পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাপত্র তারিখ জনসভা জাগ্রত বাংলা ১১ ডিসেম্বর,১৯৭১ ১ম বর্ষঃ ৮ সংখ্যা জনসভা আঙ্গার বাজার, ২৬শে নভেম্বর। বিকেল ৫টায় কমিউনিটি সেন্টার প্রাঙ্গণে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন মেজর আফসার উদ্দীন আহমেদ। তিনি তাঁর ভাষণে বলেন, সর্বহারা বাংলার স্বাধীনতার জন্যে আমরা যুদ্ধ করছি, যুদ্ধ করে যাব; দুর্ভাগা বাংলাদেশকে প্রাণের বিনিময়ে হলেও মুক্ত করব। এক ঘোষণায় মেজর আফসার বলেন, শহীদদের পবিত্র নামের স্মরণে, আমলীতলাকে মমতাজ নগর, সমাজের মুষ্টিমেয় ধনিক ব্যক্তি যারা মুনাফাবৃত্তি নিয়ে ৪০/৫০ টাকা দরে ধান বা টাকা লগ্নি করছে তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে সমুচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাদের দিন শেষ হয়ে গেছে। এখনও নিবৃত্ত না হলে কঠিন শাস্তির হাত থেকে এদেরকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। রাজাকরদেরকে অচিরেই আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বক্তৃতা সমাপ্ত করেন। জনসভা ভালুকা ১০ই ডিসেম্বর চারটায় স্কুল প্রাঙ্গণে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। পরিচালনা করেন অধিনায়ক আফসার উদ্দিন আহমেদ। সভায় বক্তৃতা করেন জাগ্রত বাংলা’ পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি জনাব হাফিজউদ্দিন আহমেদ, ভালুকা থানা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী সভাপতি জনাব কুতুবউদ্দিন আহমেদ, ভালুকা থানার সি, ও, (রেভ) সাহেব ও জনাব ওমর আলী এবং আরও অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ। জনাব হাফিজউদ্দিন শহীদদের প্রতি তার শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন, বাঙ্গালীর এ সংগাম প্রকৃতপক্ষে শুরু পাকিস্তানী শাসকদের কাছ থেকে উপহার পেয়েছিল বুলেট ও বেয়নেট। তখন থেকে আজ পর্যন্ত বাঙ্গালী রক্ত দিয়েই চলেছে। আর এরই ফলে জন্ম নিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ। তিনি জনগণকে হুশিয়ারী জ্ঞাপন করে বলেন, আমাদের এই স্বাধীনতা যেন পাকিস্তানের মত স্বাধীনতায় পর্যবসিত না হয়। ৪৭ সালে আমরা পাকিস্তান চেয়েছিলাম শোষণের অবসানকল্পে, আমাদের মধ্যেই অপর এক শ্রেণী স্বাধীনতা চেয়েছিল শোষণের রাজত্ব বহাল ও মজবুত করার জন্যে। আজ সে সব চোর গুণ্ডা বদমায়েশদের আমরা নির্মুল করছি সত্যিকার স্বাধীনতার আশায়, শোষণহীন সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েমের উদ্দেশ্যে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, অর্থনৈতিক মুক্তিই প্রকৃত মুক্তি। যে বৈষম্যের পাহাড় পাঞ্জাবী শোষকেরা গড়ে তুলেছিল, তাদের কবর হল তারই নিচে। এটা ইতিহাসের কাছ থেকে শিক্ষনীয় বস্তু। জনগণ যে লক্ষ্যে পোঁছার জন্যে সংগ্রাম করে, যে লক্ষ্য থেকে সামান্যতম বিচ্যুতিও পতন ঘটায় স্বৈরাচারী পশুশক্তির।