পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড ষড়যন্ত্রমূলক। এই ষড়যন্ত্র কেবল বাংলা ও বাঙালীর বিরুদ্ধেই নয়- মানবতার বিরুদ্ধে, জাতীয় ইয়াহিয়া খাঁ কয়েক মাসেই দেনার দায়ে কাবু হয়ে যাবে, আভ্যন্তরীণ কলহে আপনা থেকেই তার তাসের বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃতির মাধ্যমে ইয়াহিয়াকে বাংলার বুক থেকে হাত গুটিয়ে নিতে হবে, এসব চিন্তার একটিও যে পুরোপুরি বাস্তব বুদ্ধিজাত নয়- ইতিমধ্যেই তা কিছুটা প্রমাণিত হয়েছে। হয়াহিয়ার দেনার দায় যতই থাকুক, যতই বাড়ুক, একথা মনে রাখা দরকার যে, তার পেছনে ‘মহাজন মুরববীও আছে, যারা নিজেদের সাম্রাজ্যবাদী ও বেনিয়া স্বার্থেই ইয়াহিয়ার পরমুখাপেক্ষী সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবে এবং পাকিস্তানের ঋণর্নিভর অর্থনীতিক তারা বেশ কিছুকাল অতিরিক্ত (প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ) ঋণের অক্সিজেন তাঁবুতে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। ইয়াহিয়ার ঘর একান্তভাবেই পশ্চিম পাকিস্তানে। সেখানকার জনসাধারণকে বাংলাদেশের আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়নি (বা করা সম্ভব হয়নি)। ফলে আজো সেখানকার রাজনীতি একান্তভাবে সামন্ত প্রভাবান্বিত এবং বাংলাদেশ প্রশ্নে সেখনকার সামরিক ও বেসামরিক প্রভুদের মনোভাব মোটামুটি এক। কাজেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পথ প্রশস্ত হবে এমন কোন আব্যন্তরীণ কলহে সেখানে দল উপদলগুলি বেশীদূর এগুবে তেমন আশা অন্তত এই পর্যায়ে করা চলে না। আমাদের মুক্তিবাহিনী এখন নিঃসন্দেহে আগের চাইতে অনেক বেশী দৃঢ়তা ও কার্যকারিতার সাথে ইয়াহিয়ার পেশাদার সৈন্যদের মোকাবিলা করছে। এ ব্যপারে ইয়াহিয়ার সৈন্যবাহিনীর বাস্তবিকই বেকায়দা অবস্থা। সম্ভবত তা অনুমান করতে পেরেই ইয়াহিয়া এখন তার রণকৌশল বদলে নিয়ে, ‘বাঙ্গালাইজেন’ নীতি গ্রহণ করেছে এবং বাংলাদেশেরই জনগণের একাংশকে ভয়ভীতি-প্রলভনে কিংবা ব্যক্তিগত রেষারেষির সুযোগে উস্কানী দিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠনের চেষ্টা হচ্ছে। ফলে এখন মুক্তিবাহিনীর হাতে নিহত ও আহতদের মধ্যে এসব দেশীয় কোলাবরেটরদের সংখ্যাই বেশী। এটা খুব শুভ লক্ষন নয়। অনুরুপভাবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্ৰও ইয়াহিয়া খান একঘরে হয়ে পড়বে এবং তার রক্তমাখা হাতের সাথে কেউ হাত মেলাবে না, এই আশাও বাস্তবের ধোপে টিকে না- কারণ, বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রযন্ত্রগুলির বেশির ভাগের হাতই যে রক্তমাখা। এক্ষেত্রে বরং চোরে চোরে মাসতুতো ভাই হবারই সম্ভাবনা বেশী। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের পরিচালনা এবং ভবিষৎ পরিকল্পনার উপর বর্ণিত অন্ধকার দিকটি সামনে রেখে তারই মোকাবিলার জন্য আজ আমাদের তৈরী হতে হবে। জোরদার করা। সেজন্য আরো গভীর, আরো ব্যপক ও বিরাটভাবে আঘাত হানা দরকার । এ ব্যপারেও আমাদের এখনো অনেক কিছু করণীয় আছে। যুদ্ধের কৌশলগত ও নীতিগত দিক আলোচনা করা অনুচিত বিধায় এ সম্পর্কে আর বেশী কিছু বলা ঠিক হবে না। সাফল্য অর্জন করতে না পারি, তবে চুড়ান্ত বিজয় অসম্ভব হয়ে পড়তে বাধ্য। রাজনৈতিক পর্যায়ে Isolate the enemy’ এই নীতি অবলম্বন করে দেশের অভ্যন্তরে সমস্ত শক্তিকে সংহত করা অত্যাবশ্যক। বিলম্বে হলেও কয়েকটি দলের সমন্বয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন এব্যাপারে একটি শুভ পদক্ষেপ হয়েছে। এই পরিষদকে সম্প্রসারিত করে দল এমন কি গ্রুপগুলিকেও অঙ্গীভূত করে নেওয়ার জন্য প্রত্যক্ষ প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এমনকি যারা দোটানায় আছে কিংবা ভয় ভীতিতে শত্রর সহযোগিতা করছে, বাংলাদেশ