পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

269 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় বাংলার বাণী ৯ নভেম্বর, ১৯৭১ সাম্রাজ্যবাদী খেলা মুজিবনগরঃ ১১শ সংখ্যা মানবতা ও মানবসভ্যতার চরমতম দুশমন মার্কিন সাম্রাজ্যাবাদের গদীনশীন কর্ণধার প্রেসিডেন্ট নিক্সন খেলাটা ভালোই জমাইয়া তুলিয়াছেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারত-পাক উপমহাদেশে নিক্সন যে সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত্রের খেলায় মাতিয়া উঠিয়াছে, উহা আগুন লইয়া খেলার সামিল। আর বলা বাহুল্য, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বানচালের উদ্দেশ্যে পাক-ভারত বিরোধ সৃষ্টির অনভিপ্রেত প্রচ্ছন্ন কারসাজি চালাইয়া, মানব ইতিহাসের ঘৃণ্যতম জল্লাদ ইয়াহিয়ার হাতে অঢেল মারণাস্ত্ৰ তুলিয়াছেন। অথচ কি আশ্চর্য! সেই নিক্সনের মুখেই আজ সংযমের ললিত বাণী, শান্তির বাণী- সীমান্ত হইতে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের উদ্দেশ্যমূলক প্রস্তাব। জগতের সব কিছুরই সীমা আছে। সীমা নাই সম্ভবতঃ শুধু সাম্রাজ্যবাদী দস্যদের হঠকারিতার। প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সাম্রাজ্যবাদী তস্করসুলভ চরিত্রের বীভৎস চরিত্রের বীভৎস চেহারাটি আরেকবার নগ্নভাবে আত্মপ্রকাশ করিয়াছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর আমেরিকা সফরকালে। শ্রীমতি গান্ধীর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের বিস্তর আলাপ আলোচনা হইয়াছে। নিক্সনের মুখ দিয়া অনেক ভারী ভারী কথাও বাহির হইয়াছে। শুধু একটিবারের জন্যও কোন মন্তব্য তিনি করেন নাই বাংলাদেশ প্রশ্নে। প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি প্রেসিডেন্ট নিক্সনের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছেন। ইহার গুরুত্ব সম্পর্কে, পাক-ভারত উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত হিসাবে বাংলাদেশ ইসু্যকে সুরাহার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নিক্সনকে সচেতন করিতে চেষ্টা করিয়াছেন। কিন্তু নিক্সন বাংলাদেশ ইসু্যকে পাত্তা না দিয়া, এ সম্পর্কে কোন উচ্চবাচ্যও না করিয়া বারবার বলিয়াছেন, তিনি চান যাতে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে কোন সশস্ত্র সংঘর্ষ না বাধে। এই লক্ষ্য হাসিলের উদ্দেশ্যে নিক্সন ভারত পাকিস্তান সীমান্ত হইতে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারেরও সুপারিশ করিয়াছেন। সুতরাং বুঝিতে কষ্ট হইবার কথা নয়, নিক্সনের চোখে যা পড়িয়াছে উহা হইতেছে পাক-ভারত যুদ্ধের আশংকা। কারণ, এই যুদ্ধ বাঁধিবার একমাত্র অর্থ হইতেছে তার যেটু নরপিশাচ ইয়াহিয়ার বিনাশ। আর এই স্বার্থের ঠুলি চোখে লাগানো রহিয়াছে বলিয়াই বাংলাদেশের বীরত্বপূর্ণ মুক্তিযুদ্ধ এবং বাঙ্গালী জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারাবাস কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হইয়া তাহার চোখে ধরা পড়ে নাই। আর সে কারণেই ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আলোচনায় বা তার পরে নিক্সনের কণ্ঠে একটিবারের জন্যও বাংলাদেশ প্রসঙ্গটি উচ্চারিত হয় নাই। এই কারণেই শ্রীমতি গান্ধী যে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইসু্যর অপরিহার্য সমাধানের গুরুত্ব সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সম্যক অবহিত করিতে চাহিয়াছেন, নিক্সন তখন দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার ফাঁকা বুলির আবরণে নিজের সাম্রাজ্যবাদী দুরভিসন্ধি চাপা দিতে চাহিয়াছেন। আসলে নিক্সনের এই শয়তানী চেহারাটা নতুন কিছু নয়। মার্চ মাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর হইতে বিশ্বের বিবেকবান মানুষ মাত্রই জল্লাদ ইয়াহিয়ার নারকীয় বর্বরতার বিরুদ্ধে ধিক্কার ও প্রতিবাদ