পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

387 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় স্বাধীন বাংলা* ১ নভেম্বর, ১৯৭১ মুক্তিযোদ্ধারা হুশিয়ার ১ম বর্ষঃ ৩য় সংখ্যা সম্পাদকীয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আকাশে অশুভ কালো মেঘের ছায়া! মুক্তিযোদ্ধারা হুশিয়ার! বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম আজ এক বিশেষ ক্রান্তিলগ্নে আসিয়া দাঁড়াইয়াছে। এই সংগ্রাম যাহাতে তাহার ইন্সিত লক্ষ্যে না পৌছাইতে পারে, তাহার জন্য দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের সীমা-পরিসীমা নাই। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের দীর্ঘ মেয়াদী চরিত্রটি বিভিন্ন স্বার্থবাদী মহলের নিকট চক্ষুশূল হইয়া দাঁড়াইয়াছে। কারণ, লড়াই-এর মেয়াদ যতই দীর্ঘ হইয়া উঠিতেছে, ততইবাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা সম্পূর্ণ নিজের পায়ে দাঁড়াইয়া নিজের শক্তিকে সুসংহত করিয়া এবং নিজের শক্তিতে বলীয়ান হইয়াছে এই মুক্তিযুদ্ধকে সাফল্যের তোরণশীর্ষে লইয়া যাওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত করিতে পারিতেছে। আমরা গত সম্পাদকীতে এই কথা উল্লেখ করিয়াছিলাম যে বহু দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা সত্বেও বর্তমান সংগ্রামে জনযুদ্ধে বিপ্লবী উপাদানগুলি সঞ্চারিত হওয়ার বাস্তব ভিত্তি সৃষ্টি হইতেছে। বাংলাদেশে জনযুদ্ধের আসল চেহারা কি, তাহা আমাদের সুস্পষ্টভাবে উপলব্ধি করিতে হইবে। জনযুদ্ধের বৈশিষ্ট্য হইতেছেঃ জাতীয় স্বাধীনতার সংগ্রামের সহিত একটি জাতির বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মেহনতী মানুষের বিশেষ করিয়া কৃষকের শোষণ মুক্তির সংগ্রামকে যুক্ত করা। জনযুদ্ধে পরিণত করার জন্য ইহা একান্তভাবেই প্রয়োজন, কারণ তাহা না হইলে সাম্রাজ্যবাদ বিশেষ করিয়া মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের ক্রমবর্ধমান সাহায্যপুষ্ট, আধুনিক অস্ত্র শস্ত্রে সুসজ্জিত একটি বিশাল সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে অপ্রস্তুত, অসংগঠিত এবং প্রায় নিরস্ত্র জনতার অসমযুদ্ধ চলিতে পারে না। বিভিন্ন দেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস ইহা নির্ভুলভাবে প্রমাণিত করিয়াছে দীর্ঘ মেয়াদী যুদ্ধের নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়া শত্রর শক্তিকে ক্রমান্বয়ে ক্ষয় করিয়া এবং জনতার শক্তিকে ক্রমবর্ধমান হারে সংহত ও বৃদ্ধি করিয়াই মুক্তিযুদ্ধ স্থান বাংলাদেশের বিশাল বিস্তীর্ণ গ্রামঞ্চলে সশস্ত্র সংগ্রামের ঘাঁটি স্থাপন করা। এই সশস্ত্র সংগ্রামের ঘাট অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং তাহাতে মুক্তিফৌজ এবং বিপ্লবী গেরিলা বাহিনীর অবাধ সঞ্চারণে আত্মরক্ষা এবং হানাদার বাহিনীকে আক্রমণ করার শক্তি সঞ্চয় এবং বৃদ্ধি করার জন্যই গ্রামের জনসমষ্টির বৃহত্তর অংশ কৃষকের সক্রিয় সমর্থন ও সহযোগিতা প্রয়োজন। তাহা ছাড়া, ইহা বলাই বাহুল্য যে, বাংলাদেশের মত একটি আধা ঔপনিবেশিক এবং আধা সামন্ত বাদী দেশ যেখানে কৃষকরা হইতেছে দেশের জনসমষ্টির শতকরা প্রায় ৮৬ জন, সকলে মুক্তিফৌজ এবং বিপ্লবী গেরিলাবাহিনী মূলতঃ কৃষকদের লইয়াই গঠন করিতে হইবে। কিন্তু বাংলাদেশের কৃষক সমাজ বর্তমান মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করিতেছে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে এই লড়াইতে অংশগ্রহণ করিতেছে ? নিশ্চয়ই এখনও নয়। প্রশ্ন হইতেছে জাতীয় স্বাধীনতার মধ্য দিয়া কৃষকের বুক হইতে জোতদার মহাজনের প্রত্যক্ষ শাসনের জগদ্দল পাথর যে সরিয়া যাইবে, এই কর্মসূচী স্বাধীনতার কর্মসূচীর সহিত যুক্ত না হইলে তাহারা কেন এই সংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে ঝাঁপাইয়া পড়িবে? শুধুমাত্র, নিছক স্বাধীনতার ফাঁকা আওয়াজের আবেদন কৃষক সমাজের মধ্যে কতটুকু রহিয়াছে ? তাহার তো গত চবিবশ বছর ধরিয়া তথাকথিত স্বাধীনতার’ DDDDDDDDDDDDuDDDDuDDDuDDDDD প্রকাশিত ও প্রচারিত।