পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

326 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ ইয়াহিয়ার শক্তির উৎসে আঘাত সাপ্তাহিক বাংলা ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ কর ১ম বর্ষঃ ২য় সংখ্যা ইয়াহিয়ার শক্তির উৎসে আঘাত করো ফেরদৌস আহমদ কোরেশী মুক্তিবাহিনীর দুঃসাহসিক বীর যোদ্ধাদের অবিশ্বাস্য রণনৈপুণ্যে প্রতিটি রণাঙ্গনে আজ ইয়াহিয়ার হানাদার বাহিনী মৃত্যুর বিভীষিকায় আতঙ্কের দিন গুনছে। একদিকে বিশ্বময় সাধারণ মানুষের হৃদয় নিংড়ানো সমর্থন ও সহানুভূতিধন্য সংগ্রাম, আরেকদিকে সভ্যতার ও মানবতার তীব্রতম ঘূণায় কলঙ্কিত পেশাদার দসু্য বাহিনীর ইতিহাস কোনদিন ক্ষমা করেনি। ক্ষুদে ডিক্টেটর ইয়াহিয়ার সাধ্য কি প্রকৃতির সেই অমোঘ বিধান পাল্টে দেয়? কিন্তু তবু আত্মতৃপ্তি কিংবা অবশ্যম্ভাবী বিজয়ের আনন্দে কর্তব্যকর্মে শিথিলতা প্রদর্শনেরও কোন অবকাশ নেই। একথা অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে, মুক্তিযুদ্ধের আবেগ ও উচ্ছাসের পর্ব শেষ হয়ে গেছে। এখন নিরেট, কঠোর ও বাস্তব বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে যুদ্ধ পরিচালনার পর্ব। কেবল রণাঙ্গনেই নয়, এ যুদ্ধ সমভাবে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় রাজনীতিতেও চালিয়ে যেতে হবে। সে জন্যে প্রয়োজন সর্বাগ্রে শত্রর শক্তি এবং শক্তির উৎসগুলির সম্পর্কে সচেতন হওয়া। বৃহৎ শক্তিবর্গ এবং জাতিসংঘের রুদ্ধদ্বার কক্ষের কূটনৈতিক প্রভুরা বাংলাদেশ প্রশ্নের কি ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সে সম্পর্কে কেউ কেউ অতিমাত্রায় আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। এ থেকে মনে হচ্ছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মারপ্যাঁচ এবং ক্ষুদ্র দেশ ও জাতিসমূহের প্রতি বৃহৎ শক্তিবর্গের কসাই সুলভ নির্লিপ্ত নিষ্ঠুরতা সম্পর্কে বাংলাদেশের এমন কি ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব পরিপূর্ণভাবে সচেতন নয়। ফলে একদিন যেমন খাঁর জঙ্গী সরকারের শক্তিকেও অনাবশ্যকভাবে খাটো করে দেখানো হয়েছে। বিদেশ বাংলাদেশ প্রশ্নে সাধারণ মানুষ ও বুদ্ধিজীবী মহলে যে সহানুভূতি ও দ্যর্থহীন সমর্থন পাওয়া গেছে, তাকেই চূড়ান্ত ধরে নেওয়া হয়েছে এবং সেই সাথে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার সাফল্য সম্পকে একটা আন্তর্তৃপ্তিবোধও জন্ম নিয়েছে । সেই মুক্তি বাহিনীর সাফল্যে আত্মস্ফীত হয়ে ইয়াহিয়া খাঁর আসন্ন পতনের তারিখ ঘোষণার ব্যাপারেও কেউ কেউ রীতিমত প্রতিযোগীতা দিয়ে চলেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এসব চিন্তা ভাবনা অস্বাভাবিক কিছুই নয়। কিন্তু দায়িত্বশীল এবং নীতিনির্ধারণে নিযুক্ত ব্যক্তিরাই যদি এমনিভাবে উটপাখীর মত বালিতে মুখ গুজে রেখে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরী করেন, তবে সে পরিকল্পনার গোড়াতেই গলদ থেকে যেতে বাধ্য। সাধারণ মানুষের মধ্যে এসব চিন্তা ভাবনা অস্বাভাবিক কিছুই নয়। কিন্তু দায়িত্বশীল এবং নীতিনির্ধারণে নিযুক্ত ব্যক্তিরাই যদি এমনিভাবে উটপাখীর মত বালিতে মুখ গুজে রেখে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরী করেন, তবে সে পরিকল্পনার গোড়াতেই গলদ থেকে যেতে বাধ্য। জাতিসংঘে কি হতে পারে তার আভাস পাওয়া গেছে পূর্বাহ্নে ইয়াহিয়ার হানাদার সৈন্যরা যে পৈশাচিক বর্বরতায় সভ্যতার ইতিহাস কলঙ্কিত করেছে, বিশ্ববিবেকের অভিভাবকত্বে সমাসীন জাতিসংঘের কর্মকর্তার এবং বিভিন্ন স্বাধীন দেশের প্রতিনিধিরা ততোধিক হৃদয়হীন নিষ্ঠুরতায় বাংলাদেশ সমস্যাটিকে পাশ কাটিয়ে যাবার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন। ইয়াহিয়া খুনী, তবে তার খুন কিছুটা “hot blooded” কিন্তু যাঁরা বিশ্বের দণ্ড-মুণ্ডের কর্তা সেজে বসেছেন, বাংলাদেশ প্রশ্নে তাঁদের ক্ষমাহীন শীতলতা “cold blooded” এবং নিশ্চিতরূপেই