পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

303 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ ইয়াহিয়ার যুদ্ধ চক্রান্ত ও নতুন বাংলা ১১ নভেম্বর, ১৯৭১ তাহার দোসররা - ১ম বর্ষ ১৩শ সংখ্যা_| ইয়াহিয়ার যুদ্ধ চক্রান্ত ও তাহার দোসররা (নিজস্ব ভাষ্যকার) বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম দমনে ব্যর্থ মনোরথ ইয়াহিয়া ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুঙ্কার দিয়াছে। গত আগষ্ট মাসে ইয়াহিয়া সদস্তে ঘোষণা করিয়াছিল প্রয়োজন হইলে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করিব। প্রথম দিতে চাহিয়াছিল। ভারতে তাহার অত্যাচারে মুখে আশ্রয়গ্রহণকারী শরণার্থীদের ভারত কর্তৃক সীমান্তে প্রেরিত ভারতীয় বেকার বলিয়া মিথ্যা অপপ্রচার চালাইয়াছে। ইয়াহিয়ার উদ্দেশ্য ছিল তথাকথিত ইসলামী রাষ্ট্র হইতে অবাঞ্চিত ব্যক্তিদের ভারতে তাড়াইয়া দেওয়া, বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ ধ্বংস সাধন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে রক্তের বন্যায় ডুবাইয়া দিয়া স্বীয় অপকর্মের বোঝা ভারতের ঘাড়ে চাপানো, সেখানে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ বাধাইয়া ভারতীয় মুসলীমদের জন্য মায়াকান্না এবং বিশ্বের দরবারে নিজেদের ২৪ বছরের সাম্প্রদায়িক শাসন-শোষণের পক্ষে সাফাই গাওয়া। কিন্তু জাগ্রত বাঙ্গালী হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খৃষ্টান নির্বিশেষে ইয়াহিয়ার এই শয়তানীর বিরুদ্ধে রুখিয়া দাঁড়াইয়াছে। সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের দুই যুগব্যাপী মুখোশ ছিড়িয়া ফেলিয়াছে। ভারত উপমহাদেশে ইয়াহিয়ার মুখের বুলি লুফিয়া লইয়াছে। পাক-ভারত উত্তেজনার অজুহাত তুলিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বানচাল করিতে চাহিতেছে। সাম্রাজ্যবাদীদের প্রত্যক্ষ উৎসাহে ইয়াহিয়া ভারত সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ করিয়াছে। অন্ততঃ দুইবার সে দূরে থাকুক একটু বিচলিত ভাব পর্যন্ত দেখায় নাই। এখন ভারত আত্মরক্ষার জন্য যেইমাত্র সীমান্তে সৈন্য মোতায়েন করিয়াছে আমনি তাহারা ভারতকে সংযম ধরিবার জন্য উপদেশ খয়রাতি শুরু করিয়াছে। জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক পাঠাবার তাল মাঠে মারা যাওয়ার পর এবার সাম্রাজ্যবাদী মহল ভারত আক্রমণের জন্য পাকিস্তানকে উস্কানী দিতেছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী সরকার ইয়াহিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করিতেছে। ফ্রান্স ও পশ্চিম জার্মানীও অস্ত্র দিতেছে বলিয়া খবর পাওয়া গিয়াছে। অন্ততঃ ইয়াহিয়ার উক্তি হইতে এ রকম একটা আভাস পাওয়া যায়। চীনে একটি সামরিক প্রতিনিধি দল পাঠাইয়াছে, উদ্দেশ্য ভারত আক্রমণ করিলে চীনের কাছ হইতে কী ধরণের সাহায্য ও সমর্থন পাইবে উহা যাচাই করা। পিকিং কর্তৃপক্ষের সুর হইতে মনে হয় তাহরা সরাসরি এ ব্যাপারে এখনে হয়তো আগাইয়া আসিবে না। তবে মার্কিন সরকারের সহিত একটা অন্ততঃ মিল পাওয়া যায় চীনা অস্থায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেং ফেইর মন্তব্যে। তিনি বাংলাদেশ প্রশ্নে ইয়াহিয়ার কথিত সমাধানে বিশ্বাসী। তিনি পাকিস্তান ও ভারতকে বিরোধ মীমাংসার জন্য আহবান জানাইয়াছেন। এক কোটি শরণার্থী সম্পর্কে তিনি নীরব। কিন্তু পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায় তাহার আগ্রহ হইতে বুঝা যায় তিনি বাংলাদেশে কী ধরণের সমাধান কামনা করেন। বলা বাহুল্য তাহার ধ্যান ধারনার সহিত বাস্তবতার কোন যোগ নাই।