পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

216 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাপত্র তারিখ বিশ্বের চোখে বাংলাদেশ বিপ্লবী বাংলাদেশ ৭ নভেম্বর, ১৯৭১ ১ম বর্ষঃ ১২শ সংখ্যা বিশ্বের চোখে বাংলাদেশ (বিশেষ প্রতিনিধি) পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা উন্মাদ হয়ে উঠেছে। বাংলার মানুষের স্বাধিকারের দাবী সমস্ত অত্যাচারেও একবিন্দু টলেনি বরং দিন দিন জোরদার হয়ে উঠেছে। এদিকে বিশ্বের সমস্ত দেশ একযোগে পশ্চিমের নেতাদের বিক্রিত মস্তিস্কের চিকিৎসা করতে পরামর্শ দিচ্ছে। পাগলকে পাগল বললে সে আরও ক্ষেপে যায়। সেই রকম ক্ষেপে অক্টোবর মাসে পাঞ্জাবী খানসেনারা তিনবার ভারত আক্রমণের চেষ্টা করে। এর মধ্যে একবার আগরতলায় তারা কিছু কামান প্লেনসহ বোমা ও গোলা বর্ষণ করে। আর দুবার শিয়ালকোটের কাছে ট্যাঙ্কবাহিনীসহ তারা ভারতের মাটিতে ঢুকে পড়ে। পাকিস্তানের আশা ছিল ভারত এরপর যুদ্ধ ঘোষণা করবে। কিন্তু ভারত তিনবারই আক্রমণ প্রতিরোধ করে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরে এই কুপ্রচেষ্টা। পাকিস্তান হয়তো ভেবেছিল ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দ্রিরা গান্ধী তাঁর বেলজিয়াম-ইংল্যাণ্ড-অষ্ট্রিয়া ও আমেরিকা সফর স্থগিত রাখবেন। সে আশাও পূর্ণ হয়নি। শ্রীমতী গান্ধী যাবার পূর্বে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেন যে ভারত যে কোন আক্রমণের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত কিন্তু যুদ্ধ ভারত চায় না। যে ক’টি দেশে তিনি গেছেন একই কথা তিনি জানিয়েছেন এবং ইংল্যাণ্ডের জনমত তাঁকে স্বাগত জানিয়েছে নিপুণভাবে। ইংল্যাণ্ড সরকার পাকিস্তানের জঙ্গীশাহীর ওপর শীঘ্রই চাপ দেবেন আরো নমনীয় হবার জন্য ইতিমধ্যে ভারতের প্রতিটি মানুষ আশা রাখে মুক্তিবাহিনীর ওপর। মক্তিবাহিনী একাই শত্রর মোকাবিলা করে বাংলাকে মুক্ত করবে। পাকিস্তানী জঙ্গীশাহী উন্মাদ হয়ে উঠেছে। তার দ্বিতীয় প্রমাণ দেখা গেল সোভিয়েত এয়ার মার্শালকে পাক আকাশে চলার অনুমতি না দেবার মধ্যে। যদিবা সোভিয়েত এয়ার মার্শালের মনে পাকিস্তানের দুরভিসন্ধি সম্বন্ধে কোন সন্দেহ থেকেও থাকে, তাদের এই ব্যবহারে সেটুকু সম্পূর্ণ কেটে যাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আজ বড় দুর্দিন। চীনকে রাষ্ট্রসঙ্ঘে নেওয়ায় আজ বাংলাদেশের নেতারাও উল্লসিত৷ ভারত ও অন্যান্য দেশে তো বহু বৎসর এই দাবী জানিয়েছে যে মহাচীনের রাষ্ট্রসঙ্ঘে বসার অধিকার আছে। মার্কিন প্রস্তাবঃ “দুই চীনেই রাষ্ট্রসঙ্ঘে থাক,”-ভোটে টেকেনি। আমেরিকা সব দেশকেই সাহায্য বন্ধ করে দিচ্ছে। তারা পাকিস্তানের অখণ্ডতা চায় বলে দাবী করেছে। শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী আমেরিকা যাচ্ছেন স্পষ্টকষ্ঠে জানাতে- ধ্বংসস্তুপ পাকিস্তানকে ছেড়ে আমেরিকা বরং চলে আসুক বাংলাদেশ ও ভারতের মিত্রতার আহবানে। কারণ ইতিহাসের বাণী অমোঘ। ভিয়েতনামের মুক্তির মতো, চীনের রাষ্ট্রসঙ্ঘে প্রবেশের মত ধ্রুব আগামী দিনে বাংলাদেশের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা। পাকিস্তানের নেতাদের মস্তিস্ক বিকৃতির এক দুঃখজনক উদহরণ দেখা গেছে দিল্লীতে ২রা নভেম্বর। পাক দুতাবাস থেকে ১১ জন বাঙালী অফিসার বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে বেরিয়ে আসার সময় এই উন্মাদ জঙ্গীশাহীর চররা তদের প্রচণ্ড প্রহার করে। শ্রী হুসেন আলী, জঙ্গীশাহীর সংবাদ সংগ্রহের ফাষ্ট সেক্রেটারীকে মেরে অজ্ঞান করে ফেলা হয়। এই খবর বেরোন অবধি তাঁর স্ত্রী পুত্র কন্যা তাঁর পরীর দূতাবাস থেকে বার করে আনতে পারেনি। বাংলাদেশ দূতাবাস (দিল্লী) থেকে তার অধ্যক্ষ আমজাদুল চৌধুরী পাক দূতাবসের শ্রী মাসুদ হাইদরকে সময় দিয়েছেন শ্রী আলী ও তাঁর পরিবারকে সসম্মানে ছেড়ে দিতে।