্রশাসন চালানো, আহতদের সেবা শুশ্রুষা, অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপ ইত্যাদি সম্বন্ধে প্রস্তুতি বাহিনীর সুস্পষ্ট ধারণা থাকা আবশ্যক, এবং প্রয়োজন হলেই প্রস্তুতি বাহিনীকে এসব করতে হবে। আবার জানাচ্ছি, প্রস্তুতি বাহিনীর মনোবল হওয়া উচিত অত্যন্ত দৃঢ়। যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি থাকেই। কাজেই তাৎক্ষণিক জয়-পরাজয় প্রস্তুতি বাহিনী বিচলিত হবে না। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত, তারা জনগণকে বোঝাবে যে সত্যের জয়, ন্যায়ের জয়, মুক্তিযুদ্ধের জয় অবশ্যম্ভাবী। মনে রাখবেন, আপনার স্বাধীনতা আনবার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করছে, হাসিমুখে জীবনদান করেছে। তাদের সাহায্যের জন্য আপনার কর্তব্য হলো প্রস্তুতি বাহিনী তৈরি করা। সোনার বাংলার সোনার বাঙালী হতে গেলে আপনার এই কর্তব্যের কথা ভুলবেন না।