পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

249 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড অসামরিক প্রশাসন ও পুনর্বাসন একদিকে দেশকে হানাদার বাহিনীর কজা মুক্ত করার জন্য মরণপণ সংগ্রাম, সেই সঙ্গে অন্যদিকে চলছে মুক্ত এলাকায় স্বাধীন বাংলাদেশের অসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং ভারত থেকে শরণার্থী যদি চার মাসের খাদ্যের ব্যবস্থা করেন, তাহলে বাংলাদেশ সরকার এখনিই অন্ততঃ ১৫ হাজার শরণার্থীকে মুক্ত এলাকায় ফিরিয়ে নিয়ে পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করবেন। সম্প্রতি জনৈক বিদেশী সাংবাদিক ভারতের মেঘালয় রাজ্যে অবস্থিত একটি শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের সময় শরণার্থীদের জিজ্ঞাসা করেন, তারা দেশে ফিরতে প্রস্তুত কি না? শরণার্থীরা একবাক্যে জবাব দেন, একমাত্র বঙ্গবন্ধু আহবান জানালেই তারা দেশে ফিরতে পারেন। নইলে ইয়াহিয়া কিম্বা তার কোন তাবেদারকে তারা বিশ্বাস করতে রাজি নন। ঢাকা এখনই মুক্ত এলাকা হতে পারে পূর্ব রণাঙ্গনে যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের জনৈক কমাণ্ডার এক ঘরোয়া সাংবাদিক সাক্ষাৎকারে প্রকাশ করেছেন, বর্তমানে মুক্তি সংগ্রামীদের শক্তি দক্ষতা এতটা বেড়েছে যে, তারা ইচ্ছে করলে আকস্মিক আক্রমণ চালিয়ে কুমিল্লা থেকে শুরু করে ঢাকা শহর পর্যন্ত সাত দিনে মুক্ত করতে পারেন। কিন্তু তারা আশঙ্কা করেন, তাদের এই আকস্মিক হামলায় দখলীকৃত এলাকায় বহু বাঙালী ভাইবোনও ধ্বংস হতে পারেন। তাই তারা ভ্রাতৃরক্তপাত পরিহারের উপায় উদ্ভাবনে ব্যস্ত রয়েছেন। অন্যদিকে হানাদার বাহিনীর হাতে শক্তিশালী বিমান বহর থাকায় তাদের পক্ষে কুমিল্লা বা ঢাকা হাতছাড়া হওয়ার পরও সেখানে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করা সম্ভব হবে। যেমন সম্ভব হয়েছে মার্কিনীদের পক্ষে ভিয়েতকংদের হাতে পরাজিত হওয়ার পরও ভিয়েতনামে বিমান হামলা চালিয়ে বিপুলভাবে জীবন ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি করা। মুক্তিযোদ্ধারা তাই বিশ্বের অন্ততঃ কয়েকটি বন্ধুরাষ্ট্রের কাছ থেকে স্বাধীন বাংলার স্বীকৃতির অপেক্ষা করছেন। এই স্বীকৃতি লাভের সঙ্গে সঙ্গে বিমানসহ আধুনিক সমরাস্ত্র সংগ্রহ যেমন সহজ হবে, তেমনি বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সাফল্যও অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে। আরব বিশ্বে হাওয়া বদল বিশ্বের ছয়টি মাহাদেশের ২৫টি দেশের ৬৫ জন প্রতিনিধি নয়াদিল্লীতে আয়োজিত বাংলাদেশ সম্পর্কিত বিশ্ব সম্মেলনে যোগদান করেছিলেন, এ খবর বাংলার বাণী’র পাঠকদের আগেই জানানো হয়েছে। এই বলেছেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে ইয়াহিয়া সরকার আরব দেশগুলোতে সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালিয়েছে এবং আরবদের মনে বাঙালীদের বিরুদ্ধে জাতিবিদ্বেষ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে, ততই আরব জনগণ বুঝতে পারছেন, বাংলাদেশ সমস্যার একমাত্র সমাধান ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসের নির্বাচনে বিজয়ী দল আওয়ামী লীগ ও তার অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্যে নিহিত রয়েছে। সিরিয়ার এক সাংবাদিক স্পষ্ট ভাষাতেই বলেছেন, আমরা সিরিয়াবাসীরা আঞ্চলিক দাবী-দাওয়ার ভিত্তিতে এক সময় যুক্ত আরব প্রজাতন্ত্রের অঙ্গদেশ মিশর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছি। সিরিয়া ও মিসরের জনগণ একই ভাষাভাষী এবং একই ধর্মের বন্ধনে আবদ্ধ। এ সত্ত্বেও মিসর থেকে সিরিয়ার বিচ্ছিন্নতায় যদি ইসলাম ধর্ম বিপন্ন না হয়ে থাকে তাহলে পাকিস্তান থেকে দুই হাজার মাইল দূরে অবস্থিত ভিন্ন ভাষাভাষী বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেলে ইসলাম বিপন্ন হয় কি করে? আরব দেশীয় সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের এসব মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কায়রো, বৈরুত, দামাস্কাস প্রভৃতি প্রধান প্রধান আরব রাজধানীর রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, বাংলাদেশ সমস্যা সম্পর্কে আরব জনগণ ক্রমশঃই সজাগ হয়ে উঠেছেন, এবং ইয়াহিয়া চক্রের স্বরূপ তাদের কাছে ধরা পড়ে যাচ্ছে।