পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

203 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম ংবাদপত্র তারিখ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কি এবং কেন ? বিপ্লবী বাংলাদেশ ১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ ১ম বর্ষঃ ৫ম সংখ্যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কি এবং কেন মোহাম্মাদ আলী খান পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর হতে বাংলাদেশের মানুষ চরম অত্যাচার, শোষণ, উৎপীড়নের বিরুদ্ধে প্রকৃত স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্য অর্জনের মানসে গণতান্ত্রিক অধিকার, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অগ্রগতি সাধনের জন্য অবিচল প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। দীর্ঘদিন এই স্বাধিকার আন্দোলন পরিচালনা করতে কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র জনতা অত্যাচার, নিপীড়ন, লাঞ্ছনা, নিষেধাজ্ঞা, গ্রেপ্তার এবং সামরিক আইনের বহু বাধাকে উপেক্ষা করেছে। বাংলার জনগণের ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তাকে ধ্বংস করার জন্য প্রতিক্রিয়াশীল জালেমরা বারবার ট্যাঙ্ক, কামান ও বোমারু বিমান ব্যবহার করে ব্যাপক নরহত্যা ও ধ্বংসের প্লাবন বইয়ে দিয়েছে। অত্যাচারী নরখাদক বর্বর পশুর দল নির্মমভাবে হত্যা করেছে লক্ষ লক্ষ নিরীহ নারী-পুরুষ-শিশুকে, লক্ষ লক্ষ বাড়ী-ঘর ছাই করে দিয়েছে। ওরা লুট করে নিয়েছে আমাদের সুখের সংসার-শ্মশান করেছে সোনার বাংলা-ধ্বংস করেছে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য-ভেঙ্গে দিয়েছে অর্থনৈতিক কাঠামো গণপ্রতিনিধিগণ কখনও পাকিস্তান হতে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করতে চাননি। কিন্তু গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে স্বায়ত্তশাসনের দাবীকে অস্বীকার এবং নির্মমভাবে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে বর্বর সামরিক আক্রমণ শুরু করার পরেই তাঁরা গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করেন। তাই বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি বাঙালী আজ পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার দুর্জয় বিপ্লবী সংগ্রামে লিপ্ত। এই বিপ্লবী যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙ্গালীরা তাদের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চূড়ান্ত রুপ দেবে। যুগে যুগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আপামর জনসাধারণ অত্যাচার, অন্যায়, জালেম, শোষকের বিরুদ্ধে নিরুপায় হয়ে মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আজও কয়েকটি দেশে সাম্রাজ্যবাদী, শোষণের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা চলছে। আমরা বাঙালীরাও বিশ্বের ইতিহাসে এই চরম শিক্ষাকে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছি, ভবিষ্যতেও অত্যাচারি শোষিত মুক্তকামী মানুষ তার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য এই চরম ও পরম পথকে বেছে নিতে বাধ্য হবে। মুক্তিযুদ্ধ কি? মুক্তিযুদ্ধ কেন? কিভাবে মুক্তিযুদ্ধে জয়যুক্ত হতে হয়-একথা বুঝতে পারলে, শিখতে পারলে যতদিনই মুক্তি চলুক না কেন, যত বাধাই আসুক না কেন, তা দেখে হতাশ হয়ে পড়ার কারণ নেই। মানুষ তখনই হতাশ হয়ে পড়ে, যখন সে এমন কিছুর সম্মুখীন হয় যা তার কাছে অপ্রত্যাশিত। যদি মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে মুক্তিযোদ্ধার মনে একটা সুস্পষ্ট ধারণা থাকে তবে মুক্তির পথে চলতে কোনদিনই তারা নিরাশ হয়ে পড়বে না। যতই তাদের ধারনা সুস্পষ্ট হবে, ততই তাদের প্রেরণা বাড়বে। ভাবাবেগের দ্বারা মুক্তিযুদ্ধ হয় না, রাইফেল চালাতে জানলেই মুক্তিযোদ্ধা হওয়া যায় না। মুক্তিযোদ্ধাকে মনেপ্রাণে অবশ্যই বিপ্লবী হতে হবে। কেন আজ তাকে এই চরম-পরম পথকে বেছে নিতে হয়েছে তা ভালভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে হবে। বিপ্লবী যোদ্ধার বড় অস্ত্র হচ্ছে তার বৈপ্লবিক প্রেরণা তার বৈপ্লবিক কর্মতৎপরতা। বিপ্লবী যোদ্ধাকে অস্ত্র হাতে তুলে দিতে হয় না - শত্রর কাছ থেকে বিপ্লবী অস্ত্র কেড়ে নেয়।