পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

298 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম ংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় নতুন বাংলা ২১ অক্টোবর, জঙ্গীশাহীর চক্রান্ত ব্যর্থ করুন ১ম বর্ষঃ ১০ম সংখ্যা ᎼᎼᎸᎩ দসু্যসর্দার ইয়াহিয়া আবার যুদ্ধের হুঙ্কার ছাড়িয়াছে। বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করিবার পরদিনই অর্থাৎ ২৬শে মার্চ ইয়াহিয়া বিশ্ববাসীকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য বলিয়াছে অবস্থা “স্বাভাবিক” হইলেই সে তাহার প্রতিশ্রুতি মত কাজ করিবে। জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করিবে। ইহার পর ২৮শে জুন আর একটি বেতার ভাষণে কীভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হইবে এবং “দুস্কৃতিকারী” অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতাকমী বাঙালীদের দমন করা রজন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হইয়াছে তাহারও একটি বয়ান দেয়। বলা বাহুল্য এই দুইটি ভাষণেই পাকিস্তানের জঙ্গীশাহী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধটা যে ভারতীয় “অনুপ্রবেশকারী” ও কিছু “দুস্কৃতিকারীর কারসাজি উহা বলিতে বিস্মৃত হয় নাই। গত ২৩ বছরে পাকিস্তানে পররাষ্ট্র নীতির একটি স্তম্ভ ছিল ভারতবিরোধী প্রচারণা করা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সেই চিরাচরিত সুরটি ইয়াহিয়া চক্র বর্জন করিবে ইহা আমরা কখনও আশা করি নাই। কিন্তু গত ১২ই অক্টোবর বেতার ভাষণে ভাতের বিরুদ্ধে আর একবার যুদ্ধের হুমকী বিশেষ তাৎপর্য বহন প্রতিশ্রুতির বুলির ভাঙা রেকর্ড ঘাতক ইয়াহিয়া বাজাইতে ভুলে নাই। দেখা গিয়াছে যে, ইয়াহিয়ার ঘাতকবাহিনীর বর্বরতা নারকীয় অত্যাচার ও গণহত্যার বিরুদ্ধে সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালী এক মন এক প্রাণ হইয়া রুখিয়া দাঁড়াইয়াছে। ইয়াহিয়া চিক্কা চক্র সেদিন ইহা স্বপ্নেও আশা করিতে পারে নাই যে, তাহাদের নজিরবিহীন হত্যাকাণ্ড ও পাশবিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাঙ্গালী জাতি প্রতিরোধ গড়িয়া তুলিবে, পাল্টা আঘাত হানিবে। গ্রামেগঞ্জে শহরে বন্দরে শত্রকে পদে পদে বাধা দিবে তাই পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের ঘটনাবলী সম্পর্কে ইসলামাবাদের জঙ্গী শাসকরা নতুনভাবে প্রচারণা শুরু করিবেন। বিশ্ববাসীকে তাহারা বুঝাইবার চেষ্টা করিয়াছে যে, ভারতই বাংলাদেশ সমস্যা জিয়াইয়া রাখিয়াছে। ভারতে অব্যাহত শরণার্থী স্রোতের মুখেও প্রথমদিকে ইয়াহিয়া গলাবাজী করিয়াছে সর্বক্ষণ। তারপর একন সুর পাল্টাইয়া বলিতেছে যে, ভারত শরণার্থীদের স্বদেশ প্রত্যাবৰ্ত্তনে বাধা দিতেছে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ এখন তীব্র হইতে তীব্রতর হইতেছে, ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুমকি দিতেছে। যে মিত্রদের উৎসাহে মন্ত্রণায় ইয়াহিয়া বাংলাদেশে গণহত্যা অব্যাহত রাখিয়াছে সেই মুরববীদের পরামর্শেই সে ভারতের বিরুদ্ধে মুদ্ধের হুঙ্কার দিতেছে। এবারের হুঙ্কারের আগেভাগেই সে ভারতের সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ করিয়াছে। একথা আজ দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ইয়াহিয়ার গদী রক্ষা, ততোধিক একটি অবাস্তব ও চরম প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্র-পাকিস্তান রাষ্ট্রকে বিপর্যয়ের হাত হইতে রক্ষা করার জন্য ইসলামাবাদের ইয়াহিয়া সরকারকে জঙ্গ জেট বিমানের খুচরা অংশ এবং অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র তথা ট্যাঙ্ক ইত্যাদির খুচরা অংশ সরবরাহ করিয়াছে। বাংলাদেশে অভিযান চালাইয়া পাকিস্তানী বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও উহার বিমান বহর কিংবা ট্যাঙ্কবহর ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র এমন কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয় নাই যে, তন্মুহুর্তেই এই সব খুচরা অংশ ও অস্ত্রশস্ত্রের প্রয়োজন পড়িয়াছিল। প্রয়োজবোধে পাকিস্তানকে টিকাইয়া রাখার জন্য ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসাবেই ইহা মার্কিন সাহায্যের আগাম অংশ। এইভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারত সমস্যা