পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

214 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাপত্র তারিখ সম্পাদকীয় অনুপ্রবেশকারী কে? বিপ্লবী বাংলাদেশ ৭ নভেম্বর, ১৯৭১ তকারা কে? ১ম বর্ষঃ ১২শ সংখ্যা সম্পাদকীয় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী কে? দুস্কৃতকারী কে? চল্লিশ বৎসর পূর্বে হিটলারের রাক্ষস চীৎকারে ইউরোপের আকাশ মুহুর্মুহু বিদীর্ণ হত। চীৎকার আর্তনাদের। তার বিলাপের বিষয়বস্তু ছিলঃ অন্যান্য দেশের আক্রমণাত্মক কার্যে জার্মানী ও জার্মান জাতি বিপন্ন। অথচ বিশ্বের লোকের চোখে এর বিপরীতটাই সত্য বলে মনে হত। কারণ তারা দেখত যে জার্মানীই আজ অষ্ট্রিয়াকে কাল চেকোশ্লোভাকিয়াকে পদাতিক, ট্যাঙ্ক এবং বিমান বাহিনীযোগে আক্রমণ করছে। কারণ প্রকৃতই ঐ বিপরীতটাই সত্য। আজ চল্লিশ বৎসর বাদে হিটলারের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইয়াহিয়াও রাক্ষস চীৎকারে পাক-ভারতবাংলাদেশের আকাশ আচ্ছন্ন করছে। বুলি, পাকিস্তান বিপন্ন। ভারতের প্ররোচনায় ভারতের অনুচরবর্গ উপক্রম হয়েছে। এই বিপদ থেকে পরিত্রাণ পাবার একমাত্র উপায় ভারত আক্রমণ। কিন্তু আজও বিশ্বের লোকের চোখে প্রতিপন্ন হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে যে ইয়াহিয়ার অভিযোগের বিপরীতটাই সত্য। বিশ্বের লোকের সমক্ষে বাংলাদেশের শতকরা ৯৯ জন লোক প্রকাশ্যে নির্বাচনে বাংলাদেশের স্বাতন্ত্রের দাবী ঘোষণা করেছে। তার কারণ বাংলাদেরশের বুকের উপর বসে গত চব্বিশ বছর যাবৎ পশ্চিম পাকিস্তানের মুষ্টিমেয় ধনপতি এবং ভূস্বামী বাঙালীর রক্ত শোষণ করেছে। বাংলাদেশের শতকরা ৯৯ জন লোক-যাদের বাংলার মাটিতে জন্ম, যারা বাংলার মাটিতে বসে পুষ্ট-তারা কি “অনুপ্রবেশকারী”? সেই শতকরা ৯৯ জন বাঙালির আকাঙ্ক্ষা, শোষণাবসানের কামনা যারা রক্ত দিয়ে পূর্ণ না কি, সেই সব পশ্চিম পাকিস্তানী ধনিক-ভূস্বামী-রক্তপিপাসু যুদ্ধলি সু সেনাধ্যক্ষরাই অনুপ্রবেশকারী? অবশ্যই তারা অনুপ্রবেশকারী। প্রথমতঃ তারা পাকিস্তানের শাসনযন্ত্রে অনুপ্রবেশ করেছে। কোন নির্বাচনে কে সিকান্দার মির্জা-আইয়ুব-ইয়াহিয়া খানকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছে? কেউ নয়। পশ্চিম ধনীকভূস্বামীবৰ্গ এবং তাদেরই বেরাদর সেনাধ্যক্ষরা পদাতিক, ট্যাঙ্ক এবং বিমানবাহিনীর শক্তির বলে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেজে বসেছে।