পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

362 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাপত্র তারিখ সম্পাদকীয় জাগ্রত বাংলা ৩০ অক্টোবর, ১৯৭১ রাজাকার দর্পণ ১ম বর্ষঃ ৫ম সংখ্যা সম্পাদকীয় রাজাকার দর্পণ হানাদার জঙ্গীশাহী বাংলাদেশে পচিশে মার্চে অতর্কিত বর্বর হামলার লক্ষ লক্ষ নিরীহ বাঙ্গালী হত্যা করিয়াও যখন কোন প্রকার কুলকিনারা করিতে পারিল না তখন জোর জবরদস্তি করিয়া বেয়নেটের আগায় বাঙ্গালী দিয়া বাঙ্গালী হত্যা, বাঙ্গালী দিয়া বাংঙ্গালীদের সহায় সম্পদ লুট ও ঘরবাড়ী জ্বালান এবং বাংলার মাবোনদের বেইজ্জত করিবার মৌল উদ্দেশ্যে বহুসংখ্যক রাজাকারকে তাহাদের মা-বোন স্ত্রীদিগকে পশ্চিমা নরপশুরা ভোগের জন্য সরবরাহ করিতে বাধ্য করিয়া আসিতেছে। অনেক যুবকের সম্মুখেই মা বোন স্ত্রীকে পাশবিক অত্যাচার চালাইয়াছে এবং যুবকদের ধরিয়া লইয়া বলপূর্বক রাজাকারে ভর্তি করিয়াছে। চোখের জল ফেলিয়া এমন আক্ষেপ উক্তি করিয়াছেন বহুসংখ্যক পলাতক রাজাকার। প্রাণের ভয়ে অবস্থার বেগতিক পরিবেশে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও বহুলোক রাজাকার হইয়াছে। কিন্তু অত্যাচারের ভয়ে ও রাজাকার হইয়াও যখন অত্যাচার হইতে রক্ষা পাওয়া যায় না লাঞ্ছনা-গঞ্জনা বা নির্যাতন চালাইতেছে সমান হারে তখন আর কি করার থাকে? তাই মরিয়া হইয়া প্রতিদিন বহু রাজাকার বিভিন্ন এলাকা হইতে পালাইতেছে। তাহারা অন্তত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিয়া মরিতে চায়। দেশমাতৃকার নামে প্রাণ বলি দিতে সুযোগ বুঝিয়া অস্ত্রসহ অনেকেই মুক্তিবাহিনীতে যোগদানও করিতেছে। অত্যাচারীর একই মাত্র পরিচয় সে নির্মম নির্যাতনকারী। মানুষের আকার হইলেও আসলে পশুত্বপূর্ণ তাহার আচরণ। তাই রাজাকাররাও রেহাই পাইতেছে না জল্লাদদের নির্যাতন হইতে। পলাতক রাজাকারদের বাড়ীঘর পুড়াইয়া নিশ্চিহ্ন করিতেছে বাড়ীতে ছেলে বুড়ো মা বোন-স্ত্রী, যাহাকে পাইতেছে ধরিয়া নিয়া চালাইতেছে অমানুষিক নির্যাতন ও পাশবিক অত্যাচার। এমনকি বহু রাজাকারের বাড়ীতে কোন লোকজন গ্রেফতার করিতে সক্ষম না হইয়া তাহাদের প্রতিবেশী যাহাকে পাইতেছে তাহাকেই ধরিয়া নিয়া যাইতেছে। ভাইকে দিয়া ভাইয়ের বুকেই গুলী চালাইবার জন্যই বাঙ্গালীদিগকে রাজাকারে ভর্তি করা হইতেছে। অন্য কথায় বলা যাইতে পারে শাক দিয়া শাক নিপাত করা। তাতে রাজাকারদের যদি বিবেক জাগ্রত হয়-আর কথায় আত্মা, বলিয়া ওঠে না, আর নয়, ভাই হইয়া ভাইকে আর হত্যা করিব না। মা বোনের ইজ্জত বিদেশী পশুদের এমনি করিয়া আর নষ্ট করিতে সাহায্য করিব না। পশু শক্তির নির্মম আঘাতে একটি জাতির জাগ্রত বিবেককে ধ্বংস করা যায় না। যে রাজাকারকে স্বাধীনতা করিয়া বাংলার মা বোনের ইজ্জত ধন মান সহায় সম্পদ রক্ষা করিতে অগ্রসর হইবে এটা তাহাদের ন্যায়ের পথে

  • জাগ্রত বাংলাঃ মুক্তিফৌজের সাপ্তাহিক মুখপত্র। ময়মনসিংহ জেলা ও উত্তর ঢাকার বেসামরিক দপ্তর আসাদ নগর (ডাকাতিয়া) থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত। পত্রিকাটি শক্র সেনা পরিবেষ্টিত বাংলাদেশ হতে সাইক্লোষ্টাইলে প্রকাশিত। সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি হাফিজউদ্দিন আহমেদ।