পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

304 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড সামরিক জোটের গাঁটছড়ায় আবদ্ধ পাকিস্তানের যুদ্ধংদেহী মনোভাব চীনের চোখে পড়ে না। বারংবার পাকিস্তানকে আশ্বাস দিতেছে যে, বহিরাক্রমণের বিরুদ্ধে চীন তাহাকে সাহায্য করিবে ও সমর্থন জানাইবে। সাম্রাজ্যবাদীদের পাণ্ডা আমেরিকা পর্যন্ত এ কথা বিশ্বাস করে না যে, ভারত পাকিস্তান আক্রমণ করিবে। অথচ চীনের মত একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র পাকিস্তানের ফ্যাসিস্ট সরকারের আস্ফালনকে প্রশ্রয় দেয় ইহা দুঃখের বিষয়। চীনের সংগ্রামী ঐতিহ্যের ইহা বিরোধী। পাক-ভারত সীমান্তে আজ যুদ্ধের ঘনঘটা। পাকিস্তান সমস্ত সীমান্ত রীতি লঙ্ঘন করিয়া সৈন্য সমাবেশ করিয়াছে। ভারতের আকাশসীমা লঙ্ঘন এবং ভারতীয় এলাকায় গোলাবর্ষণ করিয়া যুদ্ধের উস্কানী দিতেছে এবং এখনও মুক্তিসংগ্রামীদের “ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী” বলিয়া ভারতকে আক্রমনকারী হিসাবে চিহ্নিত করিয়া যুদ্ধ বাধাইবার ফিকির খুজিতেছে। একথা স্পষ্ট বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারত যুদ্ধে রূপ দিয়া আমাদের স্বাধীনতার প্রশ্নটি ধামাচাপা দেওয়া ও সংগ্রাম বানচাল করাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদদের আশু লক্ষ্য। ইসলামাবাদের জঙ্গীশাহী উহা কার্যকরি করিতে ব্যগ্র। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র সফরে গিয়াছেন। তাঁহার উদ্দেশ্য শরণার্থী সমস্যার মূলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম দমন করার জন্য ইয়াহিয়ার বর্বরতা কাজ করিতেছে তৎসম্পর্কে রাষ্ট্রপ্রধানদের দৃষ্টি আকর্ষণ। বৃটিশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাহার কথায় কর্ণপাত করে নাই। তাহার ইতাকে পাকিস্তানে আভ্যন্তরীণ ব্যাপার এবং পাক-ভারত উত্তেজনা হাসের জন্য সীমান্ত হইতে উভয় পক্ষের সৈন্যাপসারণের সদুপদেশ দিয়াছে। ইসলামী জাতীয়তাবাদের পক্ষে অবাঞ্চিত বাঙ্গালীদের নিধন ও আর এই মহৎ কাজের জন্য পাক-ভারত যুদ্ধকে অনিবার্য করিয়া তোলাই ইহাদের লক্ষ্য। নিক্সন সরকার ইন্দিরা গান্ধীকে তাহদের এই পরিকল্পনায় সামিল করার জন্য চেষ্টা করিয়াছে। কিন্তু ইন্দিরাজীর দৃঢ়তার কাছে নিক্সনের চাল ব্যর্থ হইয়াছে। বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী হীথ সাহেবও সুবিধা করতে পারেন নাই। এই দুই দেশে সাংবাদিক সম্মেলনে ইন্দিরাজীর চোখা চোখা জবাবে ঝানু সাংবাদিকগণও সুবিধা করিতে পারে নাই। এই পর্যায়ে ইন্দিরা তাহাদের প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন করেন উথান্ট অথবা অন্য কেহ কি শরণার্থীদের ভারতের ঘাড়ে চাপাইয়া দিয়া এখন ইয়াহিয়া সাহেব বলিতেছেন ভারত শরণার্থীদের ফিরিতে দিতেছে না, শরণার্থী সমস্যা সৃষ্টির দায়িত্ব স্মরণ করাইয়া দিয়াছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাহার সফরের ফলে বাংলাদেশের প্রকৃত সমস্যার চেহারাটা বিশ্বের চোখে আরও স্পষ্ট হইয়াছে। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদীরা হাল ছাড়িবার পাত্র নয়। তাহারা ভারত উপমহাদেশে যুদ্ধ বাধাইবার চক্রান্ত হইতে সরিয়া দাঁড়ায় নাই। বিশেষভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৩৬ লক্ষ ডলার মূল্যের অস্ত্র সরবরাহের লাইসেন্স বাতিল করিয়া সম্প্রতি সাধু সাজার চেষ্টা করিতেছে। কিন্তু সিয়াটো এবং সেন্টোভুক্ত পাকিস্তানের দোস্ত রাষ্ট্রদের মাধ্যমে অস্ত্রশস্ত্র এমনকি বিমান সরবরাহ পুরাদমে চলিয়াছে।