পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় দাবানল ২৮ নভেম্বর, ১। আরো জোরে আঘাত হানো ১ম বর্ষঃ ৬ষ্ট সংখ্যা Ջի Գ Ֆ ২। ঈদ দুর্জয় সংগ্রামের প্রতিজ্ঞা নিয়ে এসছে সম্পাদকীয় (S) আরে জোরে আঘাত হানে ইয়াহিয়া খানের সাধের আশা পূরণ হয়নি। বাহাতুর ঘন্টার মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবীকে চূর্ণ করতে পারেনি তাঁর লেলিয়ে দেয়া সামরিক বাহিনী। যদিও বাংলাদেশ তারা নির্মমতা এবং নিষ্ঠুরতা, হত্যা, লুণ্ঠন এবং ধর্ষণের নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তবু বাংলাদেশের জনগণকে এক ইঞ্চি নোয়াতে পারেনি। চূড়ান্ত সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বাংলার জনগণ ন্যায়ের নামে, শোষিত মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের নামে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বয়স দশ মাস পুরো হতে চলছে। এর মধ্যে স্বাধীনতা সংগ্রাম এমন চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে সাম্রাজ্যবাদী পাকিস্তানের পরাজয় স্বীকার করে নেয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ নানা রণাঙ্গনে দুর্বার হয়ে উঠেছে। আমাদের সুশিক্ষিত দেশপ্রেমিক গেরিলাদের উপর্যুপরি আক্রমণের মুখে দেশের অভ্যন্তরে প্রায় কাবু হয়ে এসেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। যে ক্যান্টনমেন্টগুলোর উপর ভরসা করে ইয়াহিয়া খান গোঁফে তা দিতে দিতে ভেবেছিলেন, শক্তিবলে বাংলাদেশকে পদানত করে রাখতে পারবেন সে ভরসার কেন্দ্রবিন্দুগুলো জঙ্গলাটের চোখের সামনে ভেঙ্গে পড়ছে। এ পর্যন্ত আমরা খবর পেয়েছি যশোর ক্যান্টনমেন্টের পতন আসন্ন। মুক্তি সেনানীরা বীর বিক্রমে ধাওয়া করছে সিলেট অভিমুখে। চট্টগ্রাম অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে, ঢাকা মহানগরী গোটা প্রদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কুমিল্লাতে জোড় লড়াই চলেছে, খুলনা জেলা প্রায় মুক্ত হয়ে এসেছে। অনেকগুলো বিমানবন্ধর মুক্তিযোদ্ধারা কামান দাগে তছনছ করে দিয়েছে। তার ফলে স্যবরজেট থেকে মার্চ এপ্রিল মাসের মতোগুলী, বোমাবর্ষণ করারও সুবিধা হারিয়ে ফেলেছে। বাংলাদেশের নৌবন্দরগুলোতে এখন আর বিদেশী জাহাজ ভিড়তে সাহস করছে না। মুক্তিযোদ্ধারা চট্টগ্রামে ও বন্দরে অনেকগুলো বিদেশী জাহাজ জখম করেছেন অথবা একেবারে ডুবিয়ে দিয়েছে। বিদেশ থেকে নয় শুধু, পশ্চিম-পাকিস্তান থেকেও জলপথে সমর সম্ভার আমদানীর পথ একেবারে বন্ধ হয়ে পড়েছে। বস্তুত: পাকিস্তান সেনাবাহিনী আজ বাংলাদেশের ফেলেছে। আজ তারা আহত বন্য পশুর মতো- তারা জানে তাদের পালাবার কোনো পথ খোলা নেই। প্রদীপ যেমন নিভবার আগে দপ করে জুলে উঠে, শত্ৰও তেমনি চূড়ান্ত পরাজয়ের পূর্বে একবার শেষ চেষ্টা করে দেখছে। কিন্তু তারা ভালোভাবে জানে যে, তাদের বাঁচবার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এই সময়ে আমাদের আক্রমণ আরো জোরদার করে তুলতে হবে, শত্রর মনোবল একেবারে ভেঙ্গে দিতে হবে। কোন রকমের সাহয্যে তারা বলীয়ান হয়ে উঠার রাস্তা একেবারে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে ফেলতে হবে। সামান্য অবহেলার শত্রুশক্তিশালী হবে। কোনো দয়া, কোন অনুকম্পা। দশ লক্ষ্যের মতো বাংগালী জনগণকে তারা যে নৃশংসতায় হত্যা করেছে, একই নৃশংসতা আজ তাদের ফেরত দিতে হবে। ইয়াহিয়া খানের হুকুম বরদার সৈন্যদের এই ভাগ্যলিপি। বাংলাদেশ স্বাধীন হবে- অত্যাসন্ন হয়ে আসছে সে দিন । সুতরাং শত্রর উপর আঘাত, আঘাত তীব্র আঘাত হানো।