পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

208 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড প্রতি বিরুপ। ইয়াহিয়ার বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র বলে স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ দাঁড়াবে পশ্চিম পাকিস্তানের এতদিনকার জৌলুসে গড়া শিল্প, বাণিজ্য, চাকরি-বাকরী, ও সেনাবাহিনীর চরম বিপর্যয়। তারা হারাবে বাংলাদেশে সাজান ঔপনিবেশিক বাজার। ইয়াহিয়ার সাধ্য নেই যে সে বাংলাদেশকে স্বাধীন বলে স্বীকার করে নেয়। তাই বাংলাদেশ আজ ইয়াহিয়ার গলার কাটা-এক গেলাও যাচ্ছে না বা ফেলতেও পারা যাচ্ছে না। সাধু সজ্জন ব্যক্তিরা বলেন যে ইংল্যাণ্ড যেভাবে পাক-ভারত সমস্যার সমাধান করেছে, সেভাবেই ংলাদেশ ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক সমাধান হতে পারে। তাঁরা ভুলে যান যে ব্রিটিশ জাতির পাক-ভারত নীতি নির্ধারিত হয়েছিল ইংল্যাণ্ডের পার্লামেন্টে এবং তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব বর্তেছিল ইংল্যাণ্ডের আপামর জনসাধারণের উপর। পাকিস্তানের বর্তমান চণ্ডনীতি নির্ধারণ করেছে ইয়াহিয়া গ্যাং। বারো কোটি আধুষিত অধুনালুপ্ত পাকিস্তানের জনগণের কোন সম্পর্ক ছিল না এই বর্বর জঙ্গনীতির সঙ্গে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্ণ দায়িত্ব বর্তাবে বলদপী জঙ্গশাহী ও তার মুষ্টিমেয় অনুচরদের উপর। সেই ভীষণ দিনে রুদ্ধ আক্রোশে ফেটে পড়বে পশ্চিম পাকিস্তানের সৈন্যবাহিনী, পুঁজিপতি গোষ্ঠী ও জনসাধারণ। তা থেকে ইয়াহিয়া ও তার মন্ত্রণাদাতাদের বাঁচবার কোন উপায় থাকবে না। তাই আজ ইয়াহিয়াকে জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত এই আত্মঘাতী যুদ্ধ চালিয়ে যেতেই হবে। ইয়াহিয়া অবশ্যই বুঝতে পেরেছে যে অনির্দিষ্টকাল এ যুদ্ধ চালাবার ক্ষমতা তার নেই। চীন-মার্কিন সাহায্যও তাকে টিকিয়ে রাখতে পারবে না পিণ্ডীর সিংহাসনে। অথচ ইয়াহিয়া এও জানে যে বাঙ্গালী জাতিকেও এ যুদ্ধ চালাতেই হবে জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে। কোন মীমাংসা “পাকিস্তানী কাঠামোর” মধ্যে হবে না ও হতে পারে না। ইয়াহিয়ার এখন একমাত্র উপায় পাক-ভারত যুদ্ধ বাধিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপে বাংলাদেশ সমস্যার সমাধান বের করার চেষ্টা করা। সেক্ষেত্রে হয়ত সে ও তার বশম্বদরা পশ্চিম পাকিস্তানী জনসাধারণের আক্রোশ থেকে জীবনে বেঁচে যেতে পারে। অন্যথায় হার্মাদ ইয়াহিয়া ও তার স্তাবকদের হিটলারে মতই আত্মঘাতী হয়ে নরকের বংশ বৃদ্ধি করতে হবে। কিন্তু এত সবের পরও একটা মোদ্দাকথা এই যে রণক্ষেত্রে আমাদের জাতীয় সম্মিলিত সেনাবাহিনীর ক্রমাগত দাঁতভাঙ্গা জবাবই শুধু লম্পট ইয়াহিয়া হানাদার বাহিনীকে বাধ্য করবে বাংলার পবিত্র মাটি ছেড়ে যেতে এবং সেখানেই নিহিত রয়েছে বাংলাদেশ সমস্যার একমাত্র সমাধান।