পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

295 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড গত ১৯৭০ সালে আগষ্ট সেপ্টেম্বরে জর্ডনে প্যালেষ্টাইন গেরিলা বাহিনী ও জর্ডানের রাজকীয় বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধে পাকিস্তান সক্রিয় অংশ গ্রহণ করিয়াছে। মুখে ইসরাইলের বিরোধিতা করিলেও পাকিস্তান সেন্টোর অংশীদার তুরস্কের মারফৎ ইসরাইলের সহিত যোগাযোগ রাখিয়া চলিয়াছে। সংঘর্ষের সময় বাদশাহ হোসেনের রাজকীয় বাহিনীর অভিযানের পরিকল্পনা রচয়িতা একজন পাকিস্তানী জেনারেল। পাকিস্তানী সামরিক অফিসারগণ উক্ত অভিযানে সরাসরি অংশগ্রহণ করিয়াছিল। গত আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি জর্ডান এশীয় সীমান্তে প্রচণ্ড ট্যাঙ্ক যুদ্ধ হয়। গেরিলাবাহিনীর পশ্চান্ধাবন সিরিয়া সীমান্তে আক্রমণ চালায়। পাকিস্তানী বিমান বহর জর্ডানকে এই সংঘর্ষে সহায়তা করিয়াছে। মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্যবাদের ট্রয়ের ঘোড়া পাকিস্তানের এই কীর্তিকলাপ নতুন কিছু নয়। ইহাই পাকিস্তান মার্কা ইসলামী আদর্শের স্বরূপ। যাহারা সময়ে সময়ে মার্কিন সাম্রাজ্যাবদের বিরুদ্ধে কথার তুবড়ি ছুটায় তাহারা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের এই পদলেহী পাকিস্তান সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়। পাকিস্তানের সংহতি ও অখণ্ডতা রক্ষার জন্য অস্ত্র ও সাহায্য পাঠাইতে কসুর করে না। বাংলাদেশই শুধু পাকিস্তানী বর্বর বাহিনীর নারকীয়তার শিকার নহে। ১৯৫৮-৫৯ সালে বেলুচদের স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বায়ত্তশাসনের দাবীকে ইহারা রক্তের বন্যায় ডুবাইয়া দিয়াছে। ঈদের নামাজ আদায়রত হাজার হাজার মুসল্লীর উপর বিমান হইতে বোমাবর্ষণ করিয়া “বিপন্ন ইসলাম” কে রক্ষা করিয়াছে। সেদিন ৪ শতেরও অধিক বেলুচ প্রাণ হারায়। সেদিন রক্তগঙ্গা বহাইয়া যে টিক্কা খান তাহ পাকাইয়াছে তাহাকে বাংলাদেশে গণহত্যা করিতে পাঠান হইয়াছে। কিন্তু গণহত্যা চালাইয়া পাকিস্তানের ফ্যাসিষ্ট সরকার বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলন দমন করিতে পারে নাই। পাকিস্তানের মিত্ররা মদত দিয়াও শেষ রক্ষা করিতে পরিবে না। সাম্রাজ্যবাদের সাধের ট্রয়ের ঘোড়াটির খেলা শেষ হইয়া আসিয়াছে। বাংলাদেশের মুক্তিফৌজের হাতে মার খাইয়া ইহার সমস্ত জারিজুরি ফাঁস হইয়া গিয়াছে।