পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

243 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাপত্র তারিখ সম্পাদকীয় ংলার বাণী ২৮ সেপ্টেম্বর, ইতিহাস আমাদেরই অনুকূলে মুজিব নগরঃ ৫ম সংখ্যা Ջ, Է, Գ Ֆ সম্পাদকীয় ইতিহাস আমাদেরই অনুকূলে স্বাধীন বাংলার জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে পরিচালিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছয় মাস অতিক্রম হইয়াছেন। গত ২৫শে সেপ্টেম্বর ছিল বীর প্রসবিনী বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার সুমহান সংগ্রামের অর্ধবর্ষ পূর্তির দিন। এই ছয় মাস বাঙ্গালী জাতি অতুলনীয় সাফল্যের সঙ্গে লড়াই করিয়াছে হানাদার পাঞ্জাবী উপনিবেশবাদী অমর শক্তির বিরুদ্ধে। এই ছয় মাসে দুর্ধর্ষ বাঙ্গালী জাতির কামান-বন্দুক-মেশিনগান দুশমনের মৃত্যুঘন্টা বাজাইয়া সঘন গর্জনে বিস্মিত বিশ্ববাসীকে জানাইয়া দিয়াছে চিরদিন কাহারও কলোনী হইয়া, বাজার হইয়া, গোলাম হইয়া থাকার জন্য বাঙ্গালীর জন্ম হয় নাই। দুর্বিনীত বাঙ্গালী জাতি ছয় মাসের বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধে অকল্পনীয় সাফল্যের সগর্ব ঘোষণার সমগ্র পৃথিবীকে বুঝাইয়া দিয়াছে, জননী বাংলার স্বাধীনতার সোনালী স্বপ্নকে নস্যাৎ করিতে পারে এমন শক্তি পৃথিবীতে কাহারও নাই। টিকিয়া থাকার জন্যই স্বাধীন বাংলার জন্ম হইয়াছে। বিগত ২৫শে মার্চ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হইলে জল্লাদ ইয়াহিয়া আর কসাই টিক্কা খান ৭২ ঘন্টার মধ্যে বাঙ্গালী জাতির এই অভু্যত্থান, এই মুক্তিসংগ্রাম ধূলিসাৎ করিয়া দেওয়ার হাস্যকর খোয়াবে মাতিয়া উঠিয়াছিল। আর এজন্য হানাদার বাহিনী ‘ক্রাস বেঙ্গলী প্রোগ্রাম’ তৈরী করিয়া বাংলার দশদিগন্তে শহর নগর বন্দর জনপদে নিহত মানুষের উপর মারণাস্ত্র লইয়া ঝাঁপাইয়া পড়িয়াছিল নররক্ত লোভী হিংস্র হায়েনার আদিম বর্বরতায়। মানবেতিহাসের ঘৃণ্যতম জল্লাদ ইয়াহিয়ার লেলাইয়া দেওয়র ভাড়াটিয়া বাহিনীর সেই নজিরবিহীন নরমেধযজ্ঞ চলিয়াছে দিনের পর দিন। মুক্তিপাগল লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালীর বুকের তাজা রক্তে বাংলার কাজল মাটি লালে লাল হইয়া গিয়াছে, অসংখ্য জনপদ বিধ্বস্ত হইয়াছে অগণিত ঘর-বাড়ী সোনার সংসার দুর্ধর্ষ বাঙ্গালী জাতি এই প্রাগৈতিহাসিক বর্বরতার কাছে, এই হিংস্র শক্তি প্রয়োগের কাছে মাথা নত করে নাই। বলদপী জালেমের পদতলে বিকাইয়া দেয় নাই আত্মার অন্তরঙ্গতম বাসনাকে, স্বাধীনতার অমোঘ স্পৃহাকে। শুধু তাই নয়, অমিত বিক্রমশালী বাঙ্গালী জাতির প্রচণ্ড পাল্টা আক্রমণে ক্রমাগত নাস্তানাবুদ, পর্যুদস্ত হইতে হইতে হানাদার বাহিনীর এখন মরণদশা সমুপস্থিত। বাংলার অসম সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের গোলার আঘাতে হইয়াছে। ইয়াহিয়ার অবস্থাও না যায় প্রাণ কাকুতিসার কুপোকাৎ হওয়াটা শুধু সময়ের প্রশ্ন। ছয় মাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বহুদূর আগাইয়া আসিয়াছে। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ২৫ হাজার খান সেনা খতম হইয়াছে, অগণিত রাজাকার কচুকাটা হইয়াছে। হানাদার বাহিনীর বহু জাহাজ ধ্বংস হইয়াছে, পথঘাট, রেল-সেতু বোমার আঘাতে উড়িয়া গিয়াছে। শক্তি হাতে কৃষ্ণদণ্ড ধরিয়া যুদ্ধবিক্ষত বাংলাদেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরাইয়া আনার সদম্ভ জল্লাদী ঘোষণাও চূড়ান্তভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হইয়াছে। অবস্থা বেগতিক দেখিয়া পররাজ্যলোভী হানাদার জঙ্গীশাহী বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বিনষ্ট এবং মুক্তিযুদ্ধকে বানচাল করার উদ্দেশ্যে বগ্লাহীন অত্যাচার, অবিরাম মিথ্যা প্রচারণা, এমনকি বঙ্গবন্ধুর বিচার প্রহসনের আয়োজন করিয়া তাঁহার জীবন লইয়া ছিনিমিনি খেলার ঘৃণ্য তৎপরতায় লিপ্ত হইয়াছে। কিন্তু কিছুতেই ফল হয় নাই। বাঙ্গালী জাতির স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম আগাইয়া চলিয়াছে দ্রুত বেগে। প্রতিদিন নতুন নতুন