পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

207 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড রাজনৈতিক সমাধান বিপ্লবী বাংলাদেশ ১০ অক্টোবর, ১৯৭১ ১ম বর্ষঃ ৮ম সংখ্যা রাজনৈতিক সমাধান মেহেরুন আমিন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তি হিটলারের নেতৃত্বে রুশ-জার্মান অনাক্রমন চুক্তি লংঘন করে সোভিয়েট রাশিয়া আক্রমন করে। ইয়াহিয়ার পূর্বসূরী হিটলারের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে মাত্র দুসপ্তাহের মধ্যে মস্কোর ক্রেমলিন প্রাসাদে বিজয়োৎসব পালন করবে। রাশিয়া অভিযানই তুরান্বিত করল নরপশু হিটলারের বিপর্যয়। ঘটনা প্রবাহ তাকে ও তার মিষ্ট্রেস এফা ব্রাউনকে বার্লিন শহরের আণ্ডারগ্রাউণ্ডেই আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে। ইতিহাসের এক নির্মম ধ্বংসলীলা ও হত্যাকাণ্ডের নাটকের যবনিকাপাত দ্রুততর হলো। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান নামক এক রাষ্ট্রের অবিসম্বাদিত নেতা নির্বাচিত হলেন বাংলার প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সারা পৃথিবী শ্রদ্ধাবনত হৃদয়ে মেনে নিল নির্বাচনের রায়। ক্ষমতা লোলুপ পিণ্ডির জঙ্গীশাহী, মুষ্টিমেয় পুঁজিপতি ও কতিপয় পা-চাটা রাজনৈতিক দালাল সহ্য করতে রাজী হল না জনতার নির্বাচনী রায়। শুরু হল আদি ও অকৃত্রিম পাকিস্তানী মার্কা ষড়যন্ত্র”। নেতৃত্বে নেমে এল সেনাপতি ইয়াহিয়া এবং তার জঙ্গী দোসর হামিদ, টিক্কা, নিয়াজী, ওমর, পিরজাদা। এদের সঙ্গে দালালীর হাত বাড়াল ভুট্টো, কাইয়ুম ও অন্যান্য। ইয়াহিয়া ১লা মার্চ রেডিও মারফত জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশনের তারিখ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করল। উত্তরে জাতির পিতা শেখ মুজিব বাংলাদেশব্যাপী অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু করলেন। আন্দোলনের স্বতঃস্ফহর্ত গতি ও ব্যাপকতা ঘাবড়ে দিল জঙ্গীশাহীকে এবং তাই ”মুজিব-ইয়াহিয়া” দীর্ঘ আলোচনার ভণ্ডামির মাধ্যমে সমর প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করে ২৫শে মার্চ রাতে নরঘাতক টিক্কাকে লেলিয়ে দেয়া হল তেইশ বৎসরাধিক নির্যাতিত, নিপীড়িত, শোষিত সাড়ে সাত কোটির এক মানবগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। লাখো লাখো নিরীহ, নিরস্ত্র মানুষ পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিল। ভস্মীভূত হয়ে গেল বাংলার জনপদ ও গ্রামগুলো। নব্বই লক্ষ লোক নিজ দেশের ভিটেমাটি ছেড়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে আশ্রয় নিল। হাজারো হাজারো মা-বোনের ইজ্জত লুটে নিল ইয়াহিয়ার পশ্চিমা সেনাবাহিনী। ইয়াহিয়া গ্যাং ঠিক হিটলারের মতই ভেবেছিল যে আটচল্লিশ ঘণ্টায় সোনার বাংলাকে চিরদাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করবে। ছ'মাস চলে গেছে, বাংলার শহরে গ্রামে প্রতিরোধ সংগ্রাম আজ ব্যাপকতায় ভীষণতর হয়ে প্রতিশোধের শেষ পর্যায়ের দ্বারে উপস্থিত। বাংলার স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রস্তুতি নিচ্ছে হানাদার বাহিনীকে চরম আঘাত নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার নাটকীয় ঘটনাবলী। রুখতে পারছে না ডালকুক্তার দল মুক্তিবাহিনীর স্থল ও নীে আক্রমনের দর্বার গতি। ইয়াহিয়া দিকে দিকে দালাল পাঠাচ্ছে এবং নিজেও দোস্ত ইরানের শাহের দরজায় মাথা কুটছে একটি রাজনৈতিক মীমাংসার জন্য। রাজনৈতিক সমাধান কি সম্ভব? রাজনৈতিক দাবার গুটি যে আজ ইয়াহিয়ার হাতের বাইরে। ইয়াহিয়া ও তার গ্যাং ধ্বংস করে দিয়েছে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে তৈরি জিন্নার সাধের পাকিস্তান। ঐ ধ্বংসস্তুপের মধ্যে জন্ম নিয়েছে এক নতুন জাতি এবং তাদের প্রাণপ্রিয় স্বাধীন, সার্বভৌম গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ। পশ্চিম পাকিস্তানের পুঁজিপতি দলের এক বিরাট অংশ আজ ইয়াহিয়ার ঘোর বিরোধী। কলকারখানার হাজার হাজার শ্রমিক আজ চাকুরী থেকে বরখাস্ত। মুষ্টিমেয় কয়েকজন জেনারেল ভিন্ন অন্য সেনানীমণ্ডলী ইয়াহিয়ার