পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

320 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম ংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় মুক্তবাংলা ১১ অক্টোবর, ১৯৭১ দেশদ্রোহী ১ম বর্ষঃ ৭য় সংখ্যা দেশদ্রোহী বাংলাদেশ আজকের দুনিয়ায় এক চরম যুদ্ধে লিপ্ত। বাঙালী জাতির লক্ষ্য দেশের স্বাধীনতা অর্জন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। ডিক্টেটর ইয়াহিয়া খান গণতন্ত্রের শক্র পশ্চিম পাকিস্তানী পুঁজিপতি ও সামন্তগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরূপে তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে বাঙালী জাতিকে সম্পূর্ণরুপে ধ্বংশ করে গণতন্ত্রকে পৃথিবীর এ অংশ থেকে চিরদিনের দেওয়ার জন্য বদ্ধপরিকর। বাঁচা মরার এ সংগ্রামে বাংলার সকল মানুষ কিন্তু ঐক্যবদ্ধ। কৃষক মজদুর থেকে আরাম্ভ করে উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মচারী যিনি যখনই সুযোগ পাচ্ছেন জালেম পাকিস্তান সরকারের সহিত সকল সম্পর্ক ত্যাগ করে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে কর্মরত বাঙালী কুটনীতিকগণও সুযোগ পাওয়া মাত্র খুনী পাকিস্তান সরকারকে ধিক্কার দিয়ে বাংলাদেশের এই গৌরবজনক সংগ্রামে কাতারবন্দী হচ্ছেন। বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকায় সনাতন মুসলিম লীগ পন্থী বা গোঁড়াপন্থী বলে এতোকাল যাদেরকে পশ্চিম পাকিস্তানীদের অন্ধ সমর্থন বলে ধরে নেয়া হতো তাদেরকে এখন চৈতন্যেদয় হয়েছে এবং মুক্তিফৌজের বিজয় ও পাঞ্জাবীদের কবল থেকে বাংলাদেশকে মুক্তি দেয়ার জন্য গোপনে আল্লার দরবারে দোআ-দরুদ পাঠের সংবাদও আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। কিন্তু আজও কিছুসংখ্যক বিপথগামী সুবিদাবাদী উচ্চাভিলাষী বাঙালীদের কার্যকলাপ আমাদেরকে লজ্জাজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন করেছে। জাতিসংঘের বর্তমান অধিবেশনে বাংলাদেশ পক্ষে সত্যিকার পরিস্থিতিটা পৃথিবীর ১৩০ টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিগণের সম্মুখে তুলে ধরার জন্য বাংলাদেশ থেকে একদল সুযোগ্য প্রতিনিধি জাতিসংঘে গিয়েছেন। এবং ইতিমধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশের পক্ষে আওয়াজ তুলেছেন অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তি। তাই জাতিসংঘে সমবেত দুনিয়ার ১৩০টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিগণের সামনে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলার সাহস পাননি খুনী ইয়াহিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি আগাশাহী। ওদের দরকার হলো একজন বাঙালী শিখণ্ডীর। খুঁজে বের করলো মাহমুদ আলীকে। জনাব মাহমুদ আলীর বর্তমান অবস্থাকে বিশ্লেষণ করতে হলে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের গোড়া থেকেই শুরু করতে হয়। মাহমুদ আলীর রাজনৈতিক জীবনের প্রথম ও প্রধান গুরু মাওলানা ভাসানী। পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মাহমুদ আলীর ভূমিকায় বিভিন্ন রুপ বহুবার আমরা দেখেছি। মাহমুদ আলীর নওবেলাল পত্রিকা এককালে পূর্ব বাংলার অন্যতম প্রগতিশীল পত্রিকা ছিলো। পূর্ব বাংলা ( পূর্ব পাকিস্তান ) যুবলীগের সভাপতি ছিলেন মাহমুদ আলী। পাকিস্তানের সর্বপ্রথম অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ‘গণতন্ত্রীদলের প্রতিষ্ঠতা সেক্রেটারী এবং সাবেক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সেক্রেটারী মাহমুদ আলীকেও আমরা দেখেছি। আমাদের স্পষ্ট স্মরণ আছে ১৯৫৩ সালে পশ্চিম পাকিস্তানী স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী পাকিস্তানের গণতন্ত্রকে যখন গলা টিপে হত্যা করার অপচেষ্টায় রত এবং ছাত্র জনতা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত, তখনই ঢাকার তৎকালীন অন্যতম অভিজাত চা-ঘর ও-ক’ রেস্তোরায় অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক তাহলে পূর্ব বাংলা তার নিকটতম মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া অথবা মালয়েশিয়ার সংগে ফেডারেশনে থাকতে পারে। আর আফগানিস্তান ইরানকে নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান আরেকটি ফেডারেশন গড়ে তুলুক। ওতে আপত্তি কোথায়? এবং এখানেই ট্রাজেডী। যে